আজ বিজয়া দশমী, কাল প্রতিমা বিসর্জন

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ

photo

গ্রাম বাংলা ডেস্ক:শুভ বিজয়া দশমী আজ। শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। তবে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে কাল শনিবার।
আজ ভোর ছয়টা ৫৪ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা এবং সকাল আটটা ২৩ মিনিটের মধ্যে দেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন শেষে শান্তিজল গ্রহণ করে শেষ হবে দুর্গাপূজা। তিথি অনুযায়ী, মহানবমী ও বিজয়া দশমীর লগ্ন একই দিনে হওয়ায় আজই শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বিজয়া দশমী আজ হলেও ভক্ত ও দর্শনার্থীরা সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা দর্শনে যেতে পারবেন। তিনি বলেন, শনিবার বেলা তিনটায় ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে বের করা হবে বিজয়া শোভাযাত্রা। এটি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বুড়িগঙ্গা তীরে যাবে এবং সেখানেই বিসর্জন দেওয়া হবে প্রতিমা।
মহাষ্টমীতে কুমারী পূজা: প্রতিদিন সকালে ঢাকের বোল পৌঁছে দিচ্ছে উৎসবের বার্তা। শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী ছিল গতকাল। এদিন রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হয় পূজার আকর্ষণীয় পর্ব ‘কুমারী পূজা’। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা করে তাতে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই কুমারী পূজা।
মতিঝিল এলাকায় গতকালের সকালটা ছিল কিছুটা ভিন্ন। মতিঝিলের অনতিদূরে গোপীবাগ কিংবা আর কে মিশন রোড এলাকায় গিয়ে দেখা গেল জনস্রোত। সকালের নরম আলোয় উৎসবপ্রিয় ‘দুর্গা’ ভক্তদের উপস্থিতিতে চারদিক গমগম করছিল। মাইকে ভেসে আসছিল একের পর এক ভক্তিমূলক গান, যেখানে উচ্চারিত হচ্ছে দেবী-বন্দনা আর অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার কথা। এরপর বিরামহীনভাবে বাজতে শুরু করল ঢাক-ঢোল-কাঁসর। সঙ্গে নারীদের ভক্তিধরা উলুধ্বনি। এরই মধ্যে বাবার কোলে চড়ে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হলেন ‘কুমারী মা’। সঙ্গে সঙ্গে হাজারো ভক্ত একসঙ্গে বলে উঠলেন, ‘জয় কুমারী মায় কি জয়, জয় মহামায় কি জয়, জয় দুর্গা মায় কি জয়’। এমনই ভক্তি আর উৎসবমুখর পরিবেশে গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো কুমারী পূজা। এবারের ‘কুমারী মা’ অন্বেষা মুখোপাধ্যায়। শাস্ত্রমতে, তাঁর নামকরণ করা হয়েছে ‘মালিনী’।
এবারের কুমারী পূজা শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায়। এর আগেই পূজামণ্ডপে স্থাপিত হয় কুমারী মায়ের আসন। পদ্মফুলের আদলে তৈরি এ আসন মণ্ডপে আসার পরই যেন ভক্তদের অপেক্ষা আরও বেড়ে যায়। অপেক্ষা শেষে সকাল ঠিক সাড়ে ১০টায় বাবার কোলে চড়ে আসেন ‘কুমারী মা’ অন্বেষা। লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি পরে আসা ‘কুমারী মা’র চোখেমুখে ছিল কিছুটা ভীতি আর আনন্দ। তার মুখশ্রী মনে করিয়ে দিচ্ছিল তারই পেছনে অধিষ্ঠিত দেবী দুর্গার সুকোমল মুখখানা।
‘কুমারী মা’ আসনে আসার পরপরই শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘কুমারী মা’কে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে তোলা হয়। এরপর ‘কুমারী মা’র চরণযুগল ধুয়ে তাকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্রকে সাজানো হয়েছিল গঙ্গাজল, বেলপাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। ১৬টি উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সূত্রপাত। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস—এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী’ মায়ের পূজা। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। পূজার শেষে প্রধান পূজারি দেবীর আরতি দেন এবং তাঁকে প্রণাম করেন। সবশেষে পূজার মন্ত্রপাঠ করে ভক্তদের মধ্যে চরণামৃত বিতরণের মধ্য দিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মতিঝিল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী এবারের কুমারী মা অন্বেষা। তার বাবা জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় ও মা মহুয়া মুখোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *