নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী

Slider জাতীয়

088b27053b09832a5e8c94c3ad3a6427-13-09-16-bd-pm_eid-greating_gonobhobon-32

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা নিরীহ মানুষকে মারে, তারা কখনো ধর্মে বিশ্বাস করতে পারে না। নিরীহ মানুষ হত্যা করা মানবতাবিরোধী কাজ। নিরীহ মানুষকে হত্যা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না।

আজ মঙ্গলবার সকালে গণভবনে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সমগ্র দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলমানদেরও মোবারকবাদ জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের নবী করিমও (সা.) বলে গেছেন, নিরীহ মানুষকে যেন হত্যা না করা হয়। তারপরও ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা। আমি মনে করি, এতে আমাদের ইসলামেরই ক্ষতি হচ্ছে। ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ইসলাম ধর্ম পবিত্র ধর্ম। এই শান্তির ধর্মকে যারা হেয়প্রতিপন্ন করছে, তারা শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মসজিদের ইমাম, যাঁরা ধর্মীয় শিক্ষা দেন, ওলামা মাশায়েখ, ছাত্র-শিক্ষকসহ সারা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জঙ্গিবাদের প্রতিরোধের ব্যাপারে আপনারা সচেতন থাকবেন। বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, সহনশীল। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় তারা বিশ্বাস করে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। প্রত্যেক মানুষ যেন তার ধর্ম শান্তিপূর্ণ ও সম্মানের সঙ্গে পালন করতে পারে, এটাই হচ্ছে ইসলামের মূল শিক্ষা। আমরা সেভাবেই এ দেশকে গড়ে তুলতে চাই। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা চাই। আমি ধন্যবাদ জানাই, প্রত্যেকে যথেষ্ট সাড়া দিয়েছেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। আগামীতে এটা অব্যাহত থাকবে, সেটাই আমি চাই।’

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা কোনো দেশের না, বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ এখন বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা যার যার নিজ নিজ অবস্থান থেকে মোকাবিলা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। মাঝে মাঝে দু-একটি ঘটনা আমাদের থমকে দেয়। কিন্তু আমরা যেকোনো ঘটনা মোকাবিলা করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, এত রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কোনো ষড়যন্ত্রকারী যেন এই স্বাধীনতাকে ক্ষতি করতে না পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন থেকে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যেন সচল থাকে, তার জন্য কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেন মর্যাদার সঙ্গে চলতে পারি, সেভাবেই আমি এ দেশটাকে গড়ে তুলতে চাই। সব সময় আমি চাই, বাঙালি জাতি একটি গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবে। যেটা জাতির স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে—ইনশা আল্লাহ আমরা তা পারব।’

বক্তব্যের শুরুতে গাজীপুরের টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ৩৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় যে ৩৩ জন নিহত হয়েছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। যারা আহত, তাদের চিকিৎসা চলছে। যারা নিহত হয়েছে, তাদের পরিবারবর্গকে সচরাচর যেভাবে সাহায্য করে থাকি, আমরা সেভাবেই করব।’ তিনি আরও​ বলেন, ‘যারা কারখানা বা ফ্যাক্টরি করবেন, এর জন্য আলাদা ব্যবস্থা করবেন। এ বিষয়গুলো আমি ইতিমধ্যে শিল্পমন্ত্রীকে বলেছি। সারা বাংলাদেশে যেখানে এ ধরনের কারখানা রয়েছে, সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’

কানাডা এবং জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আগামীকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাবেন, তাই দেশবাসীর কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *