একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর আবেদনটি শুনানির জন্য আগামীকাল সোমবার সর্বোচ্চ আদালতের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চের কার্যতালিকায় আজ রোববার দেখা যায়, মীর কাসেমের আবেদনটি শুনানির জন্য ৬৩ নম্বরে রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে রিভিউ শুনানি মুলতবির জন্য আরেকটি আবেদন।
আপিল বিভাগের এই বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
এদিকে মীর কাসেমের রিভিউ আবেদনের শুনানি দুই মাস মুলতবি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছেন তাঁর আইনজীবী। এ বিষয়ে মীর কাসেমের ছেলে ও আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, আপিল বিভাগের রায়ে এসেছে তাঁর (মীর কাসেম) অভিযোগ গঠনের আদেশ ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এ বিষয়টির ওপর গবেষণা ও প্রস্তুতির জন্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সময় চেয়েছেন। ওই প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
গত ১৯ জুন ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মীর কাসেম। ২১ জুন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন চেম্বার আদালত ওই আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২৫ জুলাই দিন নির্ধারণ করে দেন।
একাত্তরের গুপ্তঘাতক কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে গত ৮ মার্চ রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। ৬ জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছার পর মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই রাতেই মৃত্যুপরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। পরদিন কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেমকে তা পড়ে শোনানো হয়। এরপর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন তিনি।
আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করায় দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে। এই আবেদন খারিজ হলে শেষ সুযোগ হিসেবে মীর কাসেম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। প্রাণভিক্ষা না চাইলে কিংবা ওই আবেদন করার পর তা নাকচ হলে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
২০১২ সালের ১৭ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মীর কাসেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, মীর কাসেমের বিরুদ্ধে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির আদেশ ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।