ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির সাম্প্রতিক গবেষণায় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আইনি কাঠামোয় শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু একই গবেষণায় যখন সংস্থাটি রাজনৈতিক পক্ষপাতের ঊর্ধ্বে নয় এবং এর প্রতি জনগণের আস্থা কম বলে উপসংহার টানা হয়, তখন কাঠামোগত শক্তি অনেকটাই মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
টিআইবির গবেষণায় ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দুদকের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল। আইনি স্বাধীনতা ও অবস্থান, অর্থ ও মানবসম্পদ, অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম, প্রতিরোধ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা, জবাবদিহি ও তদারকি এবং দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের ধারণা—এই সাতটি ক্ষেত্রের অধীনে ৫০টি নির্দেশকের ভিত্তিতে গবেষণায় দুদকের গড় নম্বর ৬১ দশমিক ২২ শতাংশ হলেও জনগণের ধারণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম নম্বর ২৮ দশমিক ৫৭ পেয়েছে। শুরু থেকে দুদক একটি নিষ্ক্রিয় ও পক্ষপাতপুষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত। ব্যাংকিং খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় দুদক চুনোপুঁটিদের নিয়ে টানাটানি করলেও রাঘববোয়ালেরা ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বেই থেকে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, অতীতের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যতটা সক্রিয় বর্তমানের দুর্নীতি নিয়ে ততটাই নিষ্ক্রিয়।
দুদকের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে টিআইবি কিছু সুপারিশও করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাজেট বৃদ্ধি, সাংগঠনিক কাঠামো ও জনবল বৃদ্ধি, চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিয়োগ– প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ানো, অভিযোগ দাখিল ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোসহ স্বাধীন তদারকি ব্যবস্থা। এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে না।
দুদকের চেয়ারম্যান টিআইবির প্রতিবেদনের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘আস্থার সংকট কাটাতে আমরা কাজ করছি।’ অতীতে যাঁরা দুদকের দায়িত্বে ছিলেন, তঁারা ব্যর্থতা বা ঘাটতি স্বীকারই করতে চাননি। দুদক তখনই জনগণের আস্থা লাভ করবে, যখন রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে প্রতিষ্ঠানটি সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবে।