নতুন কমিটি নিয়ে বিএনপিতে ক্ষোভ-হতাশা বাড়ছে। মাঠের রাজনীতিতে বেকায়দায় থাকায় দলটিতে তাৎক্ষণিকভাবে এই ক্ষোভের বড় কোনো বহিঃপ্রকাশ না ঘটলেও কোনো কোনো নেতা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার চিন্তা করছেন।
নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে দলটির অভ্যন্তরীণ এই চিত্র পাওয়া গেছে। নেতাদের অনেকের অভিযোগ, নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের প্রভাব কাজ করেছে। ফলে তাঁদের অনুসারীরা ভালো পদ-পদবি পেয়েছেন। অপর দিকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ এ ঘরানার নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন বলে দলের ভেতরে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ বিএনপির সম্মেলন হয়। এর সাড়ে চার মাস পর গত শনিবার স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও নির্বাহী কমিটি মিলিয়ে মোট ৫৯২ জনের কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। গণমাধ্যমে খবর বের হওয়ার পর গতকাল রোববার দিনভর দলের নেতা-কর্মীদের এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলে। নেতাদের বড় অংশ তাঁদের অনুসারীদের কাছে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি নিয়ে অনেক অভিযোগ, ক্ষোভ, উষ্মা, অপ্রাপ্তি আছে। অনেক অযোগ্য লোককে কমিটিতে আনা হয়েছে। আবার অনেক যোগ্য লোককে বাদ দেওয়া হয়েছে বা প্রত্যাশিত পদ দেওয়া হয়নি। অনেকে অসম্মানিত বোধ করেছেন।
জ্যেষ্ঠ অপর একজন নেতা বলেন, নতুন কমিটিতে নেতাদের জ্যেষ্ঠতাক্রম যথাযথ হয়নি। অনেকে মনে করছেন, তাঁদের ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। অনেক নেতার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, পুত্রবধূ, ভাইও কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এটাকে ‘চরম অগণতান্ত্রিক’ বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান (রিপন) এবং গত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ ও মিজানুর রহমান (মিনু), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম (নতুন কমিটিতে সদস্য), সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার ও মশিউর রহমান, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ (জনি) প্রমুখ নতুন কমিটিতে তাঁদের অবস্থান বা পদ-পদবি দেখে অসন্তুষ্ট বা ক্ষুব্ধ। এঁদের কয়েকজন এ প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভের কথা বলেছেনও।
জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে খোকা, নোমান, মিন্টু, খন্দকার মাহবুব ও মো. শাহজাহান স্থায়ী কমিটির পদ পেতে পারেন বলে দলে আলোচনা ছিল। এখন তাঁরা সবাই কমবেশি হতাশ। তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল নোমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নেতা-কর্মীদের অনেকে তাঁকে ফোন করছেন, দেখা করছেন। সবাই আশাহত ও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। তিনি নিজেও কিছুটা আশাহত হয়েছেন।
রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নোমান বলেন, ‘অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন, এবার আত্মসম্মানের বিষয় চলে এসেছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে আলাপ করিনি।’
কেবল জ্যেষ্ঠ নয়, মাঝারি পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও কমিটি নিয়ে ক্ষোভ আছে। তাঁদের একজন আগের কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান। নতুন কমিটিতে তাঁকে সহপ্রচার সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। তিনি কমিটি ঘোষণার পরপর নিজের নাম প্রত্যাহার করার আবেদন করেন।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করেছেন মোসাদ্দেক আলী (ফালু)। অবশ্য বিএনপির ভেতরের আলোচনা হলো, মোসাদ্দেক আলীর পদত্যাগ মূলত কৌশলগত।
মোসাদ্দেক আলী এখন ব্যাংককে আছেন। গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাই কথা বলতে পারছেন না।
বিএনপির নারী নেত্রীদের অনেকে কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট। এঁদের মধ্যে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক সাংসদ নিলোফার চৌধুরী, সৈয়দা আশিফা আশরাফি (পাপিয়া), রেহানা আক্তার উল্লেখযোগ্য।
জানতে চাইলে নতুন কমিটির স্বনির্ভরবিষয়ক সহসম্পাদক নিলোফার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ-পদবি বড় কথা না। কিন্তু জুনিয়রকে আমার সিনিয়র করে দেওয়া হলে ইজি হতে পারব না। অপমানবোধ নিয়ে তো ভালো কাজ করা যায় না।’
সম্পাদকীয় পদ পাওয়া আরেক নারীনেত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যাদের দিয়ে কমিটি করেছে, তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে পারলে ভালো। আমরা না হয় কিছুদিন বিশ্রাম নিলাম।’
দলীয় দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, কমিটি করা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পরিষদ স্থায়ী কমিটির নেতাদের একটি বড় অংশ ছিল একেবারে অন্ধকারে। তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে কমিটি গঠনে রিজভী ও শিমুল বিশ্বাসের ভূমিকা ছিল। নেপথ্যে তাঁদের সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও ছিলেন। এ কারণে তাঁদের অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা ভালো পদ-পদবি পেয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর পুরোপুরি রিজভীর হাতে চলে গেছে।
এ বিষয়ে রিজভীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। সচরাচর যে মুঠোফোন ব্যবহার করেন, তা-ও বন্ধ রয়েছে। শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, ‘কমিটি গঠন নিয়ে আমার জিরো পরিমাণ ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাব) নাই। প্র্যাকটিক্যালি আমি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করি। ওনার আদেশ-নির্দেশের বাইরে গিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নাই।’
এ বিষয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, চেয়ারপারসনকে কমিটি গঠনের একক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গত চার মাসে চেয়ারপারসনের সঙ্গে কমিটি গঠন নিয়ে তাঁর কোনো কথা হয়নি। যাঁরা কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি, তাঁদের নিজেদের ভূমিকা পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন গয়েশ্বর।
পদ পাওয়ার পরও যেমন অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন; আবার পদ না পেয়ে রাজনীতি ছাড়ার চিন্তা করছেন কেউ কেউ। এমন একজন বিএনপির সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন খান মোহন। তিনি কমিটি ঘোষণার পরপর শনিবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গুডবাই বিএনপি, গুডবাই। বিদায়। দীর্ঘ ৩৮ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছি আজ…।’
নতুন কমিটি বিষয়ে এসব ক্ষোভ-হতাশা নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য জানতে গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। কমিটি ঘোষণার পর থেকে তিনি গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন।
স্থায়ী কমিটিতে জ্যেষ্ঠতাক্রমে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরই খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অবস্থান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি ভালো হয়েছে। হয়তো অনেকের মনে কষ্ট আছে যে প্রত্যাশিত পদ পাননি। নিশ্চয়ই তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে, যাতে তাঁদের সক্রিয় রাখা যায়, সম্মানিত করা যায়।’
নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে দলটির অভ্যন্তরীণ এই চিত্র পাওয়া গেছে। নেতাদের অনেকের অভিযোগ, নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের প্রভাব কাজ করেছে। ফলে তাঁদের অনুসারীরা ভালো পদ-পদবি পেয়েছেন। অপর দিকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ এ ঘরানার নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন বলে দলের ভেতরে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ বিএনপির সম্মেলন হয়। এর সাড়ে চার মাস পর গত শনিবার স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও নির্বাহী কমিটি মিলিয়ে মোট ৫৯২ জনের কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। গণমাধ্যমে খবর বের হওয়ার পর গতকাল রোববার দিনভর দলের নেতা-কর্মীদের এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলে। নেতাদের বড় অংশ তাঁদের অনুসারীদের কাছে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কমিটি নিয়ে অনেক অভিযোগ, ক্ষোভ, উষ্মা, অপ্রাপ্তি আছে। অনেক অযোগ্য লোককে কমিটিতে আনা হয়েছে। আবার অনেক যোগ্য লোককে বাদ দেওয়া হয়েছে বা প্রত্যাশিত পদ দেওয়া হয়নি। অনেকে অসম্মানিত বোধ করেছেন।
জ্যেষ্ঠ অপর একজন নেতা বলেন, নতুন কমিটিতে নেতাদের জ্যেষ্ঠতাক্রম যথাযথ হয়নি। অনেকে মনে করছেন, তাঁদের ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। অনেক নেতার স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, পুত্রবধূ, ভাইও কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এটাকে ‘চরম অগণতান্ত্রিক’ বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা।
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান (রিপন) এবং গত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ ও মিজানুর রহমান (মিনু), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম (নতুন কমিটিতে সদস্য), সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার ও মশিউর রহমান, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ (জনি) প্রমুখ নতুন কমিটিতে তাঁদের অবস্থান বা পদ-পদবি দেখে অসন্তুষ্ট বা ক্ষুব্ধ। এঁদের কয়েকজন এ প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভের কথা বলেছেনও।
জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে খোকা, নোমান, মিন্টু, খন্দকার মাহবুব ও মো. শাহজাহান স্থায়ী কমিটির পদ পেতে পারেন বলে দলে আলোচনা ছিল। এখন তাঁরা সবাই কমবেশি হতাশ। তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল নোমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নেতা-কর্মীদের অনেকে তাঁকে ফোন করছেন, দেখা করছেন। সবাই আশাহত ও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। তিনি নিজেও কিছুটা আশাহত হয়েছেন।
রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নোমান বলেন, ‘অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন, এবার আত্মসম্মানের বিষয় চলে এসেছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে আলাপ করিনি।’
কেবল জ্যেষ্ঠ নয়, মাঝারি পর্যায়ের নেতাদের মধ্যেও কমিটি নিয়ে ক্ষোভ আছে। তাঁদের একজন আগের কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান। নতুন কমিটিতে তাঁকে সহপ্রচার সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। তিনি কমিটি ঘোষণার পরপর নিজের নাম প্রত্যাহার করার আবেদন করেন।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করেছেন মোসাদ্দেক আলী (ফালু)। অবশ্য বিএনপির ভেতরের আলোচনা হলো, মোসাদ্দেক আলীর পদত্যাগ মূলত কৌশলগত।
মোসাদ্দেক আলী এখন ব্যাংককে আছেন। গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাই কথা বলতে পারছেন না।
বিএনপির নারী নেত্রীদের অনেকে কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট। এঁদের মধ্যে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক সাংসদ নিলোফার চৌধুরী, সৈয়দা আশিফা আশরাফি (পাপিয়া), রেহানা আক্তার উল্লেখযোগ্য।
জানতে চাইলে নতুন কমিটির স্বনির্ভরবিষয়ক সহসম্পাদক নিলোফার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ-পদবি বড় কথা না। কিন্তু জুনিয়রকে আমার সিনিয়র করে দেওয়া হলে ইজি হতে পারব না। অপমানবোধ নিয়ে তো ভালো কাজ করা যায় না।’
সম্পাদকীয় পদ পাওয়া আরেক নারীনেত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যাদের দিয়ে কমিটি করেছে, তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে পারলে ভালো। আমরা না হয় কিছুদিন বিশ্রাম নিলাম।’
দলীয় দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, কমিটি করা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পরিষদ স্থায়ী কমিটির নেতাদের একটি বড় অংশ ছিল একেবারে অন্ধকারে। তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি। নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে কমিটি গঠনে রিজভী ও শিমুল বিশ্বাসের ভূমিকা ছিল। নেপথ্যে তাঁদের সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও ছিলেন। এ কারণে তাঁদের অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা ভালো পদ-পদবি পেয়েছেন। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর পুরোপুরি রিজভীর হাতে চলে গেছে।
এ বিষয়ে রিজভীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। সচরাচর যে মুঠোফোন ব্যবহার করেন, তা-ও বন্ধ রয়েছে। শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, ‘কমিটি গঠন নিয়ে আমার জিরো পরিমাণ ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাব) নাই। প্র্যাকটিক্যালি আমি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করি। ওনার আদেশ-নির্দেশের বাইরে গিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নাই।’
এ বিষয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, চেয়ারপারসনকে কমিটি গঠনের একক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গত চার মাসে চেয়ারপারসনের সঙ্গে কমিটি গঠন নিয়ে তাঁর কোনো কথা হয়নি। যাঁরা কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি, তাঁদের নিজেদের ভূমিকা পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন গয়েশ্বর।
পদ পাওয়ার পরও যেমন অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন; আবার পদ না পেয়ে রাজনীতি ছাড়ার চিন্তা করছেন কেউ কেউ। এমন একজন বিএনপির সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিন খান মোহন। তিনি কমিটি ঘোষণার পরপর শনিবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গুডবাই বিএনপি, গুডবাই। বিদায়। দীর্ঘ ৩৮ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছি আজ…।’
নতুন কমিটি বিষয়ে এসব ক্ষোভ-হতাশা নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্য জানতে গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। কমিটি ঘোষণার পর থেকে তিনি গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন।
স্থায়ী কমিটিতে জ্যেষ্ঠতাক্রমে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরই খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অবস্থান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি ভালো হয়েছে। হয়তো অনেকের মনে কষ্ট আছে যে প্রত্যাশিত পদ পাননি। নিশ্চয়ই তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে, যাতে তাঁদের সক্রিয় রাখা যায়, সম্মানিত করা যায়।’