সাংসদদের তোপের মুখে সুরঞ্জিত, চ্যালেঞ্জ সেলিমের

Slider রাজনীতি

522ae3b457206-suranjit_sen

মন্ত্রীদের অনুপস্থিতি ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের মন্তব্য নিয়ে সংসদে বক্তব্য দিতে গিয়ে দলীয় সাংসদদের তোপের মুখে পড়েছেন দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সুরঞ্জিত বলেন, বার্নিকাট প্রকারান্তরে বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছেন। যেন চাইলেই তারা বাংলাদেশ দখল করে ফেলতে পারেন।
তাঁর এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ সরকারি দলের বেশ কয়েকজন সাংসদ। তাঁরা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান। এ নিয়ে সংসদে কিছু সময়ের জন্য উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
তবে সংসদের সভাপতি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, বৈঠকে মন্ত্রী নেই, এটা ঠিক নয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্যে অসংসদীয় শব্দ থাকলে তা এক্সপাঞ্জ করা হবে। তিনি বার্ণিকাটের বক্তব্যের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিবৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
আজ বৃহস্পতিবার সংসদের বৈঠকে মাগরিবের নামাজের বিরতির পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশকে তারা দখল করতে চান না। এখন দেখা যাচ্ছে তারা চাইলে বাংলাদেশ দখল করতে পারেন। দখল বহালও রাখতে পারেন। এটা এক ধরনের হুমকি। এ জন্য সংসদে প্রথম সারির কোনো মন্ত্রী নেই। একজন আছেন—রাশেদ খান মেনন, তিনি তো ‘ভেজাইল্লা’। অন্য মন্ত্রীরা কী মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে ভয় পেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেন। এভাবে সংসদের বৈঠক চালিয়ে কি লাভ?’ বৈঠক চালাতে হলে অন্তত সামনের সারির দু’একজন মন্ত্রীকে থাকতে হবে।

সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, এ ধরনের হুমকি কূটনৈতিকের দেওয়া শোভনীয় নয়। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোরালো আপত্তি দেবেন বলে তিনি আশা করি।

এরপর সরকারি দলের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আত্মমর্যাদা ও সম্মান আছে। মার্কিন একজন কূটনৈতিক হুমকি দেবেন, বাংলাদেশকে তারা দখল করবে-এটা কোন ধরনের আচরণ। ওই কূটনীতিককে ডেকে এনে অবশ্যই তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করতে হবে। তিনি এ সময় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দুঃখ প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এটা ইরাক নয়, আফগানিস্তান নয় বা লিবিয়া নয়। এটা বাংলাদেশ।
কিন্তু সরকারি দলের সাংসদ আ স ম ফিরোজ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শামীম ওসমান ও হাছান মাহমুদ সুরঞ্জিতের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান। আ স ম ফিরোজ বলেন, এটা নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আপত্তিকর কোনো কিছু বলেননি। এ নিয়ে তৈরি বিতর্ক পুরোটাই মনগড়া।

এ সময় সংসদে সামনের সারিতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, পেছনের সারিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ও পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং একাধিক প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

এরপর ফ্লোর নিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ওনার (সুরঞ্জিত) বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে যেন মন্ত্রীরা পালিয়ে গেছেন। এ ছাড়া ‘ভেজাইল্লা’ মন্ত্রী শব্দটি মনে হয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অলক্ষ্যে বলেছেন। এটা এক্সপাঞ্জ করতে হবে। নানক বলেন, মন্ত্রীরা কেবল ঢাকায় বসে মন্ত্রিত্ব করেন না। তারা শুক্র ও শনিবারে এলাকার জনগণের কাছে যান। এখন যারা অনুপস্থিত তারা আগামীকাল এলাকায় যাবেন। নানক আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কু মতলব নেই। বাংলাদেশকে জঙ্গি দমনে তারা সাহায্য করতে চায়। কোনো দখল বা অশুভ তৎপরতর জন্য তারা আসেনি।
সরকারি দলের শামীম ওসমান বলেন, সুরঞ্জিত সেনের বক্তব্যে এই সংসদকে অসম্মানিত করা হয়েছে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের অসম্মানিত করা হয়েছে। এটা জাতীয় সংসদ। এখান থেকে যে বক্তব্য হবে তা একটি বার্তা বহন করবে। এটা দেশের ভেতরে একটি ষড়যন্ত্রের গন্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *