এই ঈদে তাদের চোখভরা কান্না

Slider জাতীয়

3337f7275cc7258fe0a93638acd3dcda-trampako

ঢাকা: ঈদ এলে অন্য সব শিশুর মতোই আনন্দে মেতে উঠত জান্নাতুল। ঈদের জামাতে যাওয়ার আগে বাবা তাঁকে সালামি দিতেন। খুশির উৎসবে এটা ছিল সাত রাজার ধন। কিন্তু এবারের ঈদে দশম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতুলের মুখে হাসি নেই। আছে দুচোখ ভরা কান্না। তার বাবা জাহাঙ্গীর মৃধা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।গাজীপুরের টঙ্গীতে টাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছেন তিনি। গত শনিবার টঙ্গীর টাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে বসে জান্নাতুল নীরবে চোখের পানি ফেলছে। সে বলে, ‘বাবাকে আমি ভুলতে পারছি না। যে বাবা ঈদের দিন আমার হাতে সেলামির টাকা তুলে দিতেন, সেই বাবা আজ আইসিইউতে। জন্মের পর থেকে এমন খারাপ সময় কখনো আসেনি।’
জাহাঙ্গীর মৃধা টাম্পাকো কারখানায় ১৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। গুরুতর অসুস্থ ছোট ভাইকে দেখতে আইসিইউর সামনে অপেক্ষায় রফিকুল আলম। দেখা গেল, কিছুক্ষণ পরপর রফিকুল রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন। রফিকুল বলছিলেন, ‘আজ ঈদের দিন। ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে কত যে কষ্টে আছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’

জাহাঙ্গীরের মতো আরও আটজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ছেলেটির নাম জোবায়ের। তাঁর বাবা আনোয়ার আলম টাম্পাকো কারখানার বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালের ১০২ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন। চার দিন হয়ে গেল জ্ঞান ফেরেনি। মুখমণ্ডল ঝলসে গেছে। বাবার এমন অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েছেন জোবায়ের। তিনি টঙ্গীর সরকারি কলেজে অনার্সের শিক্ষার্থী।

হাসপাতালের বিছানায় বসে জোবায়ের বলছিলেন, ‘বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি টাম্পাকোর সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। বাবা আজ গুরুতর অসুস্থ। আমাদের লেখাপড়ার খরচ কীভাবে আসবে, জানি না। বড় খারাপ সময় যাচ্ছে।’

জাকির হোসেন টাম্পাকোয় মেশিন পরিচালনা করতেন। কারখানায় বিস্ফোরণের ১০ মিনিট আগে তিনি ওই ভবনে ঢোকেন। গুরুতর অসুস্থ জাকির হোসেনের স্ত্রী হেলেনা বেগম বলছিলেন, ‘ঈদের দিন আনন্দে থাকার কথা, অথচ আজ বড় দুঃখের দিন!’

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মীর শিপনের জ্ঞান ফেরেনি। চার দিন ধরে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন তিনি। মুখ আগুনে ঝলসে গেছে। তাঁর স্ত্রী বেডে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পরপরই বলছিলেন, ‘কারও জীবনে যেন এমন দিন না আসে।’

সিলেটের ঋজু হোসেনের ছোট ভাই মিঠু। তাঁর বয়স ১৫ বছর। সে বারবারই বলছিল, ‘আজকে ঈদের দিন। অথচ ঈদটাই কাটাতে পারলাম না। ভাইয়া কোনো কথা বলছেন না। ডাকলে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *