বিমানযাত্রীদের খরচ বাড়ছে

Slider টপ নিউজ

25627_f3

 

 বিমানবন্দর ব্যবহারকারী বহির্গমন যাত্রীদের ভ্রমণ খরচ বাড়তে যাচ্ছে। প্রতি জন বিমানযাত্রীকে ‘বিমানবন্দর ফি’ এবং ‘যাত্রী নিরাপত্তা ফি’ নামে আলাদা দুইটি ফি জমা দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি যাত্রীপ্রতি ১০ ডলার, সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়া অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি ২০ ডলার ও অভ্যন্তরীণ যাত্রীর ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে যাত্রী নিরাপত্তা ফি যাত্রীপ্রতি সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে ২০ ডলার, সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়া অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ১৫ ডলার ও অভ্যন্তরীণ যাত্রীর ক্ষেত্রে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সার্কভুক্ত দেশের একজন আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রীকে প্রায় দেড় হাজার টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়া অন্যান্য দেশের বিমানযাত্রীদের প্রায় তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে। অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানযাত্রীদের গুনতে হবে অতিরিক্ত ২৫০ টাকা। অতিরিক্ত এ ফি নির্ধারণের প্রস্তাব বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের ২২৫তম সভায় অনুমোদন পেয়েছে। এখন প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন মিললেই বিমানবন্দর ও যাত্রী নিরাপত্তা ফি নামে আলাদা দুইটি ফি আদায় করা হবে। সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশনের কর্তৃপক্ষের সভায় পাকিস্তান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে আদায় করা নিরাপত্তা ফি ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি’র হার তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, পাকিস্তানে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ১০ ডলার ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ১০ ডলার, ভারতে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ১৫ ডলার ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি পাঁচ দশমিক ১৮ ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ৫ ডলার ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি চার দশমিক পাঁচ ডলার, যুক্তরাজ্যের অরহামটিস ভ্যালি বিমানবন্দরে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ৬ পাউন্ড আদায় করা হচ্ছে। এর আলোকে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ১৫ ডলার ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ১৫ ডলার এবং সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়া যাত্রীপ্রতি নিরাপত্তা ফি ৩০ ডলার ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ৩০ ডলার নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়। সিভিল এভিয়েশনের পরিচালনা পর্ষদ আলাপ আলোচনার পর মাঝামাঝি একটি রেট নির্ধারণ করে দেয়। পর্ষদ সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের কাছ থেকে যাত্রী নিরাপত্তা ফি এবং বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা কর্মপত্রে সিভিল এভিয়েশন জানায়, বিশ্বের প্রতিটি দেশ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমানবন্দরগুলোর যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করছে। বেসামরিক বিমান চলাচল ক্ষেত্রে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তার মান দিন দিন জোরদার করা হচ্ছে। তাই বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর যাত্রীসেবার মানসহ নিরাপত্তার মান উন্নত করা প্রয়োজন। এ জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। এ টার্মিনাল ভবন নির্মাণে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রী, বিমানসংস্থা এবং এ বিমানবন্দর দিয়ে রপ্তানিকৃত মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যুক্তরাজ্যের একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাকে নিয়োগ করেছে। বর্তমানে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আরো কিছু উন্নতমানের যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজন পড়বে। এতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের প্রায় ১৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের পরিকল্পনা নিলে খরচ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। এছাড়া, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখাসহ সব বিমানবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম সরকার হাতে নিয়েছে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগান দেয়া হবে এ কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো ব্যবহারকারী যাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায়ের মাধ্যমে সরকার অতি সহজেই এসব অর্থের সংকুলান করতে পারে। এদিকে ফি বাড়ানোর বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের কর্মপত্রে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিমানবন্দরের প্রদত্ত সেবার উপর ভিত্তি করে বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের চার্জ বা ফি, যেমন- প্যাসেঞ্জার সার্ভিস ফি, নিরাপত্তা ফি, বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি আদায় করা হয়ে থাকে। এ ধরনের ফি আদায় করে যে অর্থের সংকুলান হয় তা বিমানবন্দরগুলোর বিভিন্ন সেবার বিপরীতে ব্যয় হওয়া খরচ মেটানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব নানা যুক্তি দিয়েই বিমানবন্দর ব্যবহারকারী বহির্গমন যাত্রীদের ভ্রমণ খরচ বাড়ানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *