টাম্পাকোতে এখনো আগুন: নিহতের সংখ্যা ৩৪

Slider ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার মুখোমুখি সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

file

 

গাজীপুর;  টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে টাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় উদ্ধারকাজ সোমবার সকাল থেকে শুরু করেছেন সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা। এ কারখানার ধ্বংসাবশেষ অপসারণের পুরো কাজ সম্পন্ন করতে দুই মাস সময় লাগার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এ দিকে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ষষ্ঠ দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই কারখানার আগুন পুরোপুরি নেভেনি। এখনো কারখানার বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফলে ঝুঁকির মধ্য দিয়ে সেনাসদস্যসহ উদ্ধারকর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে। ওই কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১০ জন। কারখানার এ ঘটনায় শিগগিরই শ্রম আইনে মামলা হচ্ছে।

টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত শনিবার ভোরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টির বেশি ইউনিটের কর্মীরা টানা চেষ্টা চালিয়ে রোববার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কারখানার বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসাবশেষ থেকে আগুনের ধোঁয়া বেরোতে দেখা গেছে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। ফলে হতাহতদের খোঁজে কারখানার ভেতরে এখনো তল্লাশি চালাতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। ভয়াবহ এ ঘটনায় ওই কারখানার বিশাল ভবনের বেশির ভাগই ধসে পড়ে বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ধসে পড়ার পর ৫ তলা ভবনের অবশিষ্টাংশেও ফাটল দেখা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে। এ ছাড়া আহত হয় অর্ধশতাধিক। নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েকজন। কারখানার ধ্বংসস্তূপে আরো লাশ বা জীবিত অবস্থায় কেউ আটকা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিখোঁজদের স্বজন ও স্থানীয়রা। এ পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে একটি দল বুলডোজার ও ভেক্যুসহ ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে টঙ্গীর ওই টাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় উদ্ধারকাজ শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তারা দু’দিক থেকে কারখানা ভবনের ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করছিলেন। তবে ঘটনাস্থলে কেমিক্যালের একাধিক ড্রাম থাকায় বেশ সতর্কতার সাথে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সেনাসদস্যরা বৃহস্পতিবার ওই কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে খাট, চেয়ার, টেবিল, পাতিল, লেপ-তোশক, বইসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করেছেন। উদ্ধারকাজে তাদের সহায়তা করছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা। এর আগে উদ্ধারকাজের প্রস্তুতি নিতে রোববার রাতে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে।

এ দিকে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম জানান, সোমবার সেনাসদস্যরা কারখানার পূর্ব পাশে রাস্তার ওপর থেকে কারখানা ভবনের ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে দুই জনের লাশ উদ্ধার করেন। এর আগে সকাল ৭টায় ভবনের তৃতীয় তলার ধ্বংসাবশেষ থেকে আরো দু’জনের লাশ উদ্ধার করেন। এরপর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নর্দার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো: মনোয়ার হোসাইন (৪০) নামে এক ব্যক্তি মারা যান। হাসপাতালের আইসিইউর আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: নাফিউল ইসলাম বলেন, তার শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কারণে ফুসঃফুস ও খাদ্যনালী পুড়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি বুকে ও মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। গত ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর টাম্পাকোতে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মনোয়ার হোসাইনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে জায়গা না থাকায় নর্দার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তালিকা পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের লাশ ইতোমধ্যে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে যে সাতটি লাশের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি, তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য লাশগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা রয়েছে। পরিচয় শনাক্তের জন্য অজ্ঞাত ওই সাতটি লাশ আরো কিছু দিন সেখানে সংরক্ষণ করা হবে। তাদের পরিচয় শনাক্তের পরই লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে।

দোষীদের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল সাংবাদিকদের জানান, টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দ্রুত তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের নগদ ১৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে। আর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি থাকা আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

ভয়াবহতা রানা প্লাজার চেয়েও অনেক বেশি
সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মাহমুদ হাসান জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানার বিস্ফোরণজনিত ভয়াবহতা রানা প্লাজার চেয়েও অনেক বেশি। এখানে যে পরিমাণ গর্বেজ (ধ্বংসাবশেষ) জমে রয়েছে তা রানা প্লাজার চেয়েও অনেক বেশি। সেনাসদর থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। সোমবার সকালে আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি। মূলত আমরা তিন দিক থেকে কাজ করব। কিন্তু এখানে রয়েছে ইথাইল কেমিক্যালের ড্রাম- যেগুলো কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এসব ইথাইল ড্রামগুলো একেকটা বোমার মতো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ইথাইল ড্রামগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। কোনো ড্রামে খোঁচা লাগলে সেটি বোমার মতো বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের জায়গায় কাজ করার মতো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। তাই ইথাইল ড্রামগুলোকে এড়িয়ে সাবধানতার সাথে আমাদের কাজ করতে হবে।

কারখানার মালিক ও স্ত্রীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা
এ দিকে, দুর্ঘটনায় নিহত জুয়েলের পিতা আ: কাদের বাদি হয়ে টঙ্গী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কারখানার মালিক মকবুল হোসেন ও তার স্ত্রী শেফালী পারভীনসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলো: কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন, ব্যবস্থাপক (সার্বিক) সমীর আহমেদ, ব্যবস্থাপক হানিফ ও উপসহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পর থেকে মামলার আসামিরা পলাতক রয়েছে।

নিহত ২৭ জনের পরিচয়
টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় দুর্ঘটনায় নিহত ৩৪ জনের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৪ জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলের পাশে স্থাপিত জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিহতরা হলেন : টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ভেংগুলা গ্রামের কৃষ্ণ প্রসাদের ছেলে সুভাষ চন্দ্র প্রসাদ (৩৫), ভোলার দৌলতখান গ্রামের জবুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাকচুর গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৮), একই জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে আবদুর রাশেদ (২৫), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার রুহিতারপাড়া গ্রামের মৃত খালেক মাস্টারের ছেলে আবদুল হান্নান (৬৫)। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থানার মানিককাজী গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে ইদ্রিস আলী (৪০), ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বড়বাহ্রা গ্রামের মৃত নবদীপ দাসের ছেলে গোপাল দাস (২৫), একই উপজেলার চরমানপুর গ্রামের নিতাই সরকারের ছেলে শংকর সরকার (২৫), পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার পশ্চিম ফুলজুড়ি গ্রামের মৃত ইনজাম উদ্দিন আজাদের ছেলে আল মামুন (৪০), সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুন্দিসাই গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে এনামুল হক (৩৮), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার আআস্তাফলা গ্রামের করিম বক্সের ছেলে সোলাইমান (৩৫), টাঙ্গাইল সদরের মধুপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আনিছুর রহমান (৫০), একই এলাকার মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে ওয়ালি হোসেন (৩৫), ভোলার দৌলতখান থানার লেজপাড়া গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মাইন উদ্দিন (৩৫)। সিলেটের গোলাপগঞ্জের সুন্দিসাড়ি গ্রামের তনজিদ আলীর ছেলে সাইদুর রহমান (৫০), টাঙ্গাইল সদরের মধুপুর গ্রামের মৃত মচর আলীর ছেলে হাসান সিদ্দিকী (৫০), চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মামুন ওরফে ক্লিনার মামুন (৪০), সিলেটের মিবগঞ্জ সোনাপাড়া এলাকার আবদুল আহাদের ছেলে মিজানুর রহমান (২৫), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বনদশক্যানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে রোজিনা, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার আদর্শপাড়া এলাকার মৃত মুকুল চন্দ্র দাসের ছেলে রিপন দাস (৩০)। এ ছাড়া শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর মহিষা গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪০), সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার মুরাদনগর এলাকার ওয়াহিদুজ্জামান তপন (৩৬), শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পুরাঘর এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৫০), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আদমপুর এলাকার হাবিবুর রহমানের মেয়ে তাহমিনা আক্তার (২০), ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার পাবাডুবি এলাকার রসি মিয়ার ছেলে আশিক (১৪) ও শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার আনাখন্দ গ্রামের উদ্দিন দেওয়ানের ছেলে মনোয়ার হোসেন (৩৮)।

নিখোঁজ ১০ জনের তালিকা
অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেনÑ মাগুরা সদরের চনপুর ইগরন গ্রামের আব্দুস ছালেক মোল্লার ছেলে কাজিম উদ্দিন (৩৬), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের উকলমি গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৭), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার শিবপুরের আবু তাহেরের ছেলে রিয়াদ হোসেন মুরাদ, একই গ্রামের সুলতান গাজীর ছেলে আনিসুর রহমান (৩০), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার মেসেরা গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০)। চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পলাখান গ্রামের ইউসুফ পাটোয়ারীর ছেলে নাসির পাটোয়ারী, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার টনকি গ্রামের তোফায়েল হোসেনের ছেলে মামুস আহমেদ (৩০), ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ভীমনগর গ্রামের মোজাম মোল্লার ছেলে চুন্নু মোল্লা, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ফানিশাইল গ্রামের হাজী আবদুল করিমের ছেলে রেদোয়ান আহমেদ ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে জয়নুল ইসলাম।

বয়লার অক্ষত
টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় দুর্ঘটনায় গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিশেষজ্ঞদের দাবিÑ বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লাইন লিক হয়ে টাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার শরাফত আলী জানান, টাম্পাকো কারখানায় দু’টি বয়লার রয়েছে। এগুলো ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত নবায়ন করা আছে। অগ্নিকাণ্ডের পরও কারখানার দু’টি বয়লার অক্ষত আছে। তাই বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লিকেজ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্তের পর এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

কারখানার বয়লার অপারেটর ইনচার্জ ইমাম উদ্দিন বলেন, কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের কোনো আশঙ্কাই নেই। আমরা বয়লার রুমে গিয়ে দেখেছি বয়লার দু’টি এখনো অক্ষত আছে। তবে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কারখানায় গ্যাস লাইনে লিকেজ সৃষ্টি হয়েছিল। সে কারণে হয়তো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাম্পাকো কারখানায় মোট চারটি বয়লার ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির এ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দাবি করছেন- দু’টি ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ওই কারখানায় দুটি বয়লারের অনুমোদন রয়েছে।

এ দিকে কারখানায় সরকারিভাবে গ্যাস ব্যবহারের অনুমোদন ছিল ১০ পিএসআই। কারখানার বয়লার এবং জেনারেটর গ্যাসের সাহায্যে চলত। এ দুর্ঘটনার পর থেকে কারখানার আশপাশ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, গত শনিবার ভোরে গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কারখানা ভবন ধসে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টির বেশি ইউনিটের কর্মীরা রোববার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও পুরোপুরি নেভাতে পারেননি। ইতোমধ্যে কারখানা ভবনের বেশির ভাগই ধসে পড়ে। ফলে এ ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে শনিবার রাত পর্যন্ত মৃত্যু হয় ২৪ জনের। আহত হয় অর্ধশতাধিক। আহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতদের মধ্যে ঘটনার পরদিন রোববার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রিন্টিং অপারেটর রিপন দাস (৩০) নামে আরো একজন মারা যান। এ ছাড়াও রোববার সন্ধ্যায় ওই কারখানার পূর্ব পাশে রাস্তার ওপর ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ অপসারণ করে আরো চারজনের লাশ উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মীরা। সোমবার ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো চারজনের লাশ উদ্ধার করেন সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কারখানার লেদ সেকশনের ইনচার্জ মনোয়ার হোসেন নামে আরো একজন মারা যান। এ নিয়ে ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এ দিকে সোমবার সকালে দমকল বাহিনীর সাথে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় সেনাবাহিনী। সেনা অভিযানের প্রথম দিন তিন লাশ উদ্ধার হলে নিখোঁজদের মধ্যে দুই লাশ শনাক্ত হয়। সে হিসেবে নিখোঁজের তালিকায় এখনো আছেন ১০ জন। এ ছাড়া আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। এখনো তাদের জ্ঞান ফিরেনি। তাদের মধ্যে দুইজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও একজন ধানমন্ডির একটি প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালেও এখনো দুইজন চিকিৎসাধীনে রয়েছেন। গত শনিবার টাম্পাকো দুর্ঘটনার দিন টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল থেকে গুরুতর আহত মোট ৩৮ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আরো ৩০ জনকে এই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ইতোমধ্যে আরো ছয়জন এই হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডির নর্দার্ন হাসপাতালে মনোয়ার হোসেন (৩৮) নামে অগ্নিদগ্ধ এক শ্রমিক মারা যান। মনোয়ার হোসেন টাম্পাকো কারখানার লেদ সেকশনের ইনচার্জ ছিলেন। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার আনাখন্দ গ্রামের মমতাজ উদ্দিন দেওয়ানের ছেলে।

উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লে. কর্নেল মো: শফিউল আজমের নেতৃত্বে ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের সেনাসদস্যরা কারখানাটির অবস্থা পর্যবেক্ষণে আসেন। পর্যবেক্ষণ শেষে পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোমবার সকাল থেকে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর দল প্রথমে কারখানার পূর্ব পাশে রাস্তায় ধসে পড়া ভবনের অংশ সরিয়ে ফেলার কাজ শুরু করেন। ধসে যাওয়া ওই স্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে সোমবার সকালে একটি দল টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানার ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু করেন।

কারখানা কর্তৃপক্ষের কেউ এখনো আসেননি
টাম্পাকো কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এখনো ঘটনাস্থলে আসেননি কোম্পাটির এমডি বা চেয়ারম্যান কিংবা কর্তৃপক্ষের কেউ। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন কারখানার কর্মকর্তারা। তাদের কাউকে না পাওয়ায় ঘটনার সময় কারখানাটিতে কত শ্রমিক কাজ করছিলেন তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানির চেয়ারম্যান সিলেটে-৬ (গোলাপগঞ্জ) আসনের সাবেক দুই বারের স্বতন্ত্র এমপি সৈয়দ মকবুল হোসেন লিচু। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য মালিকপক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতার কথাও জানা যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সৈয়দ মকবুল হোসেন কিংবা মালিকপক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে না আসায় ক্ষুব্ধ প্রশাসন। তার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগও করতে পারছেন না কেউ। তিনি এখন কোথায় আছেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছেন না তার ঘনিষ্ঠজনরাও।

শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, মালিকপক্ষের এ ধরনের আচরণ দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মালিকপক্ষের কোনো ধরনের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখা মেলেনি মালিকপক্ষের কারো। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাহেনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর কারখানার মালিক বা ম্যানেজারদের কাউকে পাননি তারা।

মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সিলেটের স্থানীয় আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন দিলু জানান, মকবুল এখন কোথায় আছেন, তার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে- এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না তিনি।

ঈদের দিনও থেমে থাকেনি উদ্ধারকাজ
টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় ঈদের দিনও সেনা ও দমকল বাহিনীর উদ্ধারকাজ অব্যাহত ছিল। ঈদের উৎসব ভুলে নিখোঁজদের স্বজনেরা ভিড় করছিলেন কারখানা চত্বরে। সোমবার সকালে টাম্পাকো কারখানার ধ্বংসাবশেষ সরাতে দমকাল বাহিনীর সাথে যোগ দেন সেনাসদস্যরা। ওই দিন সকালে সেনাসদস্যরা কারখানার সামনে বিসিক প্রধান সড়ক থেকে ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে একজনের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেন। ভবনের নিচে চাপা পড়ে থেঁতলে যাওয়ায় লাশটি শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এর আগে কারখানার ভেতরের অংশ থেকে আরো দু’টি লাশ উদ্ধার করেন দমকল বাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া সেনা ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানান, কারখানার অভ্যন্তরে ইথাইলের ড্রামগুলো বিস্ফোরণের আশঙ্কায় সতর্কতার সাথে কাজ করা হচ্ছে।

কারখানার এমডি, চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত জুয়েল মিয়ার বাবা মো: আবদুল কাদের পাটোয়ারী টঙ্গী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় কারখানার মালিক সিলেট-৬ আসনের সাবেক এমপি সৈয়দ মকবুল হোসেনকে প্রধান আসামি এবং আরো সাতজনের নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেনÑ কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ, মকবুল হোসেনের স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক (সার্বিক) মোসা: সাজেদা পারভিন, জিএম শফিকুর রহমান, ম্যানেজার মনির হোসেন, ম্যানেজার (সার্বিক) সমির আহমেদ, ডিএমডি আলমগীর হোসেন ও ম্যানেজার (নিরাপত্তা) হানিফ।

টাম্পাকো দুর্ঘটনায় হতাহতের জন্য দোয়া মাহফিল
টাম্পাকো দুর্ঘটনায় হতাহতের জন্য সোমবার বাদ জোহর টঙ্গীতে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। টঙ্গী আহসান উল্লাহ সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিচার্জ সেন্টার কমপ্লেক্স মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি আলহাজ হাসান উদ্দিন সরকার। দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আহসান উল্লাহ সরকারের ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিচার্জ সেন্টারের প্রধান উপদেষ্টা আলহাজ আবু আহমেদ। অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদের সানি ইমাম কারি আলী হোসেন। দোয় শেষে তবারক পরিবেশন করা হয়।

দেশের প্যাকেজিং শিল্পের প্রথম কারখানা টিএফএল
দেশের প্যাকেজিং শিল্পের প্রথম কারখানা টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড (টিএফএল)। টাম্পাকো ১৯৭৮ সালে যাত্রা শুরু করে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং সুইজারল্যান্ডের নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানা পণ্যের মোড়ক সরবরাহ করে টাম্পাকো। এ ছাড়া আবুল খায়ের গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ, ইস্পাহানী, কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, বিডি ফুডস লিমিটেড, অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, মেরিডিয়ান ফুডস লিমিটেড, ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড, ইউনিভার্সাল ফুডস লিমিটেড, আবদুল মোনেম লিমিটেড, বাংলা-জার্মান লেটেক্স কোং লিমিটেড, শাহ ডেইরি ফুডস লিমিটেড, মোল্লা সল্ট (ট্রিপল রিফাইন্ড) ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ভিটালাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রিন্স ফুডস লিমিটেড, হক বিস্কিট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, জনতা বিস্কিট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, এ.টি.এন ফুড অ্যান্ড কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, প্রোম কনজিউমার্স প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড, আল-কাদ ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, নুট্রিয়ন ফুডস লিমিটেড, নূর ফুডস লিমিটেড, গ্লোব বিস্কিট অ্যান্ড ডেইরি মিল্ক লিমিটেড, নাবিস্কো বিস্কিট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, সিদ্দিক ফুড অ্যান্ড অ্যাগরুবেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আফতাব ফুডস লিমিটেড, দ্যা লালমাই লিমিটেড, আল-আমিন সুইটস, ক্রেকাস লিমিটেডের কার্যাদেশ সরবরাহ করে টিএফএল।

এই তালিকা দৈনন্দিন বাড়ছে বলে কোম্পানিটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। টিএফএল বিশ্বমানের সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য ও পানীয়জাত পণ্যের ফ্লেক্সিবল মোড়ক প্রস্তুত করে থাকে। এ ছাড়া টিএফএল দেশে তামাকজাত পণ্যের (বেনসন, গোল্ডলিফ সিগারেটসহ) একমাত্র মোড়ক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া টাম্পাকোতে সব ধরনের পেপার ব্যাকড অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, কর্ক টিপিং পেপার, প্লাগ রেপ (মাড়ানো) পেপার, প্রি-প্রিন্টেড টিপিং পেপার, ইনার ফ্রেম বোর্ড ইত্যাদি সব ধরনের পেপার তৈরি করা হয়। এ ছাড়া এখানে সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব ধরনের ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং কাজ করা হয়। দেশের গর্বিত এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি নিমিষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়াকে সহজে কেউ মেনে নিতে পারছেন না। দুর্ঘটনায় টিএফএলের শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজনের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, কখনো তাদের বেতনভাতা বকেয়া রাখা হয়নি। প্রতি মাসের ১ তারিখের মধ্যে তাদের বেতন পরিশোধ করা হতো। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের কারখানার পাশে শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে ফ্রি পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া সিলেটের গোলাপগঞ্জে ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, সাজেদা পারভীন হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, সৈয়দ তানভীর হোসেন অ্যাকাডেমি, সৈয়দা আবেদা হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, সৈয়দা ফারহানা হোসেন উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়াও আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবদান রয়েছে টিএফএলের।

সরকারি অনুদান
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার ও আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত আহতদের মধ্যে ১৪ জনকে এবং নিহত এক জনকে (রিপন দাসের পরিবারকে) এ অনুদানের টাকা সরবরাহ করা হয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *