অথচ আজ সেই মিরপুরেই বসছে দিবারাত্রির রঙিন ক্রিকেটের আসর! তিন ওয়ানডের সিরিজের সূচনা ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান দল।
কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মাঝে ইংল্যান্ড সিরিজের আকাশে মেঘ জমেছিল। ইংল্যান্ড না এলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলমান বিরতিটা হয়ে যাবে আরও লম্বা—এ রকম শঙ্কার মধ্যেই দৃশ্যপটে আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড যদি না-ও আসে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলে অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভ্যাস ধরে রাখা যাবে—এই ছিল বিসিবির চিন্তা। কোচ-খেলোয়াড়েরাও তাতে সায় দিলে চূড়ান্ত হয়ে যায় আফগানিস্তান সিরিজের সূচি।
এর মধ্যে সব অনিশ্চয়তা দূর করে ইংল্যান্ডও বাংলাদেশ সফরে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দেয়।
একেবারেই খেলার মধ্যে না-থাকা বাংলাদেশ দল হঠাৎ পড়ে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচিতে। ১ অক্টোবর আফগানিস্তান সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। তিন ওয়ানডে আর দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ডের ঢাকায় চলে আসার কথা তার আগের দিনই।
আজ থেকে শুরু আফগানিস্তান সিরিজের এখন তাই দুটি পরিচয়। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভাষায়, এটা আরও একটা আন্তর্জাতিক সিরিজ, যা বাংলাদেশ দল ৩-০-তে জিততে চায়। একই সঙ্গে এই তিনটি ওয়ানডে ইংল্যান্ড সিরিজেরও প্রস্তুতি। এ নিয়ে কয়েক দিন আগে ভালো একটা কথা বলেছেন তামিম ইকবাল। প্রায় এক বছর ওয়ানডে থেকে দূরে থাকার পর শুরুতেই ইংল্যান্ডের সামনে পড়ার চেয়ে আগে আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে খেলে নেওয়া ভালো। মরচে ধরা জায়গাগুলোয় ঔজ্জ্বল্য ফেরানোর সুযোগ পাওয়া যায় তাতে। আত্মবিশ্বাসে শাণ দেওয়ার কাজটা তো হয়ই। কিন্তু হিতে বিপরীত হওয়ারও কি শঙ্কা নেই! ধরুন, অপ্রত্যাশিতভাবে আফগানিস্তান সিরিজে খারাপ কিছু হয়ে গেল, সেটার কালো ছায়া কি পড়বে না ইংল্যান্ড সিরিজে?
হাথুরুসিংহে হয়তো সে কারণেই এটাকে ‘প্রস্তুতি সিরিজ’ বলতে রাজি নন, ‘প্রস্তুতি বা সে রকম কিছু নয়। এটা আলাদা একটা সিরিজ। আফগানিস্তান ভালো দল। অনেক বড় দল তাদের বিপক্ষে অঘটনের শিকার হয়েছে। অন্য দলের বিপক্ষে খেলার আগে আমরা যে রকম প্রস্তুতি নিই, এই সিরিজের জন্যও সে রকমই নেওয়া হয়েছে।’ কোচের চোখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আজকের প্রথম ম্যাচ, আরও কমিয়ে বললে প্রথম ঘণ্টা, ‘ভালো শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সব মনোযোগ এখন প্রথম ম্যাচটা জেতার দিকে।’
দুই দলের মধ্যে এর আগে হওয়া দুটি ওয়ানডের একটিতে বাংলাদেশ জিতেছে, আরেকটিতে আফগানিস্তান। পরশু বিসিবি একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটিও জিতেছে আফগানরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে নামার আগে দলের কোচ লালচাঁদ রাজপুতের সাহস বাড়াচ্ছে সেটাই, ‘জয় জয়ই, তা প্রস্তুতি ম্যাচে হলেও। আমরা এখন আত্মবিশ্বাসী এবং চেষ্টা করব এটা ধরে রাখতে।’ দলের কাছে সেরা পারফরম্যান্স চেয়ে অধিনায়ক আসগার স্টানিকজাই প্রেরণা খুঁজছেন ফতুল্লায় ২০১৪ এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে হারানোর স্মৃতি থেকে, ‘দুই বছর আগে বাংলাদেশকে হারিয়েছি। এর মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে অনেক ক্রিকেট খেলেছি আমরা। ওই সময় অনভিজ্ঞ থাকলেও এখন আমাদের বিশ্বকাপ খেলারও অভিজ্ঞতা আছে। আশা করছি, গতবারের চেয়ে এবার আরও ভালো খেলব।’ বাংলাদেশও অবশ্য আফগানিস্তানকে ‘ভালো দল’ মেনেই সিরিজ খেলতে নামছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় না গিয়ে আজ তাই সম্ভাব্য সেরা দলই নামানোর কথা প্রথম ম্যাচে।
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে আসার পর ওয়ানডেতে গত বছরটা স্বপ্নের মতো কেটেছে বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চারটি সিরিজ খেলে চারটিতেই জয়। মাশরাফির বিশ্বাস, মাঝে এক বছরের বিরতি পড়লেও আফগানিস্তান সিরিজে সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ভালো কিছুর জন্য নিজেদের ওপর আস্থা রাখাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিনায়কের কাছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বের সেরা বোলিং লাইনআপ এখন আমাদের। আন্তর্জাতিক ম্যাচ যখন খেলতে নামব, তখন নিজেরা কি বিশ্বাস করি, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
হতে পারে এটা ইংল্যান্ড সিরিজের প্রস্তুতি, কিংবা একটা আলাদা সিরিজ; মাশরাফির দলের কাছে প্রত্যাশা একটাই। ২০১৫ সালের নভেম্বরে যেখানে থেমেছিল সাফল্যের রথ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসন্ন ব্যস্ত সময়ের শুরুটা হবে আজ সেখান থেকেই।