চট্টগ্রাম : রাত পোহালেই নোভার বিয়ে। বর রংপুরের ‘বাদশা’। শুনে যাদের একটু ভ্রু কপালে উঠে গেছে তারা হয়তো আরো অবাক হবেন দুটি সিংহের বিয়ে দেয়া নিয়ে এলাহী কাণ্ড চলছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়।
লোকজনের মুখে মুখে ফিরছে দুটি প্রাণীর বিয়ের খবর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বরযাত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষজনকে। তবে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। তার মতো শহরের অন্তত ৩০০ লোককে দুই সিংহের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে গণমাধ্যম কর্মীদের সংখ্যা বেশি।
চট্টগ্রামের মেয়ে নোভা। আর রংপুরের ছেলে সিংহ বাদশা। গত ৫ই সেপ্টেম্বর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে যাকে নিয়ে আসা হয়েছিলো পাহাড় আর সাগরপাড়ের শহরে। এনেই নিজের মতো করে থাকতে দেয়া হয়েছিলো আলাদা খাঁচায়। এই নগরীর বিশুদ্ধ বাতাস আর মানুষের আগ্রহ দেখে অভিভূত রংপুরের বাদশা।
ইঙ্গিত করেছেন তিনি নোভার সঙ্গে প্রণয়ে আবদ্ধ হতে চান। সংসার করে সন্তানের পিতা-মাতা হতে চান অনেকদিন ধরে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, আগামীকাল বুধবার সকাল ১১টায় এই দুই সিংহকে একই খাঁচায় রাখা হবে। পাশাপাশি থাকায় ইতিমধ্যে দুইজনের বেশ ভাব হয়ে গেছে।
চলতি মাসের গত ৫ই সেপ্টেম্বর বর হিসেবে রংপুর থেকে আনা হয়েছিল ‘বাদশা’কে। এর নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি কিউরেটর মনজুর মোরশেদ। তার সঙ্গে ৫ সদস্যের একটি টিম বাদশাকে দুটি লোহার খাঁচায় পুরে ট্রাকে চড়িয়ে নিয়ে আসে চট্টগ্রামে। এরপর তাদের মধ্যে মারামারি এড়াতে পৃথক খাঁচায় পাশাপাশি রাখা হয়।
চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা জানান, ২০০৫ সালের ১৬ই জুন এখানে জন্ম নেয় নোভা ও তার আরেক বোন বর্ষা। এর মধ্যে তাদের মা লক্ষ্মী মারা যায়। মায়ের অভাব সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে মারা যায় বাবা রাজ। সালটা ২০০৮ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি। বাবা-মাকে হারিয়ে একাকী হয়ে পড়ে দুই বোন। এরপর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ তাদের বিয়ে দেয়ার জন্য পুরুষ সিংহ খুঁজলেও কোথাও পাওয়া না যাওয়ায় একাকী থেকে যায় নোভা ও বর্ষা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সিদ্ধান্ত হয়, রংপুর চিড়িয়াখানায় দুটি পুরুষ সিংহ রয়েছে। এর মধ্যে বোন বর্ষাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় রংপুরে। বিনিময়ে সেখান থেকে বাদশাকে নিয়ে আসা হয় বোন নোভার জন্য।
চিড়িয়াখানার চিকিৎসক সাহাদাত হোসেন শুভ জানান, বিয়ের জন্য পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠেছে বাদশা। তাকে পেয়ে আনন্দিত নোভা। দর্শকরাও মজা পেয়েছেন তাদের দেখে। আশা করা যাচ্ছে একসঙ্গে থাকার পর চিড়িয়াখানায় সিংহের খাঁচার দৃশ্য পুরোপুরি পাল্টে যাবে।