আইজিপির সমাবেশের কারণে এক কিঃমিঃ হেঁটে গেলেন শতবর্ষি ফজিলা খাতুন

Slider নারী ও শিশু বাংলার মুখোমুখি বিচিত্র সারাদেশ

14137715_1667943250189120_900665230_n

 

 

 

 

 

 

 

 

গাজীপুর অফিস: জেলা শহরের রাজবাড়ি মাঠে আজ হয়ে গেলে স্বরণ কালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী এই মহাসমাবেশের কারণে জেলার জিরো পয়েন্টে আসার সকল প্রবেশ পথ ছিল বন্ধ। ফলে চলমান পিএসপির মডেল টেষ্ট পরীক্ষার প্রায় দুই হাজার শিশু, তাদের অভিভাবক এবং জরুরী কাজের লোকজনকে প্রায় এক কিঃ মিঃ করে হেঁটে যেতে হয়েছে। তাদের মধ্যে হেঁটে গেলেন একশ বছর বয়সী নারী ফজিলা খাতুনও।

সরেজমিন জানা যায়, শনিবার বেলা ২টা। জনসভাস্থলের দক্ষিন পাশের রাস্তা দিয়ে রিক্সায় করে ষ্টেশন এলাকায় ডাক্তারের নিকট যাচ্ছিলেন ফজিলা খাতুন(১০১)। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কামারিয়া গ্রামে। বেলা ২টায় তার এক নিকটাত্মীয়, সাথে এক মহিলা দিয়ে  ফজিলা খাতুনকে  গাজীপুর জেলা শহরের জয়দেবপুর ষ্টেশন সংলগ্ন একজন ডাক্তারের নিকট পাঠান চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসাপত্র ফ্রি হওয়ায় ওই আত্মীয় রিক্সাওয়ালার নিকট যাওয়া আসার  ভাড়াও দিয়ে দেন। রাস্তায় রথখোলা এলাকা সংলগ্ন রাজবাড়ি মাঠে আইজিপির সমাবেশ হওয়ায় পুলিশ সকল রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ফলে  রিক্সা থেকে ফজিলা খাতুনকে নামিয়ে দেয় পুলিশ। পরে ফজিলা খাতুনের সঙ্গে টাকা না থাকায় তিনি আর রিক্সার ব্যবস্থাও করতে পারেননি। আর করলেও লাভ হত না। কারণ তখন রিক্সা চলাচল বন্ধ  ছিল। এরপর কোন উপায় না দেখে সাথে থাকা মহিলার কাঁধে ভর করে রথখোলা থেকে রেলষ্টেশন রওনা দেন শতবর্ষি ফজিলা খাতুন। ডাক্তার দেখানো ও পরে জোরপুকুর পাড় পর্যন্ত হাঁটতে গিয়ে প্রায় এক কিঃমিঃ এর বেশী হাঁটতে হয়  ওই প্রবীন  নারীকে।

এদিকে বেলা ১টায় জোরপুকুর পাড় এলাকায় (বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত পিএসসি পরীক্ষা) প্রশ্নপত্রবাহী একটি মোটারসাইকেল আটক করে পুলিশ। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের কথা বললেও কিছু টাকা দিয়ে মুক্তি পেতে হয় জনৈক শিক্ষককে।

এদিকে শনিবার প্রাথমিক সমাপনীর মডেল টেষ্ট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে গাজীপুর শহরের কেন্দ্রস্থল দিয়ে তিনটি কেন্দ্রের প্রায় দুই হাজার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ও অভিভাবকদের যাতায়াত করতে হয়েছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় তারা পাঁয়ে হেঁটেই যাতায়াত করেছেন। একই সঙ্গে হেঁটেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই সমাবেশ। প্রায় ৫০ হাজার লোকের আয়োজন ছিল জেলা পুলিশের। ৩০ হাজারের উপরে লোকও হয়েছে। জনসভায় অংশ গ্রহনকারী প্রত্যেকে দুপুরের খাবার হিসেবে পেয়েছেন পোলাও, মোরগীর  রোষ্ট, ডিম ও কোমল পানীয়। এই সমাবেশে জেলার প্রত্যেক উপজেলা থেকে পুলিশের নেতৃত্বে বাসা যোগে যোগদান করেছেন হাজার হাজার মানুষ। স্কুল, কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সহ আওয়ামীলীলী অংগ ও সহযোগী সংঠনের হাজারো নেতা কর্মী যোগ হয়েছেন সভাস্থলে।

পুলিশের একটি সূত্র ও আওয়ামীলীগের দলীয় সূত্র জানায়, এই সমাবেশের দিন মন্ত্রী.এমপি ও বড় রাজনৈতিক নেতারা গাজীপুর মহানগরে একই সময় আরো ১৪টি সমাবেশ করেছে। ওই সকল সমাবেশ জেলা পুলিশের সমাবেশকে বিফল করতে দেয়া হয়েছিল বলেও মন্তব্য পুলিশের। তবে ওই সমাবেশগুলো পুলিশের সমাবেশকে বিফল করতে পারেনি বলে দাবি করেছে পুলিশ।

সচেতন মানুষ মনে করে,  গাজীপুর জেলার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল সমাবেশ। সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই ধরণের সমাবেশ হলে আরো ভাল হত। এ ছাড়া যে কোন শুক্রবার দিনে (পরীক্ষার দিনগুলো বিবেচনা করে) ও জরুরী সেবাসমূহে ব্যাঘাত না করেও করা যেত। তবে ভাল মন্দ যাই হউক ,গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ হারুন অর রশীদ রাজনীতিবিদদের দেখিয়ে দিয়েছেন সমাবেশ কাকে বলে এই ধরণের মন্তব্যই করেছেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *