কুষ্টিয়া: পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ সেতু এলাকায় পানি বাড়ছে। দৌলতদিয়া উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার একটি গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পদ্মার ভাঙনে ১৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হক আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, ‘যে গতিতে পানি বাড়ছে, এতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।’ তিনি বলেন, ভারতের বিহার রাজ্যে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। ভারত তাদের ফারাক্কা বাঁধের দরজা খুলে দিয়েছে। এসব কারণে পদ্মায় পানি বেড়ে যাচ্ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীতে পানির বিপৎসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সেখানে আজ সন্ধা ছয়টার দিকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ০৯ সেন্টিমিটার। পানি বিপৎসীমা থেকে মাত্র পয়েন্ট ১৬ সেন্টিমিটার দূরে।
পাউবোর পানি পরিমাপকাজে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি তিন ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৮ আগস্ট পদ্মায় পানির মাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। ১৯ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। ২৫ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদেও অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে।
পাউবো বলছে, পদ্মা নদী ও গড়াই নদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও বাঁধগুলোতে নজর রাখা হচ্ছে।
দৌলতদিয়া উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ আজ বেলা আড়াইটার দিকে জানান, তিন–চার দিন ধরে অব্যাহতভাবে পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের ১৮ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব মানুষ। সাম্প্রতিকসময়ে বন্যায় এত ক্ষতি হয়নি।
বাজুমারা গ্রামের আতাউল হক বলেন, নলকূপ ডুবে যাওয়ায় পান করার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের আরেক বাসিন্দা মান্নান ব্যাপারী বলেন, নৌকায় করে গ্রামবাসীকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এদিকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর গ্রামে গতকাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর ভাঙনে ১৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ নিয়ে গত ২০ দিনের ভাঙনে গ্রামটির প্রায় ৬০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে ভাঙনকবলিত এলাকায় যান জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে গ্রামবাসীকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা ও পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাদেরের ভাষ্য, সেখানকার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো ভাঙছে। পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নদীর তীর থেকে মানুষকে সরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, ভাঙন রোধে এই মুহূর্তে কোনো প্রকল্প তাঁদের কার্যালয়ে নেই। কয়েকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। সেগুলো অনুমোদন হলে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
সকালে কলমিরচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটিতে প্রায় ৮০০ পরিবারের বসবাস। ২০ দিনে ৬০০ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে গৃহহীন হয়েছে।
নদী ভাঙতে ভাঙতে কলমিরচর গ্রামের বাসিন্দা কুলছুম বেগমের বাড়ির উঠানে চলে এসেছে। তিনি বলেন, ‘বাড়িটুকু ছাড়া আমার আর কিছু নেই। মানুষের অভাবে বসতঘরটি সরাতে পারছি না।’