নওগাঁর : ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, নওগাঁর পশুর হাটগুলোতে ততই বাড়ছে ভারতীয় গরুর সরবরাহ। ফলে গরুর দাম পড়তির দিকে রয়েছে। এ অবস্থায় বেশি লাভের আশায় যাঁরা এত দিন গরু বিক্রি করেননি, সেসব গৃহস্থ, খামারি ও ব্যবসায়ী এখন হা-হুতাশ করছেন।
গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত জেলার বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে গরুর সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। দেশি গরুর পাশাপাশি হাটগুলোতে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় গরু উঠেছে।
ধামুইরহাটের আগ্রাদ্বিগুন হাটে বুধবার কথা হয় ভবানীপুর গ্রামের খামারি আনন্দ কুমার বর্মণের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ বছর কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ১৫টি গরু লালন-পালন করছিলাম। সাতটি গরু ইতিমধ্যে স্থানীয় বিভিন্ন হাটে ভালো দামে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু চলতি সপ্তাহে হাটে গরুর দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসান দিয়ে গরুগুলো বিক্রি করতে হবে। শেষ দিকে হাটে ভারতীয় গরুর সরবরাহ বাড়ায় এই সর্বনাশটা হয়ে গেল।’
সোমবার নিয়ামতপুর উপজেলার ছাতড়া হাটে গরু তুলেছিলেন ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম ও ছায়েদ আলী। তাঁরা জানান, ট্রাকে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১০টি গরু হাটে নিয়ে এসেছেন। ক্রেতারা গরুর দাম ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকার বেশি বলছেন না। এই দামে বিক্রি করলে গরুপ্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার লোকসান গুনতে হবে।
ছাতড়া হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি ও চনন্দননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বলেন, ‘আগের হাটের তুলনায় সোমবার হাটে ভারতীয় গরুর সরবরাহ বেশি হয়েছে। আর এ কারণেই গরুর দাম পড়ে গেছে বলে আমার ধারণা। হাটে যে হারে ভারতীয় গরু আসছে, তাতে মনে হচ্ছে সামনের হাটে গরুর দাম আরও কমবে।’
মঙ্গলবার মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজী পশুর হাটে উপজেলার রাঁইপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম একটি গরু দেখিয়ে বলেন, ‘এই গরুটা ৫২ হাজার টাকায় গত শুক্রবার মান্দার চৌবাড়িয়া হাট থেকে কিনেছিলাম। সোমবার ছাতড়ার হাটে এটার দাম উঠেছিল ৫০ হাজার। আজ (মঙ্গলবার) ক্রেতারা এটার দাম ৪৫ হাজার টাকার বেশি বলছেন না। কোরবানির আগে আর মাত্র তিন-চারটা হাট পাওয়া যাবে। দাম যে হারে পড়তির দিকে রয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে লোকসান দিয়েই গরুটা বিক্রি করতে হবে।’
সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাপাহার, ধামুইরহাট, পত্নীতলা ও পোরশা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে রাতে চোরাইপথে আসছে অনেক ভারতীয় গরু।
জেলায় কয়েকটি সীমান্তচৌকির (বিওপি) মধ্যে ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুধু সাপাহার উপজেলার হাঁপানিয়া সীমান্ত দিয়ে গত ২৯ আগস্ট থেকে ভারতীয় গরু আনা শুরু হয়েছে।
বিজিবি ১৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী রেজা বলেন, পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও ধামুইরহাট উপজেলার ১২৭ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে। বাংলাদেশি সীমান্তে জিরো পয়েন্ট অধিকাংশ এলাকায় বিজিবির সদস্যদের যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। বেশির ভাগ বিজিবি ক্যাম্প সীমান্ত এলাকা থেকে দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। সার্বক্ষণিক টহল দিলেও রাস্তার অভাবে বিজিবির সদস্যদের সীমান্ত এলাকায় পাহারা দিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাতে বাংলাদেশি সীমান্ত এলাকায় কোনো আলোর ব্যবস্থা না থাকায় যোগাযোগব্যবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারিদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। তারপরও রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে আসা অনেক গরু জব্দ করা হয়।