রিও-অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পতাকা উড়লো। এর আগেও পতাকা উড়েছে। তবে অলিম্পিকের ৩১তম আসরে বাংলাদেশের পতাকা উড়লো আলাদা গৌরবে। বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এবার সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান। জমকালো অলিম্পিক উদ্বোধনীতে তার হাতে মারাকানা স্টেডিয়ামে পতপত করে উড়লো লাল-সবুজ পতাকা।
এবারের অলিম্পিকে ২০৬টি দেশের ১০ হাজারের বেশি খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করছেন। প্রতিটি দেশের খেলোয়াড়রা নিজ দেশের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণ করেন। ইংরেজি বর্ণমালার হিসেবে মার্চপাস্টে ‘এ’ বর্ণে শুরু দেশ আগে স্টেডিয়ামে ঢোকেন। এই হিসেবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা শুরুর দিকেই সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। সিদ্দিকুরের পেছনে ছিলেন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান, দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার, দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ ও শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকিসহ অন্যরা। রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে ২০০৮-বেইজিং কিংবা ২০১২-লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনীর মতো অত বেশি প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না। কিন্তু সাম্বার দেশ ব্রাজিলে রঙয়ের কোনো কমতি ছিল না। গতকাল বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে অলিম্পিকের ৩১তম আসরের বর্ণালী উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। উদ্বোধনীর পরতে পরতে ফুটিয়ে তোলা হয় ব্রাজিলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাস। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেই এবার অলিম্পিক আয়োজন করেছে ব্রাজিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের ১০০ রাজ্য প্রধানের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাত্র ২৫টি রাজ্যের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন। এবারের আয়োজক দেশ ব্রাজিল বলে দেশটির কিংবদন্তি ফুটবলার পেলের অলিম্পিকের মূল মশালটা প্রজ্জ্বালন করার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি থাকতে পারেননি। অলিম্পিক কমিটির আমন্ত্রণ পেয়ে পেলে বলেন, ‘প্রিয় বন্ধুরা, এই মুহূর্তে আমার কাছে শরীরের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একমাত্র ঈশ্বর। অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা আমার নেই।’ ফুটবল কিংবদন্তি উপস্থিত না থাকলেও ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে উদ্বোধনীতে আড়ম্বর কম ছিল না। পেলের বদলে অলিম্পিকের মূল মশাল প্রজ্জা্বলন করেন কিংবদন্তি ম্যারাথন দৌড়বিদ ভানদেইরেলদি লিমা। অলিম্পিকের ইতিহাসে এর আগে কখনো ফুটবল মাঠে এ আসরের উদ্বোধন হয়নি। ফুটবলের ঐতিহাসিক মাঠ মারাকানায় অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ‘সিটি অব গড’- সিনেমার বিখ্যাত পরিচালক ফারনানদো মিরালেস। উপস্থিত প্রায় ৮০ হাজার দর্শককে সাম্বা স্কুলের প্রায় ৬ হাজার নৃত্যশিল্পী বিশেষ পোষাকে নৃত্য প্রদর্শন করে মোহিত করেন। অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের সংস্কৃতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়। ব্রাজিলের গর্ব আমাজনের উপস্থিতি ফুটিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সময় বেজে ওঠে বানর, ম্যাকাউ ও বৃষ্টির শব্দ। ব্রাজিলের বিখ্যাত প্রায় সব শিল্পী গান গেয়ে মুগ্ধ করেন। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণটা ছিলেন ব্রাজিলিয়ান সুপার মডেল গিজেল বুন্দচেন। গতকাল প্রতিযোগিতায় নামেন বাংলাদেশী তীরন্দাজ শ্যামলী রায়। আরচারির র্যাঙ্কিং রাউন্ডে ৫৩তম স্থান অর্জন করেন বাংলাদেশের এ মহিলা তীরন্দাজ। নকআউট পর্বে আগামীকাল শ্যামলী রায় মোকাবিলা করবেন মেক্সিকোর শীর্ষ আরচার গাব্রিয়েলা বায়ার্দোকে। র্যাঙ্কিং রাউন্ডে ১২তম স্থান অর্জন করেন বায়ার্দো। রিও অলিম্পিকসে আজ প্রতিযোগিতায় নামছেন পৃথক ২০ ক্রীড়ার খেলোয়াড়রা। এতে পদক নিষ্পত্তি হবে আরচারি, সাইক্লিং, ডাইভিং, ফেন্সিং, জুডো, শুটিং, ভারোত্তোলন ও সাঁতারে।