কাশ্মীর; কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দপ্তারে হামলা চালিয়ে ১৭ সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে ‘সশস্ত্র জঙ্গিরা’। রোববার ভোরে ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখার (লাইন অব কন্ট্রোল) কাছে ভারত শাসিত অংশে এ হামলা হয়। কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে অন্তত ১০০ কিলোমিটার পশ্চিমের উরি এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। এ সময় চার হামলাকারীর সবাই নিহত হয়েছে। কয়েক বছরে এটিই ভারত বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর চালানো হামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র এই হামলাকে ‘ফিদায়িন’ বা আত্মঘাতী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কর্মকর্তারা জানান, ভোর ৪টার দিকে আত্মঘাতী হামলাকারীদের ওই দলটি গোপনে ঘাঁটিতে প্রবেশ করে প্রশাসনিক এলাকায় পৌঁছে যায়। এরপরই তারা গ্রেনেড ছোড়ে। এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এ সময় তাঁবুতে আগুন ধরে যায়। এর ভিতরে যেসব সেনা সদস্য ঘুমিয়ে ছিলেন তাদের অনেকেই এতে মারা যান। এ সময় শ্রীনগর-মুজাফফরাবাদ মহাসড়কের ওপর থেকে ওই সেনা সদর দপ্তরের আগুন দেখা যায়। আকাশে ছড়িয়ে পড়ে কালো ধোয়া। ঘটনার সময় সেনা তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন অনেক সেনা সদস্য। এতে আগুন ধরে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। কমপক্ষে এক ডজন সেনার অবস্থা সঙ্কটজনক। ৬ ঘন্টা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করে আহত হয়েছেন তারা।
নিহত ১৭ সেনা সদস্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আত্মউৎসর্গকারী ১৭ সেনাকে আমরা স্যালুট জানাই। ছয় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে সেখানে উপস্থিত সবাই নিহত হন। সেনা সূত্রগুলো জানিয়েছে, ওই ঘাঁটিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। হামলায় আহতদের হেলিকপ্টার যোগে শ্রীনগরের সেনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং রোববার বিকেলে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। তিনি এক টুইট বার্তার মাধ্যমে তার পূর্ব নির্ধারিত রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল ঘোষণা করেন। কাশ্মীরের স্থানীয় ইংরেজি দৈনিক গ্রেটার কাশ্মীরও সেনা কর্তকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে, উরিতে ফিদায়িন হামলায় ১৭ সেনা ও চার ‘মিলিট্যান্ট’ নিহত হয়েছে। এদিকে গত জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে বিরোধপূর্ণ এ অঞ্চলটিতে। স্থানীয় পত্রিকা বলছে, রোববার ছিল অচলাবস্থা, ধর্মঘট ও কারফিউ’র ৭১তম দিন। এ নিয়ে এই দীর্ঘ অচলাবস্থায় সব মিলিয়ে নিরস্ত্র ৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবারও ১১ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার। ভারতে এ নিয়ে দ্বিতীয় বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ঘটলো এক বছরের মধ্যে। তবে তার মধ্যে রোববারের ওই হামলায় সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর আগে জানুয়ারিতে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। সেখানে নিহত হন ৭ নিরাপত্তা কর্মী।