ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিএনপির শুভাকাঙক্ষী হিসেবে পরিচিত এ মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন হাজার শব্দের খোলা চিঠিতে ভুল সিদ্ধান্তের সমালোচনা, দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো, উপদেষ্টা পরিষদে বিশিষ্ট জনদের কো-অপ্ট করা, পরিবারতন্ত্র, জামায়াতের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে করণীয়সহ তার পরামর্শ তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ১৫ই আগস্ট শোক দিবসে কেক কেটে জন্মদিন পালন না করায় তার প্রশংসাও করেন। তিনি খালেদা জিয়াকে ৯ মাস সময় সীমা বেঁধে দিয়ে বলেন, তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিশ্রম করলে রায় তার পক্ষে যেতে পারে। ড. কামাল হোসেনের দলসহ কয়েকটি দলকে নিয়ে একসঙ্গে জনসভার ঘোষণা দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, ‘২০ দলের বাইরের বিরোধী দলসমূহকে একত্র করে বাংলাদেশে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সুসংহত করার জন্য আপনার হাতে সময় আছে বড় জোর নয় মাস। সম্ভবত এই সময়ের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় রাজনীতির আলোকে বিচারের রায় বেরুবে। এই কয়েক মাস পরিশ্রম করলে জনগণের রায় আপনার পক্ষে আসার সম্ভাবনা সমধিক।’ তারেক রহমানের সাজার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘এটা কি সুষ্ঠু বিচারের রায় না রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? এর ফয়সালা ছাত্রদলের ২০-৩০ জনের মিছিলে হবে না, এতে কেবল আপনাদের শক্তির অপচয় এবং ভুল কাজ। ফয়সালা হবে মূলত সুষ্ঠু গণতন্ত্রের আন্দোলনে এবং উচ্চ আদালতে।’
খালেদা জিয়াকে আরো সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ভবিষ্যৎ আন্দোলনের স্বার্থে নিয়মিত ভাবে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আপনার বাড়িতে তৃণমূল কর্মীদের সাক্ষাৎ দিন। কর্মীদের দেখভাল করার জন্য একজন ৫০ অনূর্ধ্ব উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতির ভাষা ও শিষ্টাচারের সঙ্গে পরিচিত কিন্তু খয়ের খাঁ নয়, এরূপ একজন মহিলা বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। তার বিশেষ দায়িত্ব হবে বিভিন্ন কমিটির কার্যকলাপের সার-সংক্ষেপ এবং অন্ততপক্ষে ১০টি দৈনিক পত্রিকার মুখ্য সংবাদগুলো নিয়ে আপনার সঙ্গে প্রতিদিন আলোচনা করা। আপনার রাতের গুলশান অফিসের সময় সন্ধ্যায় করলে ভালো হবে।’ খালেদা জিয়াকে প্রতি মাসে অন্তত দুটি জেলায় জনসভা করার পরামর্শ দিয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসব জনসভায় সরকারের দুর্নীতি ও আর্থিক খাতে লুটপাট, সীমান্ত হত্যা, ট্রানজিট ফি, ভারতের সঙ্গে পানির হিস্যা ইত্যাদিকে মূল প্রতিপাদ্য করার পরামর্শ দেন।
এবার জন্মদিন পালন না করায় খালেদা জিয়াকে সাধুবাদ জানিয়ে চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধা এ চিকিৎসক লিখেছেন, ‘দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ১৫ই আগস্ট আপনার জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান বাতিল করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি মন্তব্য করেছেন তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি জিতেছেন।’
ডা. জাফরুল্লাহ লিখেছেন, ‘৩৮ বছরের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পরে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা, কমিটির বড় সাইজ বা ক্রমানুসারে বয়োজ্যেষ্ঠদের হিসাব না মানা কিংবা পর্যাপ্ত নারী নেত্রীর স্থান না হওয়া অথবা নবীন-তরুণদের সংখ্যাধিক্য ভুল কাজ নয়। ভুলটা হয়েছে অন্য জায়গায়। আপনার দলের কিছু চাটুকার দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক, সরকারের দমননীতিতে ভীত সন্ত্রস্ত সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যারা সম্ভবত হর প্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল-এর প্রাসঙ্গিকতা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করে দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে পুরো জাতীয় কমিটির মনোনয়নের দায়িত্ব আপনার ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনাকে আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বাস ও সম্মান প্রদর্শন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা তাদের দলের প্রতি আনুগত্যের অভাব ও দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা মাত্র।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, দীর্ঘদিন আপনি বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়েননি এবং আপনার মনোনীত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অধিকাংশই পড়েননি। আপনার স্থায়ী কমিটির নেতাদের উচিত ছিল আপনাকে অযথা তেল না দিয়ে, গঠনতন্ত্রের নির্ধারিত বিষয়সমূহ আপনার সামনে তুলে ধরা এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেয়া।’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে খালেদা জিয়ার প্রধান উপদেষ্টা করলে বিএনপি লাভবান হবে এবং দেশবাসীর প্রশংসা পাবে।
জাফরুল্লাহ লিখেছেন, আন্তর্জাতিক বিষয় বিশেষত ভারতীয় আগ্রাসন, অনুপ্রবেশ, একাধিক ট্রানজিট ও বাংলাদেশের সঙ্গে সিকিম-ভুটানতুল্য ব্যবহার পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ বিষয়ে দলের (বিএনপি) সদস্য নয় অথচ বিশেষক্ষেত্রে পারদর্শী, যোগ্যতাসম্পন্ন ও সুদক্ষ ব্যক্তিদের কো-অপ্ট করার বিধান আছে। এসব বিষয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, উপাচার্য পারভীন হাসান, নারীপ?ক্ষের শিরীন হক, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক আইনুন নিশাত, অধ্যাপক (ড.) এম আর খান, বারডেমের ডা. একে আজাদ খান, আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞ ড. এসএ খান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, বিআইডিএসের বিনায়ক সেন, প্রাক্তন আমলা আলী ইমাম মজুমদার, সাদত হোসেন, শওকত আলী প্রভৃতি বিশিষ্ট জনকে কমিটিসমূহে কো-অপ্ট করলে কমিটির কাজের গুরুত্ব বাড়বে এবং বিএনপি জ্ঞানসমৃদ্ধ হবে ও ভবিষ্যতে দেশ শাসনে আপনার সুবিধা হবে।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, অনুগ্রহ করে কূপমণ্ডূকতা পরিহার করুণ। আপনি সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন, আপনার গঠনতন্ত্রের নির্দেশ মোতাবেক ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও মহানগর কমিটিসমূহ, নারীদল, ছাত্রদল ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনসমূহে দুই বছর পরপর যথাযথ ভাবে নির্বাচন করে উৎসাহী কর্মীদের বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না দিয়ে। পার্টির অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভিত না নিলে জাতির জন্য গণতান্ত্রিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। ঘরকুনো কর্মীরা সন্ধ্যায় আপনার গুলশান অফিসে ভিড় করবে, কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার ডাকে মাঠে নামবে না। এরা সুখের পায়রা এবং কতক বয়োবৃদ্ধ। তারা তাদের পরিজনকে জাতীয় কমিটিতে অঙ্গীভূত করার কাজে বেশি ব্যাপৃত থাকবেন যেমন ঘটেছে ২০১৬ সালের আপনার জাতীয় কমিটির ক্ষেত্রে।
১০ নেতার স্ত্রী, ১১ নেতার ছেলে, ৬ ভাইবোন স্থান পেয়েছেন অথচ শিষ্টাচার বজায় রেখে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আপনি ছেলের বউকে জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেননি। স্থায়ী কমিটিতে কমপক্ষে চারজন মহিলা অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ৪-৬ কোটি মানুষের প্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রয়োজনে ২৫ জন করলে আপত্তি কোথায়? সদস্যরা পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের ভিত্তিতে ২-৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন, মনোনীত নন। চেয়ারম্যানের মনোনয়নে আসবেন ৩-৪ জন মাত্র।
জাফরুল্লাহ লিখেছেন, ‘পার্টিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। এতে পা?র্টির সর্বস্তরে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হবে। তারা দেশের জন্য জীবন দিতে পিছপা হবে না। যদি পার্টি তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। জেলে থাকা কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে অনুগ্রহ করে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। জেল থেকে বেরুলে অবশ্য তাদের আপনার অফিসে ডেকে এনে আলাপ করবেন, সাহস দেবেন।’
জাফরুল্লাহ খালেদা জিয়ার উদ্দেশে লিখেছেন, ‘বুঝে শুনে সকলের সঙ্গে আলাপ করে জামায়াত সম্পর্কে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিন। দেশবাসীর কাছে তাদের পুনরায় ক্ষমা চাইতে হবে। গোলাম আযম প্রদর্শিত ১৯৯১ সালের একক তৃতীয় ধারার রাজনীতি হতে পারে জামায়াতের জন্য মঙ্গলকর কূটকৌশল।’ খালেদা জিয়ার প্রতি তার পরামর্শ, ‘অচিরেই জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে সম্মিলিত বিরোধী দল হিসেবে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাসদের খালেকুজ্জামান, জাসদের আ স ম আবদুর রব প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রথম জনসভায় অংশগ্রহণের ঘোষণা দিন। বিএনপির বর্তমান জোটের নেতারা তো থাকছেনই, আপনি জেলে থাকলেও সম্মিলিত বিরোধী দলের বিজয় সুনিশ্চিত। জয় হোক সুষ্ঠু জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্রের। পতন হবে প্রতারণার উন্নয়ন ও সরকারের মেগা দুর্নীতির।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, ‘২০ দলের বাইরের বিরোধী দলসমূহকে একত্র করে বাংলাদেশে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সুসংহত করার জন্য আপনার হাতে সময় আছে বড় জোর নয় মাস। সম্ভবত এই সময়ের মধ্যে আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় রাজনীতির আলোকে বিচারের রায় বেরুবে। এই কয়েক মাস পরিশ্রম করলে জনগণের রায় আপনার পক্ষে আসার সম্ভাবনা সমধিক।’ তারেক রহমানের সাজার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘এটা কি সুষ্ঠু বিচারের রায় না রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? এর ফয়সালা ছাত্রদলের ২০-৩০ জনের মিছিলে হবে না, এতে কেবল আপনাদের শক্তির অপচয় এবং ভুল কাজ। ফয়সালা হবে মূলত সুষ্ঠু গণতন্ত্রের আন্দোলনে এবং উচ্চ আদালতে।’
খালেদা জিয়াকে আরো সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘ভবিষ্যৎ আন্দোলনের স্বার্থে নিয়মিত ভাবে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আপনার বাড়িতে তৃণমূল কর্মীদের সাক্ষাৎ দিন। কর্মীদের দেখভাল করার জন্য একজন ৫০ অনূর্ধ্ব উচ্চশিক্ষিত, রাজনীতির ভাষা ও শিষ্টাচারের সঙ্গে পরিচিত কিন্তু খয়ের খাঁ নয়, এরূপ একজন মহিলা বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। তার বিশেষ দায়িত্ব হবে বিভিন্ন কমিটির কার্যকলাপের সার-সংক্ষেপ এবং অন্ততপক্ষে ১০টি দৈনিক পত্রিকার মুখ্য সংবাদগুলো নিয়ে আপনার সঙ্গে প্রতিদিন আলোচনা করা। আপনার রাতের গুলশান অফিসের সময় সন্ধ্যায় করলে ভালো হবে।’ খালেদা জিয়াকে প্রতি মাসে অন্তত দুটি জেলায় জনসভা করার পরামর্শ দিয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসব জনসভায় সরকারের দুর্নীতি ও আর্থিক খাতে লুটপাট, সীমান্ত হত্যা, ট্রানজিট ফি, ভারতের সঙ্গে পানির হিস্যা ইত্যাদিকে মূল প্রতিপাদ্য করার পরামর্শ দেন।
এবার জন্মদিন পালন না করায় খালেদা জিয়াকে সাধুবাদ জানিয়ে চিঠিতে মুক্তিযোদ্ধা এ চিকিৎসক লিখেছেন, ‘দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে ১৫ই আগস্ট আপনার জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান বাতিল করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি মন্তব্য করেছেন তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি জিতেছেন।’
ডা. জাফরুল্লাহ লিখেছেন, ‘৩৮ বছরের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পরে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা, কমিটির বড় সাইজ বা ক্রমানুসারে বয়োজ্যেষ্ঠদের হিসাব না মানা কিংবা পর্যাপ্ত নারী নেত্রীর স্থান না হওয়া অথবা নবীন-তরুণদের সংখ্যাধিক্য ভুল কাজ নয়। ভুলটা হয়েছে অন্য জায়গায়। আপনার দলের কিছু চাটুকার দায়িত্ব পালনে অনিচ্ছুক, সরকারের দমননীতিতে ভীত সন্ত্রস্ত সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যারা সম্ভবত হর প্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল-এর প্রাসঙ্গিকতা ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করে দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে পুরো জাতীয় কমিটির মনোনয়নের দায়িত্ব আপনার ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনাকে আপাতদৃষ্টিতে বিশ্বাস ও সম্মান প্রদর্শন মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা তাদের দলের প্রতি আনুগত্যের অভাব ও দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা মাত্র।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, দীর্ঘদিন আপনি বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়েননি এবং আপনার মনোনীত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অধিকাংশই পড়েননি। আপনার স্থায়ী কমিটির নেতাদের উচিত ছিল আপনাকে অযথা তেল না দিয়ে, গঠনতন্ত্রের নির্ধারিত বিষয়সমূহ আপনার সামনে তুলে ধরা এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেয়া।’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে খালেদা জিয়ার প্রধান উপদেষ্টা করলে বিএনপি লাভবান হবে এবং দেশবাসীর প্রশংসা পাবে।
জাফরুল্লাহ লিখেছেন, আন্তর্জাতিক বিষয় বিশেষত ভারতীয় আগ্রাসন, অনুপ্রবেশ, একাধিক ট্রানজিট ও বাংলাদেশের সঙ্গে সিকিম-ভুটানতুল্য ব্যবহার পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ বিষয়ে দলের (বিএনপি) সদস্য নয় অথচ বিশেষক্ষেত্রে পারদর্শী, যোগ্যতাসম্পন্ন ও সুদক্ষ ব্যক্তিদের কো-অপ্ট করার বিধান আছে। এসব বিষয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, উপাচার্য পারভীন হাসান, নারীপ?ক্ষের শিরীন হক, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক আইনুন নিশাত, অধ্যাপক (ড.) এম আর খান, বারডেমের ডা. একে আজাদ খান, আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞ ড. এসএ খান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, বিআইডিএসের বিনায়ক সেন, প্রাক্তন আমলা আলী ইমাম মজুমদার, সাদত হোসেন, শওকত আলী প্রভৃতি বিশিষ্ট জনকে কমিটিসমূহে কো-অপ্ট করলে কমিটির কাজের গুরুত্ব বাড়বে এবং বিএনপি জ্ঞানসমৃদ্ধ হবে ও ভবিষ্যতে দেশ শাসনে আপনার সুবিধা হবে।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, অনুগ্রহ করে কূপমণ্ডূকতা পরিহার করুণ। আপনি সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন, আপনার গঠনতন্ত্রের নির্দেশ মোতাবেক ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও মহানগর কমিটিসমূহ, নারীদল, ছাত্রদল ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনসমূহে দুই বছর পরপর যথাযথ ভাবে নির্বাচন করে উৎসাহী কর্মীদের বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না দিয়ে। পার্টির অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভিত না নিলে জাতির জন্য গণতান্ত্রিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। ঘরকুনো কর্মীরা সন্ধ্যায় আপনার গুলশান অফিসে ভিড় করবে, কিন্তু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার ডাকে মাঠে নামবে না। এরা সুখের পায়রা এবং কতক বয়োবৃদ্ধ। তারা তাদের পরিজনকে জাতীয় কমিটিতে অঙ্গীভূত করার কাজে বেশি ব্যাপৃত থাকবেন যেমন ঘটেছে ২০১৬ সালের আপনার জাতীয় কমিটির ক্ষেত্রে।
১০ নেতার স্ত্রী, ১১ নেতার ছেলে, ৬ ভাইবোন স্থান পেয়েছেন অথচ শিষ্টাচার বজায় রেখে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও আপনি ছেলের বউকে জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেননি। স্থায়ী কমিটিতে কমপক্ষে চারজন মহিলা অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ৪-৬ কোটি মানুষের প্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা গঠনতন্ত্র সংশোধন করে প্রয়োজনে ২৫ জন করলে আপত্তি কোথায়? সদস্যরা পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের ভিত্তিতে ২-৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন, মনোনীত নন। চেয়ারম্যানের মনোনয়নে আসবেন ৩-৪ জন মাত্র।
জাফরুল্লাহ লিখেছেন, ‘পার্টিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। এতে পা?র্টির সর্বস্তরে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হবে। তারা দেশের জন্য জীবন দিতে পিছপা হবে না। যদি পার্টি তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। জেলে থাকা কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে অনুগ্রহ করে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। জেল থেকে বেরুলে অবশ্য তাদের আপনার অফিসে ডেকে এনে আলাপ করবেন, সাহস দেবেন।’
জাফরুল্লাহ খালেদা জিয়ার উদ্দেশে লিখেছেন, ‘বুঝে শুনে সকলের সঙ্গে আলাপ করে জামায়াত সম্পর্কে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিন। দেশবাসীর কাছে তাদের পুনরায় ক্ষমা চাইতে হবে। গোলাম আযম প্রদর্শিত ১৯৯১ সালের একক তৃতীয় ধারার রাজনীতি হতে পারে জামায়াতের জন্য মঙ্গলকর কূটকৌশল।’ খালেদা জিয়ার প্রতি তার পরামর্শ, ‘অচিরেই জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে সম্মিলিত বিরোধী দল হিসেবে অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাসদের খালেকুজ্জামান, জাসদের আ স ম আবদুর রব প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে এক মাসের মধ্যে প্রথম জনসভায় অংশগ্রহণের ঘোষণা দিন। বিএনপির বর্তমান জোটের নেতারা তো থাকছেনই, আপনি জেলে থাকলেও সম্মিলিত বিরোধী দলের বিজয় সুনিশ্চিত। জয় হোক সুষ্ঠু জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্রের। পতন হবে প্রতারণার উন্নয়ন ও সরকারের মেগা দুর্নীতির।’