স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কাশিমপুর কারাগার ফটক থেকে; রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না বলে জানিয়েছেন যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলী। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের (পার্ট-২ ) তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) প্রশান্ত কুমার বণিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিয়মানুযায়ী এখন তাঁর ফাঁসি কার্যকর করতে আর কোনো আইনি বাধা থাকল না। ফলে এখন চলছে ফাঁসির প্রস্তুতি। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ইতোপূর্বে শীর্ষ জঙ্গী নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কোন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি এই কারাগারে এটাই প্রথম
প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না বলে আমাদের জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে জেল কর্তৃপক্ষ মীর কাসেম আলীর কাছে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রাণভিক্ষার না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মীর কাসেম আলীর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া বলেন, ‘নিখোঁজ’ ছেলেকে ছাড়া তিনি (মীর কাসেম আলী) রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না—এটা আগেই বলেছিলেন। এখন আমরা জেনেছি যে, উনি প্রাণভিক্ষার আবেদন না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
৩০ আগস্ট মীর কাসেমের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রিভিউ আবেদন খারিজের তিন দিনের মাথায় মীর কাসেম জানালেন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন না।
মীর কাসেম আলীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুটি অভিযোগে মীর কাসেমের ফাঁসি ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। চলতি বছরের ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। অন্য ছয়টি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে তাঁর কারাদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম। তাঁর আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়। মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের ওপর গত ২৮ আগস্ট শুনানি শেষ হয়। এরপর ৩০ আগস্ট মীর কাসেমের করা আবেদন খারিজ করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
মীর কাসেমের আইনি লড়াইয়ে রিভিউ আবেদনই ছিল শেষ ধাপ। এই আবেদন খারিজ হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার পথ শুধু খোলা ছিল। তবে শুরুতে মীর কাসেম জানিয়েছিলেন, ‘নিখোঁজ’ ছেলের সিদ্ধান্ত ছাড়া তিনি এ বিষয়ে কোনো মতামত দেবেন না। মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন দাবি করেছিলেন, সাদাপোশাকধারী লোকজন তাঁদের ছেলে ব্যারিস্টার আহম্মেদ বিন কাসেমকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। সেই ছেলে তাঁর বাবার আইনজীবীও। পারিবারিক যেকোনো পরামর্শের জন্য তাঁকে প্রয়োজন। ছেলেকে ছাড়া তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না তাঁর স্বামী। পরিবারও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।