গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, চোর, খুনি, বদমাশ, সন্ত্রাসী, ব্যাংক লুটেরা ও
দুর্নীতিবাজরাই শেখ হাসিনার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। যিনি যত খারাপ কথা বলবেন, শেখ হাসিনার কাছে তিনি তত বেশি প্রিয়। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘ এবং যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়েছে হাসিনার এমন মিথ্যাচারেরও জবাব দিয়েছে দেশগুলো। এতে হাসিনা লজ্জা না পেলেও দেশের নাগরিকরা বিব্রত। হাসিনা এখন জঙ্গি জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। এটি হাসিনার কূটকৌশল। তার পিতাও নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে জনগণকে নকশালের ভয় দেখাতেন। সোমবার পূর্ব লন্ডনের ইয়র্ক হলে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অনারারি জিয়াউর রহমান ওয়ে’র ফলক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে তারেক রহমানের হাতে সম্প্রতি শিকাগো সিটি প্রশাসন কর্তৃক স্থাপিত অনারারী জিয়াউর রহমান ওয়ে’র একটি নামফলক হস্তান্তর করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় সেক্রেটারি অব স্টেটের জেসি হোয়াইট কাউন্সিলের সদস্য ও জিয়াউর রহমান ওয়ে‘র প্রস্তাবক শাহ মোজাম্মেল নান্টু। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে তারেক রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা, শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ড ও পূর্বাপর পরিস্থিতি এবং দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে নিয়ে কথা বলেন। শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার পরিকল্পনা কল্পনায় পরিণত হতে আর বেশি দেরি নেই মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এক অশুভ শক্তি। এই অশুভ শক্তির প্রধান রং হেডেড শেখ হাসিনার কাছে দেশ কুক্ষিগত। তিনি বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ নন। তার কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ কিছুই নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনই প্রমাণ করে বাংলাদেশের জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। বিদেশের কাছে ধরনা দিয়েও তারা অবৈধ সরকারের বৈধতার সার্টিফিকেট আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিএনপি প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের দুরাচার অনাচার আর গণতন্ত্রহীনতার কথা তুলে ধরছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছে এটি আন্দোলন মনে হচ্ছে না। তাদের কাছে অন্দোলন মানে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করা। আওয়ামী লীগ যে বিএনপির আন্দোলন টের পাচ্ছে না এটিও বিএনপির অন্দোলনেরই অংশ। যখন টের পাওয়া শুরু করবে তখন তাদের পালানোর পথ থাকবে না।
তারেক রহমান বলেন, নিজের হীন রাজনৈতিক স্বার্থে শেখ হাসিনা এখন জিয়াউর রহমান, তার পরিবার ও বিএনপির ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। অপপ্রচার চালিয়ে আর শতচেষ্টা করেও শেখ হাসিনা শিকাগোতে জিয়াউর রহমানের নামে সড়কের নামকরণ ঠেকাতে পারেননি। তিনি বলেন, দেশে বিদেশে জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকৃত হচ্ছে। জিয়াউর রহমানের জীবন ও কর্মের স্বীকৃতির জন্য আদালতের রায়ের প্রয়োজন নেই। তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ কখনওই জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারেনি। তারা ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ কিংবা ২৫শে মার্চের স্বাধীনতাকামী জনগণের ভাষা বোঝেনি। তেমনি বুঝতে পারেনি স্বাধীনতার পরও। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী লাখো মানুষকে নিরাপদ মনে করেননি শেখ মুজিব, তিনি নিরাপদ মনে করেছেন হানাদার বাহিনীকে। তিনি বলেন, শেখ মুজিব কিংবা শেখ হাসিনা তারা কখনওই জনগণের সমর্থনের ওপর ভরসা রাখেননি। এ কারণে শেখ মুজিবের স্বীকৃতি আদায়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বিদেশে এলেই বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চায়। এবারও জাতিসংঘে গিয়ে তিনি সেটি করে এসেছেন। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না। তাই বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত রাখতে হলে দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে হাসিনার বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, কোন একটি সরকারের নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি দুর্বল হলে এবং জনসমর্র্থন না থাকলেই সরকার আইনের দোহাই দিয়ে বেআইনিভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আসলে এই সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। তাদের একমাত্র ভরসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকে তাদের কতিপয় দলীয় ক্যাডার। আর যুবলীগ ছাত্রলীগের নামে সরকারের দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরেন শেখ মুজিব। এসেই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রকে পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট থেকে দু’দিন পরই প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান। সংবিধানের এত বড় মৌলিক পরিবর্তনের সময়ও তিনি জনগণের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে স্বাধীন হওয়ার পর যিনিই পাকিস্তানের পাসপোর্ট গ্রহণ করেন আইনের দৃষ্টিতে তিনি সেই দেশেরই নাগরিক। একজন পাকিস্তানের নাগরিক কিভাবে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হলেন, আজ হোক কাল হোক সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্যই জনগণের সামনে দিতে হবে। তিনি বলেন, ৭ই মার্চে পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দিয়ে শেখ মুজিব বক্তব্য শেষ করেছেন। ২৫শে মার্চে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, এটি তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার দলিল হয়ে থাকবে। এরপর তিনি স্বাধীনতাকামীদের নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তারেক রহমান বলেন, তাই শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’ নয় ‘পাকবন্ধু’। তারেক রহমান আরও বলেন, শেখ মুজিব ৭ই মার্চ কিংবা ২৫শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে মুক্তিযুদ্ধে এত লোক মারা যেতো না। যার অদূরদর্শিতা কিংবা আপসকামিতার ফলে মুক্তিযুদ্ধে এত লোকের প্রাণহানি হয়েছে তিনি ‘জাতির জনক’ হতে পারেন না। তিনি হত্যাকারী। তারেক রহমান বলেন, ইতিহাসের কোন সত্য শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে গেলেই আওয়ামী লীগ এবং তাদের অনুগতরা তাকেই রাজাকার হিসাবে অপপ্রচার চালায়। তারা এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ১১ জন সেক্টর কমান্ডারের কমপক্ষে ছয়জনকে রাজাকার অপবাদ দিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, একটি বই লিখে মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকার রাজাকার আর বেয়াই খন্দকার কিংবা নুরা খন্দকার নির্দোষ। তারেক রহমান বলেন, ধীরে ধীরে ইতিহাসের সত্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। হুমকি-ধমকি কিংবা র্যাবের ভয় দেখিয়ে সত্য আড়াল করে রাখা যাবে না। সভায় তারেক রহমান ১৯৭৩ সালে তৎকালীন ছাত্রনেতা বর্তমানে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলামের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, ৭৩ সালে ৩রা জানুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, দেশের জনগণ এবং গণমাধ্যমের কাছে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, ছাত্র হত্যার অভিযোগে শেখ মুজিবের সকল পদবি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। কেউ যেন শেখ মুজিবের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ কিংবা ‘জাতির জনক’ ব্যবহার না করেন। তিনি বলেন, গত কয়েক মাস তিনি বেশ কয়েকটি বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এবং এর পূর্বাপর ঘটনা এবং ইতিহাস বিকৃতির আড়ালে পড়ে থাকা কিছু কঠিন সত্য তুলে ধরেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তির বিপরীতে কিছু ব্যক্তি লম্পঝম্প করেছে। কারণ তাদের কোন যুক্তি নেই। আবার যুক্তি দিলেও শেখ হাসিনা তাদেরকে মুক্তি দেবেন না। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম কয়ছর আহমেদের পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, এডভোকেট আহমদ আজম খান, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শিকাগো’র জিয়াউর রহমান ওয়ে’র প্রস্তাবক শাহ মোজাম্মেল নান্টু, তারেক রহমানের বিশেষ উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এমএ মালেক, সিনিয়র সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সহ-সভাপতি আব্দুল হাই, উপদেষ্টা রফিকুল্লাহ। তারেক রহমানের তথ্য ও গবেষণা উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপি নেতা মিয়া মনিরুল আলমসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।