সপরিবারে ১৫ মাস নিখোঁজ তরুণ ব্যারিস্টার

Slider জাতীয়

f0bd76526927e2b93fd2d651b4570475-ONLINE

বগুড়ার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর লন্ডন ফেরত ব্যারিস্টার ছেলে এ কে এম তাকিউর রহমান পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব গিয়ে ১৫ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি সঙ্গে নিয়ে গেছেন স্ত্রী রিদিতা রাহেলা এবং দেড় বছর বয়সী মেয়ে রুমাইশা রহমানকে।
তাকিউরের বাবা বগুড়া জেলা নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল খালেকের ভাষ্য, ঢাকার কলাবাগানের লেক সার্কাসের একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন তাকিউর। তিনি হাইকোর্টে আইন ব্যবসার পাশাপাশি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইন বিষয়ে পড়াতেন। গত বছরের ৪ এপ্রিল সপরিবারে ঢাকা থেকে সৌদি আরব যান তিনি। ১৩ এপ্রিল সেখান থেকে ফোন করে ছেলে তাঁকে জানান, ২২ এপ্রিল দেশে ফিরবেন তাঁরা। কিন্তু এরপর থেকে ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনির কোনো খোঁজ মেলেনি। এ ব্যাপারে ওই বছরের ৯ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া শহরে নিজের বাসায় বসে তাকিউরের বাবা বলেন, তাকিউর তাঁর একমাত্র ছেলে। জন্ম ১৯৮৬ সালের ১১ মার্চ। ১৯৯৫ সালে ছেলেকে পড়াশোনার জন্য ভারতে পাঠান। চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন দার্জিলিং সাউথ হারম্যান স্কুলের ইংরেজি মাধ্যমে। দুই বছর পর সেখান থেকে ভর্তি করানো হয় দার্জিলিং কালিনকো স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে রকভ্যালি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৪ সালে ‘ও’ লেভেল পাস করে দেশে ফেরেন তাকিউর। ২০০৬ সালে ‘এ’ লেভেল পাস করে ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যান। ‘বার অ্যাট ল’ করে ২০১১ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরেন তাকিউর।

ছেলে সম্পর্কে বাবা বলেন, ‘লন্ডন থেকে ফেরার পর তাকিউরের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করেছিলাম। ভারতে পড়াশোনা করার সময় গান-বাজনার প্রতি ঝোঁক ছিল। লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে নিজের পছন্দে চট্টগ্রামের বাসিন্দা সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার মেয়েকে বিয়ে করেন তাকিউর। বিয়ের পর থেকেই কলাবাগানের লেক সার্কাসেই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বগুড়ায় খুব একটা যেতেন না। ২০১৪ সালের কোরবানির ঈদে দুই দিনের জন্য সর্বশেষ বগুড়ার গিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগুড়ার একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলার পর নিখোঁজ তরুণদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে জিডির সূত্র ধরে তাকিউরের বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। এরপর তাঁর পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, ৩০ বছর বয়সী এই আইনজীবী পাঁচ বছর আগে দেশে ফিরলেও তাঁর জাতীয় পরিচয় নেই। একাধিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করলেও সেগুলো নিজের নামে নিবন্ধিত ছিল না। সৌদি আরবে থাকলে ১৫ মাসে অন্তত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হতো। এসব কারণে তাকিউরকে নিয়ে সন্দেহের কারণ আছে। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বিদেশে বড় হওয়া তাকিউর হয়তো আইএসে যোগ দিতে সৌদি আরব হয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন।

তাকিউরের বাবা বলেন, সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে ছেলের সন্ধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো হদিস মেলেনি। এত দিন ছেলেকে নিয়ে কোনো সন্দেহ না হলেও গোয়েন্দারা ঘনঘন খোঁজখবর করায় এখন তাঁর সন্দেহ হচ্ছে, ছেলে হয়তো আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া গেছেন।

বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ মাস ধরে নিখোঁজের বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল বুধবার বাসায় গিয়ে পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’

বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ওমরাহ পালন করতে গিয়ে সন্দেহজনকভাবে নিখোঁজের বিষয়টি এত দিন চাপা পড়েছিল। তবে গুলশান হামলার পরে নিখোঁজদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তাকিউরের বিষয়টি বের হয়ে আসে। তাঁর অবস্থান এবং নিখোঁজ রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রয়োজনে সৌদি সরকার বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার সহায়তা নেওয়ার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *