গরু গণনার নামে পশ্চিমবঙ্গে বিপজ্জনক রাজনীতির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি এই অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুদিন ধরেই এই বিপজ্জনক রাজনীতির আঁচ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন যে, বিজেপির মতলব শুধু প্ররোচণা দিয়ে দাঙ্গা বাঁধানো। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, গরু গণনা ছাড়া কি বিজেপির আর কোনও কাজ নেই। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, গরু গণনার কাজে তারা দলীয়ভাবে বাধা দেবেন। কয়েক দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আরএসএসের মদতপুষ্ঠ সংগঠন গো রক্ষা সমিতি গরু গণনা শুরু করেছে। গত রবিবারই এই গরু গণনা শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। আর এরপর শুরু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগণায়। উত্তরবঙ্গের অনেক জায়গাতেও চলছে গরু গণনার কাজ। গো রক্ষা সমিতির অন্যতম কর্তা সুব্রত দত্ত জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের প্রামে গ্রামে এই গরু গণনা চলবে। তবে এই গরু গণনার তথ্য গোপন রাখা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে ওয়াকিবহাল মহল প্রশ্ন তুলেছেন, গরু গণনার এই সময় নিয়ে। সামনেই কুরবানির ঈদ। আর তার আগেই বিজেপির গেরুয়াধারীরা মাঠে নেমে পড়েছেন গরুর তথ্য সংগ্রহে। তৃণমূল কংগ্রেসের এক সংখ্যালঘু নেতা জানিয়েছেন, এর পেছনে অভিসন্ধি রয়েছে। গরু গণনা যারা করছেন তারাই জানিয়েছেন, ঈদের পরেই তারা ফের গরু গণনা করবেন। দেখবেন, কার কটা গরু বাংলাদেশে পাচার হয়েছে। সেই বুঝে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন গো রক্ষা সমিতির কর্মীরা। ফলে পশ্চিমবঙ্গেও যে উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, রাজস্থান, গুজরাট বা মহারাষ্ট্রের মতো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করা হবে তার আঁচ পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকেই আক্রমনের দিশা করেছেন। রাজ্যের মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে মমতার ঘোষণা, বিজেপির কথায় কান দেবেন না। ওরা দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছে। সারাক্ষন ধর্মের নামে সুরসুড়ি দিচ্ছে। মমতা বলেছেন, আমরা প্রগতি চাই, দাঙ্গা চাই না। এদিকে গরু নিয়ে ভারত জুড়ে উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। রাজস্থানে তো গরু মন্ত্রক পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে। আর মোদী সরকার রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন প্রকল্প করে গোশালা তৈরির জন্য গত দুই বছরে ৫.৮ বিলিয়ন রুপি খরচ করে ফেলেছেন। যদি এই সব গোশালায় গরু অভুক্ত থাকছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি গরুর মুত্রে সোনার সন্ধান মিলেছে বলেও প্রচার চলছে। আর চলছে, গরুর মুত্র দিয়ে রোগ নিরাময়ের নানা দাওয়াই। তবে দেশজুড়ে গো রক্ষকদের কর্মকা- নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি-শাসিত একাধিক রাজ্যে গো-রক্ষকদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। গরুর মাংসের সন্ধানে গো রক্ষকরা ঘরে ঘরে উঁকি মারছে। কিছুদিন আগেই হরিয়াণায় দুজনকে গো মাংস বহন করার অভিযোগে গোবড় পর্যন্ত ভক্ষণ করানো হয়েছে। আর গোরক্ষকদের কর্মকা-ের শিকার হয়ে গত কয়েক মাসে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই সব তথাকথিত গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে নিজে থেকেই গো-রক্ষক গো-রক্ষকদের সরাসরি ‘সমাজবিরোধী’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন, নিজেদের ‘কালো ধান্ধা’ ধামাচাপা দিতেই গো-রক্ষকের মুখোশ পরে নতুন ব্যবসা শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিকে এদের ব্যাপারে নথি তৈরি করতেও বলেছেন মোদী। তবে গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও আরএসএসের মন রাখতে মোদী সঙ্ঘ-পরিবার যে গো-সেবার কথা বলে, তাতেই উৎসাহ দিয়ে বলেছেন, গো-সেবা ও গো-রক্ষার মধ্যে অনেক ফারাক। সত্যিকারের গো-সেবা করতে হলে মাঠেঘাটে প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ করতে হবে। কারণ এই প্লাস্টিক খেয়ে বহু গোরু মারা যায়।