সন্দ্বীপ: রবিবার সন্দ্বীপের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে এমভি বর্ষণ-৩ নামের লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনায় ১২ জন নাবিক নিখোঁজ হন। সোমবার সকালে সন্দ্বীপ উপকূল থেকে ১১ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও বাকী একজন এখন নিখোঁজ রয়েছেন।
নিখোঁজ নাবিকের নাম মো. নুর নবী (৪৫)। তার বাড়ী ফেনী বলে জানা গেছে। লাইটার জাহাজটি শুক্রবার বিকালে সিমেন্ট ক্যামিকেল নিয়ে খুলনা ৪ নং ঘাট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। দুর্ঘটনায় উদ্ধার হওয়া নাবিকরা হচ্ছেন- মোঃ মনিরুজ্জামান (৩৫), পিতা- মোঃ আলী, আজগর,পানাইল, ফরিদপুর, ইসমাইল (৩৪), পিতা- আব্দুল আলিম মৃধা, মাজড়া, গোপালগঞ্জ, ইয়াকুব খান (২৪), পিতা- মোহম্মদ খান, সূখদেবনগর, ফরিদপুর, মোঃ রমজান আলী (২৩), পিতা- মোঃ জহুর মুন্সি, সুখদেববনগর, গোপালগঞ্জ, মোঃ মিজানুর রহমান (৩০), পিতা- ইদ্রিস হাওলাদার, ছোটদলী, ভোলা, মোঃ ইসমাইল (২৪), পিতা- আমান উল্যাহ, পূর্ব মোক্তারফুল, মুন্সিগঞ্জ, হাসান শেখ (২৫), পিতা- কবির শেখ, সূখদেবপুর, ফরিদপুর, ইমরান হোসাইন (২৫), পিতা- মৃত কারী আঃ ছাত্তার, উত্তর কলাদনিয়া,ফিরোজপুর, মোঃ অপু (২০), পিতা- জহুর বালা, দেলাপড়া, নারায়নগঞ্জ, মোঃ রাজু আহমেদ (২০), পিতা- অহিদুল ইসলাম, আমাদা, নড়াইল, মোঃ মাসুদ শেখ (২৬), পিতা- হাবিবুর রহমান শেখ, হিরণ, গোপালগঞ্জ।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল ৫টায় খুলনা ৪ নং ঘাট থেকে ৮৫৬ টন ফ্লাই এ্যাশ (সিমেন্ট ক্যামিকেল) নিয়ে এম.ভি বর্ষন-৩, নামের একটি লাইটার জাহাজ চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সন্দ্বীপ থেকে প্রায় ১৫ নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরে পৌছলে বৈরী আবহাওয়ার মুখে পরে। প্রচন্ড বাতাস ও ঢেউয়ের জাহাজটির ডান পাশের বডি ফেটে পানি ঢুকতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে মালামাল ভর্তি জাহাজটি কাত হয়ে যায়।
অজানা আতংকে এ সময় নাবিকরা হৈ চৈ শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে জাহাজের মাস্টার কোম্পানী ও চট্টগ্রাম লাইটারের শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের কাছে মোবাইলে ফোন করে তাদের উদ্ধারের জন্য আকুতি জানায়। বাঁচার জন্য ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে জাহাজের ডেকে আশ্রয় নেয়। এ সময় সাগরে ভাটা ছিল। কিন্তু ঘন্টা খানেক পর জোয়ার এলে জাহাজটির সম্পূর্ণ অংশ পানিতে ডুবে যায়। এমতাবস্থায় নাবিকরা সবাই লাইফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে ঝাঁপ দেয়। সারা রাত তারা সাগরে একে অপরের কাছাকাছি ভাসতে থাকেন।
সকারে সন্দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে ভাসমান অবস্থায় কোস্টগার্ড, নৌবাহিনীর টহল দল এবং জেলেদের মাধ্যমে কয়েকজনকে বিক্ষিপ্তভাবে উদ্ধার করা হয়। আবার কেউ কেউ নিজেরা ভেসে কূলের দেখা পান। তারা চট্টগ্রাম লাইটার শ্রমিক এসোসিয়েশনে ফোন করে বিক্ষিপ্তভাবে উদ্ধার হওয়ার খবর জানালে পরে একজন ছাড়া সকলে উদ্ধার হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হন। পরে মগধরা এসোসিয়েশনের এক সদস্যের বাড়ীতে সবাই আশ্রয় নেন। জাহাজের মাস্টার মনিরুজ্জামান জানান, আমরা সারা রাত সাগরে ভেসে কিভাবে উদ্ধার হয়েছি সে কথা গুছিয়ে বলতে পারব না। তবে ভাসার সময় জোয়ার না পেলে হয়ত কূলের দেখা পেতাম না। কারণ ভাটা থাকলে আমরা স্রোতের টানে অকূল সাগরে চলে যেতাম। সন্দ্বীপ থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) বিজন বড়–য়া খবর পেয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। উদ্ধার হওয়া নাবিকরা মোটামুটি সুস্থ আছেন।