রংপুরে জাপার সমাবেশে হামলা : সংবাদিকসহ আহত ২০

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ

2496c69dbd78c8a92537eeeb23a84be2-images
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: শনিবার পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে ১৪৪ ধারা জারির পর এরশাদপন্থী নেতাকর্মীরা শাপলা চত্বরে এবং রাঙ্গাপন্থী নেতাকর্মীরা পায়রাচত্বরে সমাবেশ করেছে। এরশাদপন্থীদের সমাবেশে ককটেল বিষ্ফোরণ ও ইটপাটকেলে নিক্ষেপের ঘটনায় নগরীতে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ১ সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। এরশাদ টেলিকনফারেন্স বক্তব্যে বলেন, তোমরা আসিফদেরকে সাপোর্ট করো। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নতুন কমিটি অনুমোদন দেয়ায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অভিনন্দন জানিয়ে এরশাদপন্থী এবং প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার দলীয় পদ পদবি ও কমিটি পুনবর্হালের দাবিতে রাঙ্গাপন্থীরা একই সময়ে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে সমাবেশ ও বিক্ষোভের ডাক দিলে প্রশাসন শনিবার সকাল ৬ টা থেকে সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ফলে সকাল থেকেই এরশাদ পন্থী নেতাকর্মীরা নগরীর সেনপাড়ায় এরশাদের পৈত্রিক নিবাস স্কাই ভিউ লাঙ্গল ভবনে এবং রাঙ্গাপন্থী নেতাকর্মীরা সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অবস্থান নেয়।
দুপুর সোয়া ১২ টায় এরশাদ অনুমোদিত কমিটির জেলা ও মহানগর কমিটি অভিনন্দন মিছিল নিয়ে ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড হয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশ শুরুর ১ মিনিট পরেই চত্বরের পশ্চিম পার্শ্বে মিস্টাঙ্গন বিল্ডিংয়ের নির্মানাধীন ভবন থেকে পরপর দুটি ককটেল হামলা হয় সমাবেশ স্থলে। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এসময় এরশাদপন্থী নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের ধাওয়া করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ককটেল হামলায় অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজের রিপোর্টার সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, জাতীয় ছাত্রসমাজ নেতা আমিনুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি কর্মী সাবেক কাউন্সিলর বাটুয়া, শামীম, ফরহাদ, হীরা, নজরুল, রমজানসহ অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার পর সেখানে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটির আহবায়ক সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, সদস্য সচিব সাবেক এমপি এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, মহানগর কমিটির আহবায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সদস্য সচিব এসএম ইয়াসির প্রমুখ। বেলা ১২  টা ৪৫ মিনিটে সেখানে এরশাদ টেলিকনফারেন্সে বক্তব্যে বলেন, ‘তোমরা ভালো আছো। তোমরা আসিফদেরকে সাপোর্ট করো। আমি তোমাদের সাথে আছি। তোমরা ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলো।’ এরপর মিছিলটি গান্ড হোটেল মোড়ে হয়ে লাঙ্গল ভবনে যেতে চাইলে পুলিশ তাতে বাঁধা দেয়। পরে তারা কোচ স্ট্যান্ড হয়েই মিছিলটি লাঙ্গল ভবনে গিয়ে শেষ হয়।
মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, জনসমর্থন বঞ্ছিত রাঙ্গা তার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে এরশাদভক্ত হাজার হাজার মানুষের ওপর ককটেল হামলা চালিয়েছে। এতে তার ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।  তিনি দাবি করেন এই হামলা কাপুরোষিত। এর দ্বারা প্রমাণ হয়ে গেছে রাঙ্গার পায়ের তলায় মাটি নেই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা আগেই প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়ে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে মাইকিংসহ প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু আমাদের সমাবেশ বানচাল করার জন্যই রাঙ্গা ষড়যন্ত্র করে সেখানেই সমাবেশের ডাক দিয়েছে। রাঙ্গা প্রশাসনকে ব্যবহার করে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করিয়েছে।
জাপার এই নেতা বলেন, শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে আমি রাঙ্গাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, প্রয়োজনে ভেন্যু পরিবর্তন করে জনসমর্থন প্রদর্শনের জন্য।প্রশাসনকে বলেছিলাম, উভয়কে পৃথক পৃথক জায়গায় ভেুন্য ঠিক করে দিতে। কিন্তু প্রশাসন সেটি করে নি। উল্টো আমাদের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
এদিকে শাপলা চত্ত্বরে এরশাদ পন্থীদের সমাবেশ চলাকালেই সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির অফিস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পায়রা চত্বরে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম পদ এবং রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্বহালের দাবিতে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে। সেখানে বক্তব্য রাখেন বিলুপ্ত জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল ইসলাম, জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, সেক্রেটারী হাসানুজ্জামান নাজিম, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি শামীম সিদ্দিকী,  জাতীয় ছাত্র সমাজের জেলা সভাপতি আশরাফুল হক জবা, জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি রাজু আহমেদ, মহানগর যুব সংহতির সভাপতি ইউসুফ আহমেদ, মহিলা পার্টির রাবেয়া খাতুন ও রোজিনা বেগম প্রমুখ।
এসময় রাঙ্গাপন্থী নেতারা ঘোষণা দেন, প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গার পদ পদবী এবং জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্বহাল না করা পর্যন্ত মাঠে তারা মাঠে থাকবেন। প্রয়োজনে ঢাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও তারা অবস্থান গ্রহন করবেন। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, রাঙ্গা ছাড়া রংপুরে কোন জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব নেই। ষড়যন্ত্র করে মোস্তফা আসিফ ইয়াসিররা জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করার জন্য এরশাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রংপুরে জাতীয় পার্টিকে রক্ষার জন্য তারা মাঠে থাকবেন।
বিলুপ্ত জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সামসুল ইসলাম জানান, আমরাই এরশাদপন্থী। বহিষ্কৃত নেতাকর্মীরা নিজেরাই ককটেল ফাটিয়ে আমাদের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে।
কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল কাদের জিলানী জানান, ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনায় এখণ পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করাও হয় নি।  ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথেই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
এরশাদ গত ১০ সেপ্টেম্বর পার্টির প্রেসিডিয়াম পদ থেকে অব্যাহতি দেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে। একই সাথে রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করে আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। মুলত আগের কমিটির মধ্য থেকে শুধু জেলা ও মহানগর সভাপতি প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বাদ দিতেই এরশাদের এই আয়োজন। নতুন করে মহানগর কমিটিতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে আহবায়ক ও এসএম ইয়াসিরকে সদস্য সচিব, সাবেক পৌর মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক ও সদ্য বিলুপ্ত মহানগর কমিটির সেক্রেটারী এ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন কাদেরীকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়।জেলাতে সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন মাস্টারকে আহবায়ক ও ভাতিজা সাবেক এমপি এইচএম শাহরিয়ার আসিফকে সদস্য সচিবএবং  সদ্য বিলুপ্ত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টুকে যুগ্ম আহবায়ক করা হয়।
এর পর থেকে রাঙ্গা অনুসারীরা পার্টি অফিস দখলে নিয়ে রাঙ্গার পদ পদবি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা সমাবেশ করে। আর এরশাদ পন্থীরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলায় গনসংযোগ করে এরশাদভক্তদের উৎসাহিত করে শনিবারের  সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। এরপর একই স্থানে রাঙ্গা পন্থীরা সমাবেশের ডাক দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *