ঢাকা: আদালত অবমাননার রায়ে সর্বোচ্চ আদালত দুই মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হকের ‘শপথ ভঙ্গ হয়েছে’ উল্লেখ করায় তাদের আর পদে থাকার অধিকার নেই বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর শাহদীন মালিক বলেন, যারা সরকারের কোনো কর্মে নিয়োজিত তাদের যদি জরিমানা বা জেল হয়, তাহলে পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই বিধান অনুসারে তাদের পদচ্যুত হওয়ার কথা।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মতামত জানতে চাইলে তাদের কেউ কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। কেউবা বিষয়টি শাস্তিপ্রাপ্ত দুই মন্ত্রীর উপরই ছেড়ে দিয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায়ের আগে সর্বোচ্চ আদালতকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য দুই মন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগ গত ২৭ মার্চ তাদের শাস্তি দিয়ে রায় দেয়। সেই রায় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, “সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন রক্ষার যে শপথ বিবাদীরা নিয়েছেন, সেই দায়িত্বের প্রতি তারা অবহেলা করেছেন। তারা আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।”
গত মার্চ মাসে রায়ের পরপরই বিএনপি মন্ত্রী কামরুল ও মোজাম্মেলের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর শাহদীন মালিক বলেন, যারা সরকারের কোনো কর্মে নিয়োজিত তাদের যদি জরিমানা বা জেল হয়, তাহলে পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই বিধান অনুসারে তাদের পদচ্যুত হওয়ার কথা।
“এখন কেউ যদি আইনের তোয়াক্কা না করেন, সেটা ভিন্ন কথা। শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার রায়ে বলা হয়েছে, শপথ ভঙ্গ করেছেন। শপথ ভঙ্গ করার পরে সাংবিধানিক কোনো পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তির এক মুহূর্ত পদে থাকার নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার নেই।”
এজন্য তাদের মন্ত্রিত্ব হারানোর বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্ট নেই বলে অনেকের মন্তব্য এসেছে।
এই বিষয়ে শাহদীন মালিক বলেন, “সংবিধানের কোনো বিধান লঙ্ঘন হলে সেটার সাজা সংবিধানে বলে দেওয়া নাই।
সংবিধান অপরাধীদের আইন না। তবে ধারণাটা হল, কেউ যদি কখনও সংবিধানের পদে থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করে, তাহলে নৈতিকতা ও আইনের ভার মাথায় নিয়ে এই মুহূর্তে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া উচিৎ।
“আমাদের দুর্ভাগ্য, এখানে যারা এই ধরনের পদে থাকেন, তারা আইনের তোয়াক্কা করেন না, সংবিধানের তোয়াক্কা করেন না। শেষদিন পর্যন্ত পদে বসে থাকেন।”
মার্চের রায়ের পর নিশ্চুপ ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরও তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কামরুল এর আগে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
তাদের নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন ও সংবিধানে এ ব্যাপারে ওইভাবে কিছু বলা হয়নি। এটা জনমতের ওপর নির্ভর করে। তারা থাকতে পারবে কি না, জানতে হলে জনমত যাচাই করেন।
এই দুই মন্ত্রীর এখন পদে থাকা উচিৎ বলে মনে কেরন কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি বলব না। রাষ্ট্রে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এম আমীর-উল ইসলামও।
এই রায়ের ফলে এই দুই মন্ত্রী তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী এম কে রহমান বলেন, “এই রায়ের মূল বিষয় হচ্ছে, দুই মন্ত্রী গুরুতর আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। শপথ ভঙ্গের বিষয়টি এই মামলার বিবেচ্য বিষয় ছিল না।
“তারপরও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে একটা ফাইন্ডিংস এসেছে। কিন্তু তারা মন্ত্রী থাকতে পারবেন কি না, এমন কিছু বলা হয়নি। এটা তাদের সুবিবেচনা ও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।”
গত ২৭ জুলাই রায়ের পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছেন, সরকারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিষয়টা ‘নৈতিকতার’।
বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি অ্যাটর্নি জেনারেলও।
দুই মন্ত্রীর পদে থাকা উচিৎ কি না- এ প্রশ্নে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন এটা তারা বলবে। তারা শপথ নিয়েছেন, আরও একধাপ এগিয়ে পরিষ্কার করতে হয় তাদেরকেই করতে হবে।”
এ বিষয়ে সরকারই বলতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রবীণ এই সংসদ সদস্য।
পূর্ণাঙ্গ এই রায় প্রকাশের পর সরকারের কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
মার্চে রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, “এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত বিবেচনার ব্যাপার।”
তার মতোই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “নৈতিকতার ব্যাপারটা যার যার নিজের ব্যাপার। সেটা আমাদের কিছু বলার নাই।”
সূত্র; বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম