ফেরির অপেক্ষায় ৪ হাজার গাড়ি

Slider জাতীয় টপ নিউজ ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ

4a9521c7920eadebcb32e91959e82601-manikgonj

ঢাকা: ১৭ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে বারবার বাস থেকে নেমে যাচ্ছিলেন আলী আহাম্মদ (৩৫)। ১২ বছর বয়সী বড় ছেলেটিও বাবার সঙ্গে বাস থেকে নেমে যাচ্ছিল। ছেলেদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন আলী আহাম্মদ  বললেন, ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহনে করে স্ত্রী ও দুই শিশুপুত্র নিয়ে তিনি ফরিদপুর যাচ্ছেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদরে তাঁর বাড়ি। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনের জন্য বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু পথের ভোগান্তির কারণে দিশেহারা। প্রচণ্ড গরমে ছোট ছেলে কান্নাকাটি করছে। ছেলের কান্না থামাতে তিনি বারবার বাস থেকে নেমে আসছেন। বললেন, নবগ্রাম থেকে আরসিএল মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার আসতে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। এখন ফেরির জন্য অপেক্ষা করছেন।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া ঘাটসংলগ্ন এলাকায় এমন দুর্ভোগের শিকার হতে দেখা গেল হাজারো যাত্রীকে। ফেরি পারের জন্য সেখানে অপেক্ষা করছে প্রায় চার হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি ও আড়াই শতাধিক বাস। প্রচণ্ড গরমে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত অনেকে রাস্তার পাশেই পরিবার নিয়ে বসে আছেন। কেউ কেউ সড়কের পাশে থাকা বাড়িগুলোতে ঢুকে পড়ছেন প্রাকৃতিক কাজে। বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তি, নারী ও শিশুরা। আশপাশে কোনো খাবারের হোটেল না থাকায় দুপুরের খাবারও খেতে পারছেন না বেশির ভাগ যাত্রী।

বেলা সোয়া দুইটায় পাটুরিয়া ঘাট ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাটুরিয়া ৪ নম্বর ঘাটে ফেরিতে পার হওয়ার জন্য আড়াই শতাধিক যাত্রীবাহী বাস রাস্তার পাশে আটকে আছে। ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় যাঁরা ভাড়া গাড়ি, মাইক্রোবাস বা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে এসেছেন, তাঁদের জন্য ৫ নম্বর ঘাট দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওই ঘাট ঘিরে আশপাশের সড়কগুলোতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছে প্রায় চার হাজার গাড়ি। পাটুরিয়ার জিরো পয়েন্ট থেকে নবগ্রাম এলাকা পর্যন্ত তিন কিলোমিটারব্যাপী প্রায় দুই হাজার গাড়ি রাস্তার এক পাশে আটকে আছে। এর মধ্যে পাটুরিয়া-উথলি সংযোগ সড়কের আরসিএল মোড় থেকে ৫ নম্বর ঘাট পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা করছে। আরও এক হাজার গাড়ি আটকে আছে সংযোগ সড়কের নবগ্রাম-সইদাবাদ-নালী এলাকায়। এ ছাড়া ৫ নম্বর ঘাট থেকে নালী-তেপরা সড়কের কয়ড়া এলাকা পর্যন্ত চার কিলোমিটারব্যাপী প্রায় দুই হাজার গাড়ির রাস্তার এক পাশে আটকে আছে। এর বাইরে পণ্যবাহী প্রায় ৩০০ ট্রাক ফেরি পার হতে না পেরে পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালে থেমে আছে।

ঢাকা থেকে ইকবাল হাসান (৩২) নামের এক ব্যবসায়ী স্ত্রী ও সাত বছর বয়সী ছেলে নিয়ে মাগুরা শহরে নিজ বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন। জানালেন, শুকনা খাবার সঙ্গে এনেছিলেন। কিন্তু ছেলে দুপুরে ভাত খেতে চাইছে। এখন আশপাশে হোটেল না থাকায় তিনি ছেলের জন্য কিছু কিনতেও পারছেন না।

ইকবাল হাসানের মতো আরও অনেককে একই সমস্যায় পড়তে দেখা যায়। কয়েক শিশুকে মায়ের কোলে বসে বোতলে করে দুধ খেতেও দেখা যায়।

ঘাটসংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহিউদ্দিন রাসেল  বলেন, ৫ নম্বর ঘাট দিয়ে শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এরপরও এলাকাজুড়ে অপেক্ষমাণ গাড়ির তীব্র জট সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটসংলগ্ন আশপাশে প্রায় চার হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তার পাশে ফেরি পারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, দৌলতদিয়ার চারটি ঘাট একই সঙ্গে চালু না থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত ও ভাঙনের কারণে দৌলতদিয়ায় চারটি ঘাটের মধ্যে শুধু ১ ও ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে গাড়ি পার হচ্ছে। ৩ নম্বর ঘাটটি আংশিকভাবে চলছিল। কিন্তু আজ সকাল ১০টার দিকে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ২ নম্বর ঘাটটিতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি ভিড়তে পারছে না। এ ছাড়া ঘাটগুলোতে স্রোতের কারণে ফেরি ভিড়তেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। তিনি জানান, এখন ১৮টি ফেরির মধ্যে ১৫টি ফেরি সচল আছে।

এদিকে ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটসংকটের বিভিন্ন তথ্য গণমাধ্যমে চলে আসায় অনেক যাত্রী বাস বা গাড়িতে করে ফেরি পারের জন্য অপেক্ষা না করে বিকল্প পন্থা নিয়েছেন। তাঁরা ঘাট পর্যন্ত একটি বাসে এসে নেমে পড়ছেন। এরপর নিজেরাই ফেরিতে উঠে অপর পাশে গিয়ে আরেকটি বাস ধরে তুলনামূলক কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

মানিকগঞ্জ জেলার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) আনোয়ার হোসেন  বলেছেন, বাস ও গাড়ি যাতে সুশৃঙ্খলভাবে ফেরি পার হতে পারে, সেটা তারা তদারকি করছেন।
এদিকে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে ঘাটের ব্যবস্থাপনা তদারকি করতে দেখা যায়। সেখানে সাদাপোশাকেও নিয়োজিত ছিল অনেক পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *