কিন্তু মোসাদ্দেক তো অন্য ধাতুতে গড়া। কোন ধাতুতে গড়া, যাঁরা নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেটের খবর রাখেন, তাঁরা খুব ভালো করেই বলতে পারবেন। এই মুহূর্তে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে যে কজন অসাধারণ পারফরমার আছেন, মোসাদ্দেক তাঁদের একজন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ক্লাব, বিভাগ, অঞ্চল কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি—সব দলেরই বিপদের সঙ্গী হয়েছেন কোনো না কোনো সময়।
জাতীয় দলের অভিষেকের দিন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বরং নিজের সামর্থ্যটা দারুণভাবেই প্রকাশ করলেন ২০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। ৪৫ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেললেন। চারটি চার, দুটি ছক্কা। এর একটি স্কুপ করে। শেষ উইকেটে রুবেলকে নিয়ে গড়লেন ৪৩ রানের জুটি। তাতেই ২০০ পার করল বাংলাদেশ।
নিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। এর আগে আন্তর্জাতিক ম্যাচের স্বাদ বলতে একটাই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তবু একবারের জন্যও মনে হলো না, মোসাদ্দেক অভিষেক ম্যাচ খেলছেন। মনে হলো না তাঁর বয়স ২০। মনে হলো না, বাংলাদেশ কী কঠিন লজ্জার মুখে আছে। টেস্ট অভিষেকের পর মাত্র তৃতীয়বারের মতো সহযোগী দলের বিপক্ষে ২০০ রানের লজ্জায় পড়ার শঙ্কায়। কী কঠিন পরিস্থিতিতে কী সাবলীল ব্যাটিংটাই না করলেন!
জাতীয় দলের দুয়ারে মোসাদ্দেক এই প্রথম দাঁড়াননি। গত জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক। ১৯ বল খেলে ১৫, খুব একটা বলার মতো কিছু নয়। এবারের অভিষেকটা অন্য রকমই হলো। আরও দারুণ কিছু হবে, দল যদি এই ২০৮ রানের পুঁজি নিয়েই জেতে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পুরস্কার পেয়েছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জাতীয় দলে ডাক পেয়ে। ঢাকা লিগে একের পর এক ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন। পুরো লিগে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৬২২ রান। গড় কত জানেন? ৭৭.৭৫—এমন পারফরম্যান্সের পর নির্বাচকেরা আর তাঁকে উপেক্ষা করতে পারেননি।
মোসাদ্দেক নির্বাচকদের দৃষ্টিসীমায় ছিলেন অনেক দিন ধরেই। ১৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে রান করেছেন ১৯৮৫। গড় ৭০.৮৯! ফিফটির চেয়ে এখনো পর্যন্ত তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা বেশি। ৬টি ফিফটির বিপরীতে করেছেন ৭টি সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ২৮২।
অথচ তাঁর প্রথম শ্রেণির অভিষেকটি হয়েছিল দুঃস্বপ্ন দিয়েই। ২০১৩-১৪ মৌসুমে খুলনার বিপক্ষে দুটি শূন্য দিয়েই শুরু করেছিলেন পথচলার। অভিষেকের পর প্রথম ৭ ইনিংসে মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে এসেছিল মাত্র ৩৪ রান। পরের মৌসুম থেকেই মোসাদ্দেক কেবল আতঙ্কই ছড়িয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের বোলারদের মধ্যে। তাঁর প্রথম দুটি সেঞ্চুরির ইনিংসকে তিনি টেনে নিয়ে যান ২৫০ ও ২৮২-তে। গত বছরই তিনি আরও একটি ডাবল সেঞ্চুরি করে মনোযোগের কেন্দ্রেই চলে আসেন।
এবারের ঢাকা লিগে তাঁর ক্লাব আবাহনী লিমিটেডের অধিনায়ক তামিম ইকবাল তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘ওর বয়সটা ২০ হলেও ওর মাথা ৪৫ বছরের।’
সেটা তো আজ বেশ বোঝা গেল। আজ এখন পর্যন্ত মোসাদ্দেককে এভাবে পাওয়াই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর।
সাবলীল ব্যাটিং!
ঢাকা; ব্যাট হাতে যখন মোসাদ্দেক হোসেন মাঠে নামলেন, তখন দলের অবস্থা বেশ খারাপ। স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলেন ১৩৮ রানেই ৫ উইকেট নেই দলের। অভিষেক ম্যাচের জন্য ঠিক আদর্শ পরিস্থিতি নয়। সেটি আরও কঠিন হয়ে গেল আরও দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে স্কোরটা ৭ উইকেটে ১৪১ হয়ে যাওয়াতে। বড় সংগ্রহ দূরে থাক সম্মানজনক সংগ্রহই তখন অনেক বড় ব্যাপার বাংলাদেশের জন্য।