ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন; কল্যাণপুরে অভিযান : আমরা যা এখনো জানি না

Slider জাতীয়

 205441kalyanpur0_kalerkantho_pic

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে নয় কথিত ‘জঙ্গি’ নিহতের খবর জানিয়েছে পুলিশ৷ রাতভর পাল্টাপাল্টি ‘গুলি ছোড়াছুড়ির পর’ পুলিশের অভিযানের প্রশংসার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে৷

ঢাকায় পুলিশের অভিযানে নয় ব্যক্তি নিহতের খবর ইতোমধ্যে গোটা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে৷ পুলিশ নিহতদের ‘জঙ্গি’ হিসেবে পরিচয় দিলেও, অভিযানের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷ যেসব প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি সেগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো এখানে:

কল্যাণপুরে নিহতরা আসলে কারা?
পুলিশের তরফ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা সবাই ‘জঙ্গি’ ছিল, যাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে এবং যাদের অধিকাংশই ছিল উচ্চশিক্ষিত৷ এমনকি গুলশান হামলায় অংশ নেয়ারাও এই একই গ্রুপের সদস্য৷ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানানোর পাশাপাশি এটাও জানিয়েছেন, নিহতদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷ প্রশ্ন হচ্ছে, যাদের নাম, ঠিকানা, পরিচয় এখনো পুলিশ জানে না, তাদের জঙ্গি পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, গুলশান হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে কীভাবে নিশ্চিত হলো পুলিশ? নিহতরা আসলে কারা?

চার পিস্তল দিয়ে রাতভর মুহুর্মুহু গুলি ছোড়া কিভাবে সম্ভব?
পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কথিত জঙ্গিরা পুলিশের দিকে কমপক্ষে ১১টি গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছে, আর রাতভর মুহুর্মুহু গুলি ছুড়েছে৷ অভিযানের পর চারটি পিস্তল, ২২ রাউন্ড গুলি, ২৩টি গ্রেনেড, কিছু চাকু ও তলোয়াড় এবং পাঁচ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ উদ্ধারের এই তালিকা থেকে পরিষ্কার যে, জঙ্গিদের কাছে গুলি ছোড়ার মতো পিস্তল ছিল চারটি৷ প্রশ্ন হচ্ছে, এই চার পিস্তল দিয়ে হাজার খানেক পুলিশের সঙ্গে কতক্ষণ লড়াই সম্ভব? আর সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে পুলিশের দিকে এত গ্রেনেড, গুলি ছোড়া হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি হওয়ার কথা৷ পুলিশের সেটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে তা আরো বিস্তারিত প্রকাশ হওয়া উচিত৷

কালো পাঞ্জাবি আর জিন্স কি কথিত জঙ্গিদের রাতের পোশাক?
গুলশান হামলার সময় জঙ্গিরা রেস্তোরাঁয় গিয়েছিল সাধারণ পোশাকে৷ সিরিয়া, ইরাক এবং সংশ্লিষ্ট দেশ দু’টির আশেপাশে ছাড়া অন্য কোথাও ‘ইসলামিক স্টেট’-এর জঙ্গিরা কালো পাঞ্জাবি পরে হামলায় অংশ নিয়েছে এমন তথ্যপ্রমাণ তেমন একটা নেই৷ বরং স্থানীয় জনতার সঙ্গে মিশে যাওয়া যায় এমন পোশাকে তাদের হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়৷ কল্যাণপুরে নিহতদের তাই রাতেরবেলা কালো পোশাক পড়ে থাকাটা সন্দেহের উদ্রেক করছে কারো কারো মনে৷ প্রশ্ন জেগেছে, এটা কি তাদের ঘুমানোর পোশাক?

‘জেএমবি’ নাকি ‘ইসলামিক স্টেট?’
পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, নিহত জঙ্গিরা জেএমবির সদস্য ছিল৷ তবে পুলিশের উদ্ধারকৃত আলামতে যে পতাকা, কালো পোশাক ও পাগড়ি দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর মতো পোশাক ও পাগড়ি পরা গুলশানের হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করেছিল ‘ইসলামিক স্টেট’-এর সংবাদসংস্থা ‘আমাক’৷ প্রশ্ন হচ্ছে, এই কথিত জঙ্গিরা কি ইসলামিক স্টেটের জন্য কাজ করতো?

‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি কয়জন দিয়েছিল?
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যরাতে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে ঘটনাস্থল প্রকম্পিত করে তোলা হয়েছিল৷ শব্দের ব্যাপকতায় কমপক্ষে বিশ থেকে ২৫ জন একসঙ্গে এরকম শব্দ করেছে বলে মনে করছেন তারা৷ সেটা যদি হয়, নিহতের সংখ্যা শুধু নয়জন কেন? তাদের সহযোগী আরো কেউ কি ছিল যাদের ধরা যায়নি?
কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে যদি সত্যিই নয়জন জঙ্গি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অংশ নেয়ার পর গুলিতে নিহত হয়ে থাকে, তাহলে এটা পরিষ্কার যে বাংলাদেশে উগ্রপন্থিরা তাদের শক্তি সাম্প্রতিক সময়ে যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে৷ আর এ রকম পরিস্থিতি একেবারে নিঁখুতভাবে মোকাবিলার কৃতিত্ব অবশ্যই পুলিশ পেতে পারে, যদি উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর মেলে৷

– See more at: http://www.kalerkantho.com/online/national/2016/07/26/385806#sthash.zs4ZtXFb.dpuf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *