তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান ‘বানচাল’, নিহত ৬০

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয়

BEST QUALITY - Ankara Tanks on the street during the attempted Military coup in Turkey

 

সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ বলে দাবি করছে তুরস্ক সরকার। তবে এখনও রাজধানী ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা সহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে তীব্র সংঘর্ষ হচ্ছে। কিন্তু অভ্যুত্থানকারীরা দাবি করেছে, দেশ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে সেখানকার পরিস্থিতি আসলে কি তা পরিষ্কার নয়। গত রাতে সেনাবাহিনীর একটি অংশ সেখানে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করে। তারা টেলিভিশন স্টেশন দখলে নেয়। ট্যাংক মোতায়েন করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। ইস্তাম্বুলে কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে বাইরে মোতায়েন করা হয় ট্যাংক। অবকাশ যাপন থেকে এখানেই ছুটে এসেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেফ তায়িপ এরদোগান। সরাসরি টেলিভিশনে ভাষণ দেয়ার পর তিনি এখানেই আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম এনটিভিকে বলেছেন, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওদিকে বিমানবন্দরে বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা রাষ্ট্রদ্রোহ। এর পিছনে যারা আছেন তাদেরকে কড়া মূল্য দিতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, তিনি জনগণের পাশেই থাকবেন এবং ইস্তাম্বুল থেকে কোথাও যাবেন না। উল্লেখ্য, তিনি অবকাশ যাপনের জন্য দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় শহর মারমারিসে অবস্থান করছিলেন। এরই মধ্যে গত রাতে সেনাবাহিনীর ওই অংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে। এ বিষয়ে এরদোগান বলেন, আমি অবকাশ যাপনে যাওয়ার পরপরই আমাকে বলা হয়েছে আমি যেসব স্থানে অবস্থান করতাম সেখানে বোমা হামলা করা হয়েছে। আমি মনে করি তারা ভেবেছিল আমি ওইসব স্থানেই ছিলাম। আজ শনিবার সকালে তিনি বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষমাণ কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশে বলেছেন, অভ্যুত্থান পরিকল্পনাকারীরা জনগণের অস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে তাক করেছে। যে প্রেসিডেন্টকে শতকরা ৫২ ভাগ মানুষ ক্ষমতায় এনেছে তিনিই দেশের চার্জে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমরা যদি প্রতিরোধ গড়ে তুলি তাহলে তারা সফল হতে পারবে না। তিনি যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন ইস্তাম্বুলের বোসফোরাসে বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্যকে আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায়। তারা তাদের ট্যাংক ফেলে দু’হাত উঁচু করে এগিয়ে যান। প্রাথমিক খবরে দেখানো হয়, সেনা বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। টেলিভিশন স্টেশনও তাদের নিয়ন্ত্রণে। একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছিল আঙ্কারা। মানুষের মধ্যে দেখা দেয় তীব্র উত্তেজনা। অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন রাজপথে। তাকসিম স্কোয়ার, পার্লামেন্ট ভবনে তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। রাতভর সংঘর্ষ হয়েছে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারায়। এতে কমপক্ষে ৬০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে প্রসিকিউটর অফিস থেকে। বলা হয়েছে নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক  লোকজন। এ ঘটনায় সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একটি টেলিভিশন ঘোষণায় তুরস্কের সেনাবাহিনীর একটি অংশ দাবি করেছে, তারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইস্তাম্বুলের সঙ্গে দেশের অন্য অংশের সড়ক যোগাযোগের সেতুগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং আঙ্কারার আকাশে নিচু দিয়ে বিমান উড়ছে। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে একটি ‘পিস কাউন্সিল’ দেশ পরিচালনা করবে। দেশে কারফিউ এবং মার্শাল’ জারি করা হয়েছে। তবে এখনো এটা পরিষ্কার নয় যে, এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত। এই ঘটনাকে ক্ষুদ্র একটি গোষ্ঠীর প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করেছেন দেশটির রিসেপ তায়িপ এরদোগান। তিনি দেশের জনগণকে এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানান।
আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে জনগণের সঙ্গে তাদেরকে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখা যাচ্ছে। অমিত সাহস নিয়ে তাদের বন্দুক, কামানের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে মানুষ। তুরস্কের একটি টেলিভিশন বলছে, রাজধানী আঙ্কারায় অভ্যুত্থান চেষ্টার পক্ষের একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করেছে সরকারি ফাইটার বিমান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়ালদ্রিম জানিয়েছিলেন, তুরস্কে সেনাবাহিনীর একটি অংশ বেআইনি অভিযান শুরু করেছে। তিনি বলেছেন, কোন অনুমতি ছাড়াই সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই অভিযান শুরু করেছে। তবে এটা কোন অভ্যুত্থান নয়। সরকারে কোন পরিবর্তন হয়নি বলেও তিনি জানান। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় গোলাগুলি হচ্ছে। ইস্তাম্বুলের পুলিশ সদর দপ্তর এলাকাতেও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের বাইরে ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে। কারফিউ ঘোষণা করা হলেও, এরদোগানের একদল সমর্থক ইস্তাম্বুলের তাকসিম স্কোয়ারে জড়ো হয়েছেন। সেখানেও সংঘর্ষ হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, সবকিছু দেখে এটা একটি পরিকল্পিত অভ্যুত্থান বলেই মনে হচ্ছে। কারণ তারা সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়েছে। খুব সহজে এর শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না । এনটিভি টেলিভিশনকে টেলিফোনে ইয়ালদ্রিম বলছেন, কোন একটি চেষ্টার সম্ভাবনার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে এ ধরণের কোন চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *