বাংলাদেশ এখন মানবাধিকার রাষ্ট্রের বাইরে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে। সর্বত্রই গুম-খুন হচ্ছে। জোর করে নিখোঁজ করে দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ। সভ্য পৃথিবীতে সকলের চোখের সামনে বাংলাদেশে ঘটনাগুলো ঘটছে। কিন্তু বিশ্ব বিবেক আজকে নীরব। ‘বিএনপির বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে গুম, খুন ও নিগ্রহের শিকার’ ৫ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক আর্থিক সহায়তা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল নামে একটি সংগঠন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের আট বছরের শাসনকালে বিএনপির অন্তত এক হাজার নেতা-কর্মী খুন ও পাঁচশ জন গুমের শিকার হয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা হিসাব করেছি, আমাদের এক হাজারের উপরে নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে। পাঁচশর অধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে। হাজারের উপরে পঙ্গু ও আহত হয়েছে অসংখ্য। এছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষ আসামি হয়েছে, হাজার হাজার মানুষ কারাগারে গেছে। মির্জা আলমগীর বলেন, সাম্প্রতিক উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ সমস্যা সমাধানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিঃস্বার্থভাবে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু সরকার তা কর্ণপাত করেনি, প্রত্যাখ্যান করছে। খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান সরকারের প্রত্যাখ্যানের মধ্যে অন্য কারণ রয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বুঝি। এই ঐক্যের আহ্বানকে বাদ দেওয়া বা প্রত্যাখ্যান করার পেছনে একটাই কারণ আছে। তারা জানেন, দেশে ঐক্য গড়ে উঠলে সরকার সেখানে ভালো সুবিধা করতে পারবে না। পরে গুম ও খুনের শিকার ছাত্রদলের ৫ নেতার পরিবারকে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এ পরিবারগুলো হলোÑ সূত্রাপুুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি সেলিম রেজা পিন্টু, ঢাকা মহানগর ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের সহ সভাপতি মো. চঞ্চল, বরিশাল মহানগরের ২০ নং ওয়ার্ডের সভাপতি ফিরোজ খান কালু, নীলফামারীর সদরের লক্ষিচাপ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নেতা গোলাম রাব্বানী ও মিরপুর বাংলা কলেজ ছাত্রদল নেতা মো. আকরাম। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত দুই বছরে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে গুম-খুনের শিকার বিএনপি ও ছাত্রদলের ৩১ জন নেতা-কর্মীর পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়। এ সময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়ানো খুব কঠিন বা কষ্টকর হবে না। আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এ জন্য কয়েকটি সেল গঠন করা হয়েছে। সবাই চাইলে সেখানে সহায়তা করতে পারবেন। সংগঠনের সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নিখোঁজ সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহানা বানু মুন্নী, চঞ্চলের শিশুপুত্র আহাদ, গোলাম রাব্বানীর শিশুকন্যা হৃদি তাদের মনবেদনার কথা তুলে ধরেন। গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারে সদস্যদের কান্নাকাতর বক্তব্যের সময় আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন বিএনপি মহাসচিব। এ পর্যায়ে তাকে বার বার চোখ মুচতে দেখা যায়। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান খান, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সহ-সভাপতি মাসুদ খান পারভেজ, নাজমুল হাসান, হেল্প সেলের সদস্য সুমন আহসান, মাসুম রাব্বানী, নুরুল আলম নুরু, মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, অলি চৌধুরী, শরাফত জিকু, দেলোয়ার হোসেন দিদার, ফখরুল ইসলাম মাসুম, শাহ আলম মুনির ও মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া বক্তব্য দেন।