প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস প্রান্ত,বৃহত্তর বরিশাল থেকে; সংস্কারের মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ভেঙ্গে পড়লো পিরোজপুর সদর উপজেলার বাদুরা মৎস্য বন্দরের সাথে পাড়েরহাট বন্দর ও সদরের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী একমাত্র আয়রন ব্রিজটি। ধ্বসে পড়ার সময় নিচ দিয়ে যাওয়া একটি মাছধরা ট্রলার ডুবে যায়। এ সময় চালকসহ অন্তঃত ৩ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।
বুধবার সকালে আয়রন ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় বাদূরা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীসহ অন্তত ৪০টি গ্রামের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। পিরোজপুর-১ আসনের সরকার দলীয় এমপি এ কে এম এ আউয়ালের পত্নী লায়লা ইরাদের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বুশরা এন্টারপ্রাইজ ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মাত্র আড়াইমাস আগে ব্রিজটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে। সংস্কার কাজে ব্যপক দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। বন্দরের মৎস্য ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আয়রন ব্রিজের নীচ থেকে এফবি মায়ের দোয়া নামক একটি মৎস্য ট্রলার ঘাটে যাওয়ার সময় ব্রিজটি তাৎক্ষনিক ভেঙ্গে ট্রলারের ওপর পরে এবং ট্রলারটি ডুবে যায়। এসময় ওই ট্রলারের মাঝি কামাল হোসেন (৩২) মাথায় মারাত্মক ভাবে আঘাত পান। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নেয়া হলে, সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও এই সময় ওই ট্রলারটির কর্মচারী মিজান (৩০) ও ইউসুফ হাওলাদার (৩৫) আহত হন। অবশ্য ট্রলারের মাঝি কামাল হোসেন বলেন, ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সেটি ভেঙ্গে পড়ে। আড়াই মাস পূর্বে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বুশরা এন্টারপ্রাইজ এলজিইডির আওতাধীন ব্রিজটি মেরামতের কাজ করে। স্থানীয়দের অভিযোগ কোন রকম জোড়াতালী দিয়ে নাম মাত্র কাজ করে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, যা খুবই নিম্নমানের ছিল। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন এই ব্রিজটি বেশ কয়েক বছর ধরেই ছিল ব্যবহারের অনুপযোগী। একদিকে হেলে যাওয়া ব্রিজটি দিয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতো মানুষ ও যানবাহন। গত অর্থ বছরের মাঝামাঝি সময়ে এটি সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহবান করে এলজিইডি। প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডারে অংশ নিয়ে এমপি আউয়ালের স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী লায়লা ইরাদের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বুশরা এন্টারপ্রাইজ। অর্থ বছরের শেষ দিকে এসে খুব তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করা হয় এর সংস্কার কাজ। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বাদুরা-পাড়েরহাট বন্দরের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ যতদূর জানি আয়রন ব্রিজের উপরে থাকা সব কংক্রিটের স্লিপার পরিবর্তন করে নতুন স্লিপার দেয়ার কথা ছিল টেন্ডার শর্তে। প্রয়োজন মত স্টিল কাঠামোর পরিবর্তন এবং এর ভিমগুলোও নতুন করে বসানোর কথা ছিল। কিন্তু কাজ চলার সময় সে সবের কিছুই চোখে পড়েনি। অধিকাংশ পুরানো স্লিপার আবার বসিয়ে দেয়া হয়েছে। পুরানো স্টিল কাঠামোতে আরও পুরানো নাট-বল্টু দিয়ে কোন রকমে জোড়াতালির মাধ্যমে কাজ করা হয়েছে। এভাবে দায়সারা সংস্কার কাজ শেষে গেলো ঈদুল ফিতরের কয়েকেদনি আগে এটি হস্তান্তর করা হয় এলজিইডির কাছে। পরে তারা ব্রিজটি খুলে দেয় সাধারণ মানুষের জন্যে। ব্রিজের সংস্কার কাজের দেখভাল করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাব-কন্ট্রাকটর বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এতো কম টাকায় এই কাজ করা ছিল অত্যন্ত কঠিন। তার ওপর জুন ফাইনালের কারণে টাকা ফেরত যাওয়ারও একটি আশংকা তৈরী হয়েছিল। ফলে খুব তড়িঘড়ি করে সংস্কার কাজটি করা হয়। আমরা বাউফল থেকে মিস্ত্রী এনে এটির কাজ করেছি। আমাদের কাজে কোন গাফেলতি ছিলনা।’ নিকটস্থ পাড়েরহাট বন্দরের বাসিন্দা কলেজ পড়–য়া এক যুবক জানান, ‘ ব্রিজটির সংস্কার কাজ চলার সময়ই কাজের নি¤œমান চোখে পড়েছে আমাদের। তবে এমপি সাহেবেরে স্ত্রীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেহেতু কাজটি করছে তাই আমরা প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি।’ সংস্কারের আড়াই মাসের মাথায় ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আহসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তীব্র স্রোত আর ট্রলারের ধাক্কায় ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ছে। তাছাড়া সংস্কারের কাজ হলেও এটি সংস্কারের উপযোগী ছিলনা। বহু পুরানো এই ব্রীজটি কোন রকমে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম আমরা।’ বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এমপি পত্নী লায়লা ইরাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি স্বামীর সঙ্গে হজ্বে থাকার কারণে আলাপ করা সম্ভব হয়নি।(তথ্য সূত্র, আজকের দর্পণ)