তিনমাস ব্যাপী সাত দফা কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দিনব্যাপী রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি। শনিবার বেলা ১১টার সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ‘রামপাল চুক্তি ছুড়ে ফেলো, সুন্দরবন রক্ষা করো’ স্লোগানে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। অবস্থান কর্মসূচির শেষে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটির সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স সাত দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-আগামী ২৬শে আগস্ট ফুলবাড়ি ট্র্যাজেডির এক দশক উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ; সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বিভিন্ন সামজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়; রামপাল প্রকল্প বন্ধে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিকট খোলা চিঠি দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে অবস্থান; সারাদেশ বিশেষ করে সুন্দরবনের আশপাশে জনসংযোগ-গণস্বাক্ষর-সমাবেশ; আগামী ২৩শে নভেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্প বাতিল না করলে চল চল ঢাকা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে এবং ২৬শে নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ। বেলা ১১টার দিকে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদু্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, সুজন, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অবস্থান কর্মসূিচতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রবচন আছে, উপকারী কে বাঘে খায়। সুন্দর বন আমাদের উপকার করে তা অনুভব করতে হয় প্রাকৃতিক যে বিপর্যয় আসে তাতে সুন্দরবন বুক পেতে দাঁড়ায়। এই সুন্দরবন আমরা নিজেরা তৈরি করিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এখানে অসংখ্য জীব বৈচিত্র আছে যেগুলো হারিয়ে গেলে তা আর কখনো পাওয়া যাবে না। সে উপকারীকে বাঘে খাচ্ছে। আসলে বাঘে খাচ্ছে না খাচ্ছে একটি দানব এবং সে দানব সুন্দরবনকেও খাবে বাঘকেও নিশ্চিহ্ন করে দিবে। এই দানব হচ্ছে পুঁজিবাদী লালসা, পুজিবাদী শোষণ। এখন মুনাফাখোর লোভীরা বাংলাদেশের সব কিছু নিঃশেষ করে দিচ্ছে। সুন্দরবনকেও তারা শেষ করে দিচ্ছে। তারা দেশের সমগ্র দুর্দশার জন্য দায়ী।
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে এতে আমাদের উপকার হবে। আমাদের যদি উপকার হয় তবে ভারত কেন এই প্রকল্পটি আমাদের হাতে দিচ্ছে না। সুন্দরবনকে রক্ষা করার যুদ্ধ জীবন মরণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যদি বাংলাদেশের মানুষ পরাজিত হয় তাহলে আরো অনেক জায়গায় তার পরাজয় ঘটবে। এই বন নিঃশেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশের সমস্ত বন নিঃশেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তা প্রমাণ করা হয়েছে। আমাদের এই সংগ্রাম বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে নয়; এই সংগ্রাম সুন্দরবন রক্ষার জন্য।