চট্টগ্রামের মেয়র নাছিরউদ্দিন অভিযোগ করেছেন, উন্নয়ন কাজের টাকা ছাড়ের জন্য ঘুষ দাবি করেছিল মন্ত্রণালয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবি করার যে অভিযোগ তুলেছেন সে বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
মেয়র নাছির উদ্দিন বুধবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দ ছাড় করার বিনিময়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঘুষ দাবি করেছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে সে অভিযোগের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের কাছে এ চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক মেয়র নাছিরের অভিযোগকে ‘বেশ গুরুতর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মালেক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “ চট্টগ্রামের সিটি মেয়র সাহেবের কাছে আমরা এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাচ্ছি। কে এই অপরাধ করেছে? কারা এর সাথে জড়িত? – তিনি আমাদের কাছে বলুক।”
স্থানীয় সরকার সচিব জানিয়েছেন, সাতদিনের মধ্যে তাদের চিঠির জবাব দেবার জন্য চট্টগ্রাম মেয়রকে বলা হয়েছে।
মেয়র নাছিরের অভিযোগ হচ্ছে, বরাদ্দ দেবার বিনিময়ে তার কাছ থেকে ৫ শতাংশ ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব মেয়রের কাছে ঘুষ হিসেবে পাজেরো জিপ দাবি করেছেন।
প্রকাশ্য এক অনুষ্ঠানে মেয়রের এ ধরনের অভিযোগ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বিব্রত করেছে বলেই মনে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানতে চায় মেয়র নাছিরের এই অভিযোগ কি কথার কথা, নাকি অভিযোগের পক্ষে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে।
স্থানীয় সরকার সচিব মালেক বলেন, “এটা হালকা-পাতলা বিষয় না তো। এটা একটা দুর্নীতির অভিযোগ। সুতরাং দুর্নীতির অভিযোগ তাকে প্রমাণ করতে হবে।”
চট্টগ্রামের মেয়র কোনো কাজে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন সেটি জানালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে বলে মালেক উল্লেখ করেন।
এদিকে নাছিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টিতে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ঘুষ দাবি করা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে তাকে উদ্ধৃত করে যেসব খবরাখবর এসেছে, সেগুলোর বিষয়েও দ্বিমত পোষণ করেননি চট্টগ্রামের মেয়র।
এ অভিযোগ কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
আ জ ম নাছির উদ্দিনকে বর্তমানে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়।
নাছিরের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার কাছে ঘুষ দাবির অভিযোগ সরকারী অফিসে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঘুষ দাবি করা একটা নিত্য-নৈমেত্তিক ব্যাপার।
কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধির কাছে ঘুষ দাবি করার অভিযোগ খুব একটা শোনা যায় না।
তার কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ কতটা কি চমকে উঠার মতো?
দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগে মোটেই বিস্মিত নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি কতটা বিস্তৃত মেয়র নাছিরের অভিযোগ সেটি আবারো মনে করিয়ে দিল। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের কথায় দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্র নিয়ে সাধারণ মানুষ এমনিতেই হতাশ।
কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের একজন জনপ্রতিনিধি যখন দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন, তখন সাধারণ মানুষের মাঝে সেটি আরো বেশি হতাশা তৈরি করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন একজন জনপ্রতিনিধির কাছে ঘুষ দাবী করা তার কাছে মোটেই ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ মনে হয়না।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ যখন তার (সরকারি কর্মকর্তা) হাতে আমার ফাইল থাকে, তখন তিনি আমার চেয়ে ক্ষমতাবান। তাকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে আমার ফাইল মুভ (নড়াচড়া) করবে না, এটাই বাস্তবতা।”
তিনি বলেন, দুর্নীতি করলে সমাজে সুবিধা পাওয়া যাবে, এমন ধারণা দুর্নীতিকে আরো জোরদার করছে।
সূত্র : বিবিসি