গুলশান অ্যাটাক ৪ সন্দেহভাজনের ভিডিও প্রকাশ

Slider জাতীয় টপ নিউজ

 

23417_f1
গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন চারজনের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওতে তাদের পরিচয় স্পষ্ট না হওয়ায় এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে। এক মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে ঘটনার রাত ৮টা ৪২ মিনিট থেকে ৯টা ৫৬ সেকেন্ড পর্যন্ত কয়েকটি  দৃশ্য ধরা পড়েছে। এতে অন্তত চারজনকে আর্টিজান রেস্তরাঁর সামনের সড়কে সন্দেহমূলক ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। যিনি একটি হাত ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটছিলেন। এছাড়া ভিডিওতে দেখা যায় সন্দেহভাজনরা আর্টিজানের প্রবেশপথের পাশেই ঘোরাঘুরি করছিল। গতকাল ওই ভিডিওটি র‌্যাবের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি দৃশ্যে ধারণ করা ব্যক্তিদের পরিচয় চিহ্নিত করতে পারলে তা জানাতে জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে র‌্যাব। এজন্য ০১৭৭৭৭২০০৫০ মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ঘটনাস্থলের পাশে ও ১০০ গজের মধ্যে অবস্থিত একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্রে ধরা পড়া চারজনের সন্দেহজনক আচরণ দেখে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি সাদা প্রাইভেট কারও রয়েছে সন্দেহের তালিকায়।
র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান মানবজমিনকে বলেন, ভিডিও চিত্রটির বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঘটনার আগে ঘটনাস্থলের আশপাশে সন্দেহজনকভাবে কয়েকজন নারী-পুরুষকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। তাতে আরও চার সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে তদন্তের অগ্রগতিও হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানানো উচিত হবে না। সবার কাছে তাদের পরিচয়ও জানতে চাওয়া হয়েছে।
গত ১লা জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়ক এবং ৭৫ নম্বর সড়কের সামান্য অংশে ওই বাড়ির ক্যামেরা-১ এ এই ভিডিও ধারণা করা হয়। র‌্যাবের চিহ্নত সন্দেহভাজন-১ ব্যক্তিটি ধূসর বা সাদা রংয়ের শার্ট বা প্যান্ট পরা। শার্টের শোলডার কালো। প্রথমে এই ব্যক্তি রাস্তা পার হয়ে একটি রিকশার দিকে এগিয়ে যায়। চালকের সঙ্গে কিছু কথা বলার পর রিকশাটি ওই স্থান ছাড়ে। ভিডিওর অপর অংশে সন্দেহভাজন-১ কে আবার ক্যামেরার সামনে আসতে দেখা যায়। এর ৩৪ সেকেন্ড পর ভিডিওর অপর অংশে দেখা যায় একই ব্যক্তি ফুটপাথ ধরে আবার অপর একটি রিকশার দিকে এগিয়ে যায়। ফের কথা হতেই ওই রিকশা চালকও ওই স্থান ত্যাগ করে। কিছুক্ষণ পর একটি সাদা রংয়ের প্র্রাইভেটকার এসে কিছু সময়ের জন্য দাঁড়ালে পাশ দিয়ে ওই ব্যক্তি দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে বিপরীত পাশে যায়। ওই প্রাইভেট কারটিকেও সন্দেহের তালিকায় নেয়া হয়েছে। একই ব্যক্তিকে অপর এক সন্দেহভাজনের কাছে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া ভিডিও চিত্রের একাধিক অংশে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ২ ও ৩ কে একাধিকবার ক্যামেরার সামনে ঘোরাফেরা করতে ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আর কালো ওড়না পরিহিত সন্দেহভাজন এক নারীকে ফুটপাথ ধরে যাওয়ার সময় তার হাতব্যাগ এক হাত থেকে অন্য কাঁধে তুলে নিতে দেখা যায়। আবার অন্য অংশে রাস্তা ধরে একই নারীকে একই দিকে যেতে দেখা গেছে।
গত ১লা জুলাই কূটনীতিকপাড়া গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয় ওই রেস্তরাঁয় জঙ্গিরা ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে। প্রাথমিক খবর পেয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে গ্রেনেড হামলায় মারা যান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। রাতেই জঙ্গিরা ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ওই অভিযানে ছয় হামলাকারী নিহত এবং একজনকে আটক করা হয়। নজিরবিহীন এ হামলায় নিহত পাঁচ জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আইএস নিজেদের যোদ্ধা দাবি করে। তাদের ছবি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়ও পাওয়া যায়। নিহত জঙ্গিরা উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য। তারা কয়েক মাস ধরেই নিখোঁজ ছিল। এ ঘটনার পর আইএস আরো তিন যুবকের ছবি প্রকাশ করে বাংলাদেশে আরো হামলার হুমকি দেয়। ওই তিন যুবকের পরিচয়ও বেরিয়ে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জঙ্গিকাণ্ডে জড়িত কয়েক যুবক বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এদিকে গুলশান হামলার পর ১০ যুবকের ছবি প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যারা দীর্ঘদিন থেকে নিখোঁজ। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সন্ধান চেয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। পরে আরো কয়েকজন যুবকের পরিবার তাদের সন্ধান চেয়েছে। সর্বশেষ নিখোঁজ এমন সাতজনের তথ্য প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে এক চিকিৎসক পরিবারের পাঁচ সদস্য রয়েছেন। স্ত্রী সন্তান নিয়ে এ চিকিৎসক এক বছর ধরে নিখোঁজ। তার স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা পরিবার নিয়ে এ চিকিৎসক সিরিয়ায় চলে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *