স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কাশিমপুর কারাগার ফটক থেকে: জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগারে রাত সাড়ে ১০ টায় তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়ায় জল্লাদ দ্বীন ইসলাম, শাহজাহান, রিপন ও শাহীন অংশ নেন। মীর কাসেম আলী ষষ্ঠ ব্যক্তি মানবতাবিরোধী অপরাধে যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো। এর আগে পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তাদের মধ্যে চার জনই জামায়াতের শীর্ষ নেতা। এর আগে যে ৫ জনের দন্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তবে ওই কারাগার খালি করে ইতোমধ্যে বন্দিদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে। ফাঁসি কার্যকরের পর রাতে কারাগারের আনুষ্ঠানিকতা মীর কাসেমের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা বাজারে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। রাতে মীর কাসেম আলীর স্বজনরা লাশ দাফনের জন্য ছয়টি মাইক্রোবাসে করে সেখানে যান।
রাত পৌনে ১১টার দিকে কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, রাত সাড়ে ১০টায় মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তার লাশ মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে নিয়ে দাফন করা হবে। ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সন্ধ্যার পর কাশিমপুর কারাগারে যান কারা মহাপরিদর্শক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন। কারাগারের ভেতরে নেয়া হয় তিনটি অ্যাম্বুলেন্স। ফাঁসি কার্যকরের পর কারাগারের বাইরে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা উল্লাস প্রকাশ করেন। এদিকে ফাঁসি কার্যকরে শাহবাগে অবস্থান নেয়া গণজাগরণ মঞ্চও উল্লাস প্রকাশ করে।
ফাঁসি কার্যকরকে ঘিরে শনিবার বিকাল থেকে কাশিমপুর কারাগারের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঢাকা এবং গাজীপুরে মোতায়েন করা হয় বিজিবি। এর আগে কারাগারে এসে পৌঁছায় মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের নির্বাহি আদেশ। মীর কাসেম আলীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের জন্য পরিবারে ৪২ সদস্য বিকালে কাশিমপুর কারাগারে যান।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে। আর ২০১৫ সালের ১১ই এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় একই দিনে গত বছরের ২১শে নভেম্বর। সর্বশেষ জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের ছয় দিনের মাথায় গত ১১ই মে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়।
মীর কাসেম আলীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের জন্য পরিবারের ৪২ সদস্য গতকাল বিকালে কাশিমপুর কারাগারে যান। বেলা তিনটা ৩৮ মিনিটে ছয়টি মাইক্রোবাসে করে কাসেম আলীর স্ত্রী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী, তাদের শিশু সন্তান ও স্বজনসহ ৪২ জন কাশিমপুর কারাগারে উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে সাক্ষাতের জন্য অনুমতি দেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেন, আমরা উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছি। উনি মৃত্যু ভয়ে ভীত নন। তিনি বলেছেন, এ মৃত্যু শহীদী মৃত্যু। যারা তাকে ফাঁসিতে ঝুলাচ্ছে তাদের পরাজয় হবে, এদেশে একদিন ইসলাম বিজয়ী হবে। মীর কাসেমের শেষ ইচ্ছার বিষয়ে তিনি বলেন, শেষ সময়ে তিনি ছেলেকে দেখে যেতে পারেননি। এটি তার আক্ষেপ। ছেলেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ধরে নেয়ার পর সন্ধান পাচ্ছি না। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে মীর কাসেমকে দাফন করা হবে। তার ভাই সেখানে জমি কিনে রেখেছেন। কারাসূত্র জানায় সাক্ষাতের সময় পরিবারের স্বজনদের ধাপে ধাপে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়া হয়। শেষ ধাপে স্ত্রী, দুই মেয়ে, ছেলের স্ত্রী ও তাদের সন্তানরা সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়। শনিবার সকাল থেকেই নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে কারাগার পর্যন্ত কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের সড়কে এবং আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, শুধু কাশিমপুর এলাকা নয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরো গাজীপুর জেলায় নেয়া হয়েছে। এ জন্য টঙ্গী, স্টেশন রোড, বোর্ডবাজার, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা, গাজীপুর শহর, রাজেন্দ্রপুর, কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এসব এলাকায় সর্বাত্মক সতর্কতা বজায় রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। বেলা ২টার দিকে র্যাব ও কারারক্ষীরা মূল ফটকের সামনে সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান নেন। কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশের প্রধান সড়কের সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কারাগারের মূল ফটক থেকে ১০০ গজ দূরে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য স্থান করে দেয়া হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার নাশির আহমেদ বলেন, শনিবার দুপুরের পর সরকারের আদেশ আমাদের হাতে এসে পৌঁছে। ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে কারাগারের আশপাশসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিজিবির সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার করেছে। তারা শনিবার সন্ধ্যা থেকে কার্যক্রম শুরু করেন। জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে এই খবরে কাশিমপুর কারাগারের সামনে ও রাস্তায় উৎসুক মানুষ ভিড় করেন বিকাল থেকেই। শনিবার দুপুরের পর কারাগারের সামনের রাস্তায় লোকজনের বেশ উপস্থিতি দেখা যায়। জায়গায় জায়গায় চোখে পড়ে মানুষের জটলা। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এই সড়কে সব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্ধ্যার পর সেখানে জেলার মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মামলার ধারাবাহিকতা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতা মীর কাসেম আলীর করা রিভিউ (দ- পুনর্বিবেচনা) আবেদন ৩০শে আগস্ট খারিজ করে রায় দেয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর চার সদস্য ছিলেনÑ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশের ফলে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল থাকার পাশাপাশি এই মামলার আইনি লড়াইও শেষ হয়। গত ৮ই মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় দেন। ৬ই জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পরে রায়ের কপি ওই দিন বিকালে বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গেলে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ৭ই জুন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মীর কাসেমকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনানো হয়। ১৯শে জুন রায়ের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের মাধ্যমে রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম। ৮৬ পৃষ্ঠার আবেদনে দ- থেকে খালাস চেয়ে ১৪টি গ্রাউন্ড (যুক্তি) উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। গত ২৫শে জুলাই রিভিউর শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৪শে আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। ওই দিন (২৪শে আগস্ট) মীর কাসেম আলীর আইনজীবীরা শুনানি পেছাতে আবারও সময়ের আবেদন করেন। আবেদন নাকচ করে রিভিউ শুনানি শুরুর আদেশ দেয় আপিল বেঞ্চ। পরে মীর কাসেমের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি শুরু করেন। ওই দিন আংশিক শুনানি শেষ হলে ২৮শে আগস্ট (রোববার) পর্যন্ত তা মুলতবি করেন আদালত। ওই দিন রিভিউ আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৩০শে আগস্ট (মঙ্গলবার) রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
ফাঁসি কার্যকরকে ঘিরে শনিবার বিকাল থেকে কাশিমপুর কারাগারের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঢাকা এবং গাজীপুরে মোতায়েন করা হয় বিজিবি। এর আগে কারাগারে এসে পৌঁছায় মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের নির্বাহি আদেশ। মীর কাসেম আলীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের জন্য পরিবারে ৪২ সদস্য বিকালে কাশিমপুর কারাগারে যান।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে। আর ২০১৫ সালের ১১ই এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় একই দিনে গত বছরের ২১শে নভেম্বর। সর্বশেষ জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের ছয় দিনের মাথায় গত ১১ই মে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়।
মীর কাসেম আলীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের জন্য পরিবারের ৪২ সদস্য গতকাল বিকালে কাশিমপুর কারাগারে যান। বেলা তিনটা ৩৮ মিনিটে ছয়টি মাইক্রোবাসে করে কাসেম আলীর স্ত্রী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী, তাদের শিশু সন্তান ও স্বজনসহ ৪২ জন কাশিমপুর কারাগারে উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে সাক্ষাতের জন্য অনুমতি দেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেন, আমরা উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছি। উনি মৃত্যু ভয়ে ভীত নন। তিনি বলেছেন, এ মৃত্যু শহীদী মৃত্যু। যারা তাকে ফাঁসিতে ঝুলাচ্ছে তাদের পরাজয় হবে, এদেশে একদিন ইসলাম বিজয়ী হবে। মীর কাসেমের শেষ ইচ্ছার বিষয়ে তিনি বলেন, শেষ সময়ে তিনি ছেলেকে দেখে যেতে পারেননি। এটি তার আক্ষেপ। ছেলেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ধরে নেয়ার পর সন্ধান পাচ্ছি না। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে মীর কাসেমকে দাফন করা হবে। তার ভাই সেখানে জমি কিনে রেখেছেন। কারাসূত্র জানায় সাক্ষাতের সময় পরিবারের স্বজনদের ধাপে ধাপে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়া হয়। শেষ ধাপে স্ত্রী, দুই মেয়ে, ছেলের স্ত্রী ও তাদের সন্তানরা সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়। শনিবার সকাল থেকেই নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে কারাগার পর্যন্ত কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের সড়কে এবং আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, শুধু কাশিমপুর এলাকা নয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরো গাজীপুর জেলায় নেয়া হয়েছে। এ জন্য টঙ্গী, স্টেশন রোড, বোর্ডবাজার, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা, গাজীপুর শহর, রাজেন্দ্রপুর, কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এসব এলাকায় সর্বাত্মক সতর্কতা বজায় রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। বেলা ২টার দিকে র্যাব ও কারারক্ষীরা মূল ফটকের সামনে সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান নেন। কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশের প্রধান সড়কের সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কারাগারের মূল ফটক থেকে ১০০ গজ দূরে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য স্থান করে দেয়া হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার নাশির আহমেদ বলেন, শনিবার দুপুরের পর সরকারের আদেশ আমাদের হাতে এসে পৌঁছে। ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে কারাগারের আশপাশসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিজিবির সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল জোরদার করেছে। তারা শনিবার সন্ধ্যা থেকে কার্যক্রম শুরু করেন। জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হবে এই খবরে কাশিমপুর কারাগারের সামনে ও রাস্তায় উৎসুক মানুষ ভিড় করেন বিকাল থেকেই। শনিবার দুপুরের পর কারাগারের সামনের রাস্তায় লোকজনের বেশ উপস্থিতি দেখা যায়। জায়গায় জায়গায় চোখে পড়ে মানুষের জটলা। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এই সড়কে সব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্ধ্যার পর সেখানে জেলার মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মামলার ধারাবাহিকতা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের শীর্ষ নেতা মীর কাসেম আলীর করা রিভিউ (দ- পুনর্বিবেচনা) আবেদন ৩০শে আগস্ট খারিজ করে রায় দেয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। বেঞ্চের অপর চার সদস্য ছিলেনÑ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান। সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশের ফলে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল থাকার পাশাপাশি এই মামলার আইনি লড়াইও শেষ হয়। গত ৮ই মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় দেন। ৬ই জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পরে রায়ের কপি ওই দিন বিকালে বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গেলে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ৭ই জুন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মীর কাসেমকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনানো হয়। ১৯শে জুন রায়ের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের মাধ্যমে রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম। ৮৬ পৃষ্ঠার আবেদনে দ- থেকে খালাস চেয়ে ১৪টি গ্রাউন্ড (যুক্তি) উপস্থাপন করেন তার আইনজীবীরা। গত ২৫শে জুলাই রিভিউর শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৪শে আগস্ট শুনানির দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। ওই দিন (২৪শে আগস্ট) মীর কাসেম আলীর আইনজীবীরা শুনানি পেছাতে আবারও সময়ের আবেদন করেন। আবেদন নাকচ করে রিভিউ শুনানি শুরুর আদেশ দেয় আপিল বেঞ্চ। পরে মীর কাসেমের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি শুরু করেন। ওই দিন আংশিক শুনানি শেষ হলে ২৮শে আগস্ট (রোববার) পর্যন্ত তা মুলতবি করেন আদালত। ওই দিন রিভিউ আবেদনের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৩০শে আগস্ট (মঙ্গলবার) রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।