গ্রাম বাংলা ডেস্ক: রাজশাহীতে জামায়াতের মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশি অ্যাকশন ফের উত্তপ্ত হচ্ছে মাঠের রাজনীতি। সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে ২০ দলীয় জোট। গতকাল জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে এমন ইঙ্গিতই মিলেছে। বৈঠক শেষে সোমবার সারা দেশে হরতাল আহবান করে ২০ দল। এর আগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ের প্রতিবাদে দুই দিনের হরতাল আহবান করে জোটের শরিক জামায়াত ইসলামী। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের হরতাল পালিত হয়। আজ পালিত হচ্ছে দ্বিতীয় দিনের হরতাল। জামায়াতের পর আগামীকাল হরতাল পালন করবে ২০ দল। গতকাল ২০ দলের পক্ষ থেকে হরতাল ঘোষণা দেয়ার সময় বলা হয়েছে, সামনে দাবি আদায়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। সর্বশেষ ৪ঠা জানুয়ারি থেকে ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল পালন করেছিল ১৯ দলীয় জোট।
এদিকে বিরোধী জোটের কর্মসূচির বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল গোছানোকে এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে বিরোধী জোট মাঠে নামলে ক্ষমতাসীন দল ও জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।
গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিরোধী জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে চূড়ান্ত হয় হরতাল কর্মসূচি। পরে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে হরতাল বাস্তবায়নের কৌশল ও প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
এদিকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের দেয়া আমৃত্যু কারাদণ্ডের প্রতিবাদে ঘোষিত দু’দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ৬টা থেকে আগামীকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালন করবে জামায়াত।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আলমগীর বলেন, গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের কাছে অর্পণ করেছে। এতে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা এমন একটি সংসদের কাছে অর্পণ করা হলো যা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এই অনৈতিক ও অবৈধ পার্লামেন্টের কোনও এখতিয়ার নেই সংবিধান সংশোধন করার। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অবৈধ। বাংলাদেশের জনগনের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি। তিনি বলেন, এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা একটি দলের, আওয়ামী লীগের অধীনে চলে গেলো। বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা এখন থেকে আওয়ামী লীগের। গণতন্ত্রের একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান স্বাধীন বিচার বিভাগ সেটাও দলীয়করণ চূড়ান্ত হলো। এই সংশোধনীর ফলে জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবার আশংকা সব সময়ই থাকবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ৭২ সালের সংবিধানে এই ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীতে শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। যা এতদিন পর্যন্ত বলবৎ ছিল। এই ব্যবস্থায় কোন পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি বা বিতর্ক ওঠেনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে এই ষোড়শ সংশোধনীর মধ্যদিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণের আয়োজন সম্পূর্ণ করেছে। দেশের বরেণ্য সংবিধান বিশেষজ্ঞ আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কেউই এই সংশোধনীকে সমর্থন করেননি। মির্জা আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এই সংশোধনী মেনে নিতে পারে না। সংবিধানের এই সংশোধনী বাতিলের দাবিতে আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর সোমবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করবে ২০ দল। সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা এ হরতাল পালনের জন্য আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, হরতাল চলাকালে হজযাত্রীদের যানবাহন, খাবার হোটেল, ওষুধের দোকান, ফায়ার ব্রিগেট, এ্যাম্বুলেন্স, সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের ব্যবহৃত যানবাহন এবং লাশ বহনকারী গাড়িসমূহ হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে যৌথসভা করেছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি দল গোছানোর জন্য নেতাদের তাগিদ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বিরোধী জোটের সম্ভাব্য আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বিরোধী জোটের সরকারি বিরোধী কর্মকাণ্ডের কথা বিবেচনায় রেখে সামনে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি ও দল গোছানোর তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় তৎপরতা বাড়াতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও পরামর্শ দিয়েছেন।
রাজশাহীতে শিবির-পুলিশ সংঘর্ষে
সভাপতিসহ আহত ২৫, আটক ৫
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীতে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে মহানগর শিবির সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে নগরীর লোকনাথ স্কুল মোড় এলাকায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে এ সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বোয়ালিয়া থানার দুই পুলিশ কনস্টেবলও আহত হন। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর সোনাদিঘী মনিচত্বর থেকে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। মিছিলটি রাজারহাতা লোকনাথ স্কুলের মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শতাধিক রাউন্ড শটগানের গুলি, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে মহানগর শিবির সভাপতি ডা. আনোয়ার হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিনসহ অন্তত ২৫ নেতাকর্মী আহত হন। এ ছাড়া মিছিলকারীলা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
মহানগর শিবিরের প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে চড়াও হয়। এ সময় শটগানের গুলি ও টিয়ার শেলের আঘাতে শিবির সভাপতি-সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অন্তত ২৫ আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে শিবির কর্মী সাজ্জাদের পা ভেঙে যায় এবং আবদুর রহমান নামের এক শিবির কর্মী মাথায় গুরুতর আঘাত পান। তাদের নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান এই শিবির নেতা।
বোয়ালিয়া থানার ওসি এস এম আবদুস সোবহান জানান, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা রাজারহাতা লোকনাথ স্কুলের সামনে সমাবেশ করার চেষ্টা করছে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় ইটের আঘাতে দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার শেল ও ফাঁকা শটগানের গুলি ছোড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক এম নজরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল আবুল কালাম আজাদ যৌথ বিবৃতিতে জামায়াত-শিবিরের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা ও গুলি চালানোর ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে পুলিশ গুলি চালিয়ে যে আচরণের প্রকাশ ঘটিয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরনের ফ্যাসিবাদী আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা। তারা বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিং করা সংবিধান স্বীকৃত একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। এ অধিকারে বাধা দেয়া অন্যায়-অযৌক্তিক। অথচ সারা দেশে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালনে তৌহিদী জনতা রাজপথে বেরিয়ে এলে তাদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে আহত ও গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংযত আচরণের আহ্বান জানান।