জেলা পরিষদ নির্বাচন ডিসেম্বরে নভেম্বরে তফসিল

Slider বিচিত্র

31613_f66

 

ঢাকা:  জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বর মাসেই এ নির্বাচন করার কথা ভাবা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নভেম্বর মাসে তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
ইসি সূত্র বলছে, নির্বাচনবিধি ও আচরণবিধির খসড়ার কাজও শেষ হয়ে গেছে প্রায়। বিধি চূড়ান্ত করতে চলতি সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। এছাড়া বিধির গেজেট, সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজেও হাত দিয়েছে কমিশন। এরই মধ্যে জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণে বিধিমালা জারি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য  নির্বাচিত হবেন।
১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল। এরপর আর কোনো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি। আইন প্রণয়নের ১৬ বছর পর প্রথমবারের মতো পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ। আইন অনুযায়ী, জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। আর সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদসমূহে প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ডসমূহের কাউন্সিলর, উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এই নির্বাচনে ভোটার হবেন। সেই হিসেবে স্থানীয় সরকারের এই চারটি স্তরের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা সাড়ে চার ৪ হাজার। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। অন্যদিকে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।
ইসি সূত্র বলছে, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এসব জনপ্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মতো বড় দুটি নির্বাচন রয়েছে। তার বাইরে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে আমরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। যদিও জেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো এত বেশি লজিস্টিক সাপোর্ট লাগবে না। যেহেতু এখানে ভোটারসংখ্যা সীমিত এবং তারা নিজেরাই জনপ্রতিনিধি। তবুও বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি ব্যতিক্রমী নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমরাও চাচ্ছি যত তাড়াতাড়ি পারা যায় এই নির্বাচনের দিকে এগোতে। সে ক্ষেত্রে এই বছরের মধ্যেই নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক কাজও শেষ হয়েছে। শুধু আইন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত বিধি অনুমোদন পেয়ে আসলেই, বাকি কাজগুলো খুব তাড়াতাড়ি শেষ করা হবে।
এদিকে স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউপি, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন) নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হলেও জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে নির্দলীয়। গত নভেম্বরে দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের সর্বস্তরে ভোটের জন্য বিল উপস্থাপন করা হলেও পরে জেলা পরিষদের বিলটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভোটার এবং ২৫ বছর বয়সী যেকোনো নাগরিক জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবেন। তবে কোনো প্রার্থী ভোট দিতে পারবেন না। অন্যদিকে জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারবেন না।
১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনটি প্রণীত হয়। এর মাধ্যমে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেয়ার বিধান ছিল। পরে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে। পাঁচ বছর মেয়াদি জেলা পরিষদগুলোতে বর্তমানে অনির্বাচিত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২৮শে আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১৬-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। সংসদ অধিবেশন চলমান না থাকায় জরুরি বিবেচনায় ৫ই সেপ্টেম্বর এ সংশোধন অধ?্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *