ট্যাম্পাকো ট্র্যাজেডি: রোজিনা-তাহমিনা দুই বোনেরই বিয়ে ঠিক ছিল ঈদের পর

Slider লাইফস্টাইল

 

 14322466_1766437020262252_3981590731106009016_n
ঢাকা: ঈদের ১৫ দিন পর দুই মেয়েকে একই সঙ্গে বিয়ে দেবেন- এমন চিন্তা করে রেখেছিলেন বাবা হানিফ মিয়া। পাত্রও ঠিক করা ছিল। বিয়ের বিষয়টি টেলিফোনে মেয়েদের জানিয়েছিলেন বাবা। এজন্য বেতন বোনাসের বড় একটি অংশ রোজিনারা ব্যয় করেছিল কাপড়চোপড় কেনাকাটায়। কিন্তু বিয়ে আর হলো না। এর আগেই ভবনের নিচে চাপা পড়ে মারা গেল তাদের স্বপ্নগুলো। ঢাকা থেকেই ছোট ভাইবোন আর মা-বাবার জন্য ঈদের জামা-কাপড় কিনে বাড়ি ফিরছিলো রোজিনা ইয়াসমিন (২০) ও তাহমিনা ইয়াসমিন (১৯)। টঙ্গীর একটি কলোনিতে থাকতো তারা। বাড়িতে ঈদ করার জন্য শনিবার দুপুরে রওনা দেয় তারা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের দিকে। টঙ্গীর ট্যাম্পাকো পয়েল কোম্পানির ভবনের কাছে পৌঁছামাত্র ভবনের বড় একটি অংশ ভেঙে তারা চাপা পড়ে। এতে দুই বোন মারাত্মক আহত হয়। স্থানীয়রা আহত রোজিনা ও তাহমিনাকে দ্রুত পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয় হতভাগী ওই দুই বোনকে। নিহত ওই দুই বোনের বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামে। তাদের বাবার নাম মো. হানিফ মিয়া। তিনি পেশায় রিকশাচালক। রোজিনারা ৬ বোন আর ৩ ভাইয়ের জীবনকে কিছুটা উন্নত করার জন্য ঢাকায় পাড়ি জমায়। ৭ বছর ধরে রোজিনা ও আহমিনা চাকরি করতো পাখিজায়। ঈদের বেতন বোনাস পেয়ে তারা বাড়ির সকল সদস্যের জন্য কাপড়চোপড় আর ছোটদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনেছিল। বাবার জন্য রোজিনা কিনেছিল লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি। মায়ের জন্য দামি শাড়ি কিনেছিল তাহমিনা। কষ্টার্জিত টাকায় কেনা সেই শাড়ি-লুঙ্গি বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিতে পারলো না রোজিনা-তাহমিনা। তারা কফিনবন্দি হয়ে বাড়ি ফিরলেও বাবা-মা ভাইবোনের হাতে পৌঁছেনি সেই জামা-কাপড়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার সময় লাশবাহী একটি গাড়িতে রোজিনা আর তাহমিনার মরদেহ পৌঁছে গ্রামের বাড়িতে। এখানে রাত থেকেই এলাকার শোকাহত মানুষের ভিড় জমেছিল। কফিনটি বাড়ির উঠানে নামাতেই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রতিবেশীরা। রোজিনা-তাহমিনার মা-বাবা বুক ছাপড়ে বিলাপ করতে থাকেন। মা মমিনা খাতুন নিহত কন্যাদের মুখ দেখার পর থেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন উঠানে। বাবা হানিফ মিয়া বলেন, মেয়ে দুটোই ছিল তার সংসারের একমাত্র অবলম্বন। তাদের বেতনের টাকায় চলতো সংসার। ছোট সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ তারাই মেটাতো। রোজিনাদের ছোট বোন রীমার বিলাপ দেখে প্রতিবেশীরা কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ. লতিব বলেন, রোজিনাদের সঙ্গে নতুন অনেক কাপড় ও নগদ টাকা ছিল। এগুলো খোয়া গেছে। লাশ আনতে নিহতের পরিবারকে পোহাতে হয়েছে অনেক দুর্ভোগ। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার সময় জানাজা শেষে হতভাগী ওই দুই বোনের মরদেহ ঘনশ্যামপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *