সাড়ে ৬ বছরে ১৯,৫৪৬ প্রবাসীর লাশ এসেছে : প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী

Slider জাতীয়
136913_15

২০১০ সাল হতে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ১৯ হাজার ৫৪৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশীর লাশ দেশে ফেরত আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।

সংসদে প্রশ্নোত্তরে আজ সোমবার এম, আবদুল লতিফের (চট্টগ্রাম-১১) এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।

বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে ফেরত আনা এসব লাশের মধ্যে ১৫ হাজার ৬১১ জন প্রবাসী কর্মী হওয়ায় তাদের প্রতি পরিবারকে লাশ পরিবহন ও দাফন খরচ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা করে মোট ৫৩ কোটি ৫৬ লাখ ৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন সমূহের শ্রম উইংয়ের সহায়তায় নিয়োগ কর্তা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির কাছ হতে তিন হাজার ৪৫৩ জন মৃত কর্মীর অনুকূলে ক্ষতিপূরণের অর্থ হিসেবে আদায়কৃত ২৪০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪২০ টাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

এম, আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের উত্তরে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশি কর্মী গমনকারী মোট দেশের সংখ্যা ১৬০টিতে উন্নীত করা সম্ভব হয়েছে। বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের লক্ষে বর্তমান সরকার নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি, গবেষণার মাধ্যমে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষে গ্রহণ করেছে।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের (৩৩) সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বিএসসি জানান, বিদেশস্থ বাংলাদেশী কর্মীদের বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান শ্রম উইং এর সংখ্যা ১৬ থেকে ২৮ এ উন্নীত করা হয়েছে। যে সব দেশে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মী আছেন, সে সকল দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে পর্যায়ক্রমে শ্রম উইং চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী আরো জানান, সরকারের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সৌদি আরবে প্রায় আট লাখ, মালয়েশিয়ায় দুই লাখ ৬৭ হাজার এবং ইরাকে ১০ হাজার অবৈধ কর্মীকে বৈধ করা হয়েছে।

সুকুমার রঞ্জন ঘোষের এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বিএসসি জানান, ইতালী, ইউকে, রোমানিয়া, সাইপ্রাস,বেলারুস, আজারবাইজানসহ ইউরোপের ৪২টি দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।

বেগম উম্মে রাজিয়া কাজলের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত,ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইউকে, ইতালি, হংকং, পাকিস্তান, সাইপ্রাস, ব্রুনাই, মরিশাসসহ বিশ্বেও ৬৮টি দেশে বিভিন্ন পেশায় বাংলাদেশ হতে ৫ লাখ ৬ হাজার ৫০৬ জন নারী কর্মী গম করেছেন।

এনামুল হকের প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে মোট ৯১টি রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয় এবং অভিযোগকারীদের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের নিকট হতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৮ কোটি ২১ লাখ ৭ হাজার ৯০০ টাকা ক্ষতিগ্রস্তরে প্রদান করা হয়েছে।

সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে নারী কর্মী পাঠানো হচ্ছে। এতে তারা অন্যায়-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশের ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। বাংলাদেশ হতে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধের সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা-জাতীয় পার্টি দলীয় ঢাকার সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানান, বিদেশে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নাই। কারণ নারী ও পুরুষর সমান অধিকার। সৌদি আরবে আমরা কথা বলে জেনেছি, তাদের অনেকেই (বাংলাদেশি নারী) মিথ্যা কথা বলে। তারা বলে আমাদের ভাত দেয় না। সৌদিরা তো ভাত খায় না, ওরা রুটি খায়। রুটি দেয়, ভাত দেয় না-তাহলে আমি চলে যাব। অনেকেই হোমসিক হয়ে নানা কাহিনী সৃষ্টি করে। সুতরাং নারী কর্মী পাঠানো বন্ধে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। এ পর্যন্ত বিদেশে নারী ৪ লাখ ৯১২ জন গেছেন।

অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাতের এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, তুরষ্কে যেখানে অভ্যুত্থান হয়েছে সেখানে কোনো বাংলাদেশী হতাহত হয়েছে কিনা- তা সেখানে আমাদের দূতাবাসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তারা আমাদের জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় কোনো বাংলাদেশী হতাহত হয়েছে হওয়ার খবর তাদের কাছে নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *