স্কুল বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীরা

Slider টপ নিউজ

79f25baf412881030b5c023b3ecbc537-untitled-1

৯০% শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল ​জিলা স্কুলে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত
৫৬% উপস্থিত ছিল জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট অবধি

ময়মনসিংহ;  শহরের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে কয়েক মাসে পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা স্কুল বাদ দিয়ে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার ও টিউটোরিয়াল হোমে পড়তে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষকেরা বলছেন, স্কুল চলার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে। এ জন্য সরকারি নির্দেশনা জারি করা উচিত বলে তাঁরা মনে করেন। শহরের জিলা স্কুল রোড, বাউন্ডারি রোড, নাহা রোড, সাহেব আলী রোড ও নতুন বাজার এলাকায় শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে। বেশির ভাগ কোচিং সেন্টারই স্কুলের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় না করে চলছে।

জিলা স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্ট পর্যন্তঅষ্টম ও দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। এই সময়ে কম ছিল পঞ্চম শ্রেণির উপস্থিতিও। জানুয়ারি থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিলা স্কুলের অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের গড় উপস্থিতি ছিল ৯০ শতাংশ। অথচ ওই দেড় মাসেওই দুটি শ্রেণির গড় উপস্থিতি ৫৬ শতাংশে নেমে আসে। এভাবে চলতে থাকলে উপস্থিতির হার আরও কমবে বলে শিক্ষকদের আশঙ্কা।

এ বিষয়ে জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ ফারুকী বলেন, বছরের এই সময়টায় প্রতিবছরই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যায়। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষার ফরম পূরণ হয়ে গেছে। তাই অনুপস্থিতির কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

ময়মনসিংহের আরেক ঐতিহ্যবাহী স্কুল বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েও অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। ৩০ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির প্রভাতি শাখার অষ্টম শ্রেণির ‘খ’ শাখায় গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম। ৭৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে উপস্থিত মাত্র ২৪ জন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপস্থিত ২৪ জনের মধ্যে আগের দিন নয়জন উপস্থিত ছিল না। কারণ, জানতে চাইলে তারা প্রত্যেকেই জানায়, কোচিং সেন্টারে পরীক্ষা থাকায় তারা আগের দিন স্কুলে আসেনি। পরের দিন আবারও কোচিং সেন্টারে পরীক্ষা থাকায় সেদিনও তারা স্কুলে আসবে না।

তখন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যাময়ী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দুই সপ্তাহ আগে অনেক কমে যায়। একদিন দশম শ্রেণির একটি শাখায় কোনো শিক্ষার্থীই আসেনি। এরপর সব শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ফোন করে সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর তাগিদ দেওয়া হয়। সেই থেকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

এ বিষয়ে বিদ্যাময়ী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার বলেন, অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্কুলে না আসার প্রধান কারণ কোচিং নির্ভরতা। অন্তত স্থানীয়ভাবে আইন করে হলেও স্কুল চলাকালে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা স্কুলে না এসে অনেকেই উদ্ভাস নামের একটি কোচিং সেন্টারে মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরপর ওই কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল চলাকালে কোচিং সেন্টারটিতে মডেল টেস্ট পরীক্ষা চলে। সেন্টারটি ঢাকা থেকে পরিচালিত। তাই পরিচালক পদমর্যাদার কাউকে পাওয়া যায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমরান হাসান নামের একজন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা স্কুলের ক্লাস বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টারে আসে কি না, সেটি আমাদের জানা নেই। আমরা তাদের স্কুল বাদ দিয়ে আসতে বলি না।’ শিক্ষার্থীরা স্কুল বাদ দিয়ে কোচিংয়ে আসে কি না, এমন খোঁজ রাখা হয় কি না, প্রশ্নে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *