গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বিএনপির আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য পর্দার আড়ালে গোপন চুক্তি হয়ে থাকতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের মধ্যে
। বাংলাদেশের বিখ্যাত ধর্মীয় বক্তা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ড শাস্তি দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই শাস্তিকে লঘু করে তাকে আমরণ কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে। এর পর থেকেই ওই গোপন চুক্তির বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। অনলাইন আরব নিউজে গতকাল ‘লেট জাস্টিস রোল ডাউন লাইন ওয়াটার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন শামসুল হুদা। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে গোপন চুক্তির ব্যাপারে যে সন্দেহ করা হচ্ছে তার পেছনে কিছু কারণ আছে। এর প্রথম ও সর্বপ্রথম কারণ হলো- খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করে দিতে চায় সরকার। আর সেটা করতে সরকারের প্রয়োজন জামায়াতে ইসলামীকে। এ ক্ষেত্রে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এর আগে একই রকম মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আাদলত জামায়াতে ইসলামীর অন্য নেতাদের মৃত্যুদণ্ড শাস্তি দিলেও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর শাস্তি এ ক্ষেত্রে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনেক কথা হয়েছে আবদুল কাদের মোল্লার বিচার নিয়ে। প্রথমে তাকে দেয়া হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। পরে সুপ্রিম কোর্ট দিলো তাকে মৃত্যুদণ্ড। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যে রায় দিয়েছিল তাতে সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ আছে, সেই বিক্ষোভে মদত দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ওই বিক্ষোভকারীদের ‘শাহবাগি’ বলে চিহ্নিত করা হয়। তাদের চাপে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইন সংশোধন করে। এর অধীনে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যে রায় দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট সেই আপিলে কাদের মোল্লাকে গণহত্যাসহ বেশ কিছু অপরাধে অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করে। তার যাবজ্জীবন শাস্তি বাড়িয়ে দেয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। প্রথম তার বিরুদ্ধেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়। শামসুল হুদা লিখেছেন, বিস্ময়কর বিষয় হলো, কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অন্যদিকে সাঈদীর ফাঁসি রহিত করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। এর ফলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে- তাহলে কি জামায়াতে ইসলামীকে খুশি করে তাদের বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের করে আনতে চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন দল? ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকেই দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওই নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করা হয়। বিএনপি এ নিয়ে আন্দোলনের চেষ্টা করায় তাদের দুর্বল করে দিতে সরকার জামায়াতকে হাতে রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত দৃশ্যত মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ। এতে সরকারের প্রভাব রয়েছে, চাপ রয়েছে। এ নিয়ে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুলেছে। কারণ, এ আদালতের প্রসিকিউটর, তদন্তকারী ও বিচারকদের নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৯০-এর দশকে যুদ্ধাপরাধের প্রতীকী বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রয়েছে স্কাইপ কেলেঙ্কারি। এ বিতর্কে একজন বিচারক পদত্যাগ করেন। এ আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত করা হয় নি কোন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিচারক ও আইনজীবীকে। সুপরিচিত আইনজীবী ও যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যানকে বাংলাদেশের ভিসা দেয়া হয় নি। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের পক্ষে বাংলাদেশীরা- এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি ও রেওয়াজের অনুপস্থিতিতে যখন এ বিচার করা হচ্ছে তখন তাদের মনোযোগ হারিয়েছে। দুর্ভাগ্য হলো, যা ঘটছে সেটা আগে থেকে নির্ধারিত ব্যবস্থা।