পিঞ্জর খোলে দিয়েছি যা কিছু কথা ছিল ভুলে গিয়েছি——

Slider গ্রাম বাংলা ঢাকা ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার মুখোমুখি সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

13618032_10206595236859200_1136066766_n

 

জাহিদ বকুল, গ্রামবাংলানিউজ;  পিঞ্জর খোলে দিয়েছি যা কিছু কথা ছিল ভুলে গিয়েছি। যারে যাবে যদি যা। এটি একটি জনপ্রিয় গানের কলি। কালজয়ী কিছু গানের মধ্যে এই কলিটি একটি জনপ্রিয় গানের। নিঃসন্দেহে এই গানটি কালজয়ী গানের মধ্যে অন্যতম। এই ধরণের গান যখন রচনা হয় তখন যেমন বাস্তবতা থাকে ঠিক ওই বাস্তবতা থেকে যায় আজীবন। তাই এই ধরণের গানগুলো কালজয়ী হয়ে যায়। যে গানের বাস্তবতা বহমান থাকে আজীবন তাকেই কালজয়ী বলে। আর এই কালজয়ী গানগুলো কোন দিন অস্থিত্ব হারায় না। বড় বড় গায়কেরা যতই মডার্ন গান নিয়ে আসুক না কেন কালজয়ী গান অপ্রতিদ্বন্ধী আছে থাকবে। আর এই গানগুলোর প্রতিটি কথা মানবজীবনের জন্য সব সময় প্রযোজ্য হয়ে থাকে। 

গানের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন মানব জীবন। সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার সমাহারে গঠিত একটি জীবন শুরু থেকে শেষ হয়। এই ছোট জীবনে কত কথা কত যন্ত্রনা আর কতইনা বেদনা লুকিয়ে থাকে জীবনের প্রতিটি ভাঁজে তা অনেক সময় নিজেরই জানা হয়ে উঠে না। এই নীরব যন্ত্রনা যে কত কঠিন তা যে মোকাবেলা করেনি তিনি বুঝবেন না। কথায় বলে যা প্রতিকার করা যায় না তা সহ্যৃও করা যায় না। কিন্তু কি তাই! না সহ্যৃ ও করতেই হয়। করতে বাধ্য হতে হয়। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র নিজেদের প্রয়োজনে অনেক কাজ করেন যাতে অনেক মানুষের সংগ্রামী জীবন প্রদীপ নিভে যায়। আর একই সঙ্গে পাহাড়ে আটকে যায় মেধা ও মনন। এতে ভিকটিম হয়ত বা ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু তার চেয়ে বেশী ক্ষতি হয় রাষ্ট্রের। জনগনের। এই সব না জানা কথা জানাতে গ্রামবাংলানিউজ আদর্শিকভাবেই কাজ করছে মাঠে ময়দানে। তেমনি একটি গল্প আজ পাঠকের সামনে তুলে ধরছেন গাজীপুরের সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদ বকুল।

13649615_10206595257499716_1665420515_n

 

ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে স্ত্রীর নকশায় তৈরী করা একটি সেরওয়ানী টাইপের  ডোরাকাট  পাঞ্জাবী পড়ে ও  কাঁধে কবি স্টাইলের একটি ব্যাগ নিয়ে চা খাচ্ছেন  গোলাম মোস্তফা খান। গাজীপুর মহানগরের কবি নজরুল সড়কের জোরপুুকুর পাড় মোড়ে ওই চায়ের দোকান। আজ শনিবার ঈদের তৃতীয় দিন। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে এক কাপ চা সবাই চায়। তেমনি চেয়েছেন  গোলাম মোস্তফা খান। সুন্দর পোষাকে চায়ের কাপে ঝড় তোলার দৃশ্য যে কোন লেখক মনকে নাড়া দিবে এতে সন্দেহ নেই। তবে ওই স্টাইলের মাঝে লুকিয়ে থাকা না বলা কথা হয়ত কেউ জানবেন না বা  জানার চেষ্টাও করবেন না। সময় সূযোগ না হলে মোস্তফা কামালের ওই লুকিয়ে পড়া আবেগ আরো হারিয়ে যাবে। এক সময় তা তলিয়ে যাবে সময়ের কালজয়ী স্রোতে।

গোলাম  মোস্তফা খান। সদা  হাস্যোজ্জ্বল স্বভাবের মানুষ তিনি। সব সময় মুখে হাসি ফুটেই থাকে। তবে হাসির মাঝে অবয়বের প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে যে লুকানো যন্ত্রনা উঁকি মেরে শুকতারার মত পালিয়ে যায় তাও ষ্পষ্ট। জীবনের শত চড়াই উৎড়াইয়ের মাঝেও তাকে কোন দিন বিষন্ন দেখা যায় নি। জীবন সংগ্রামে সব সময় তিনি ছিলেন আশাবাদী একজন মানুষ। জীবন গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ছিল তার একমাত্র অঙ্গীকার।

গাজীপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি পরিচিত নাম গোলাম মোস্তফা খান। সুন্দর আবৃতি করেন। ভাল গান করেন। লিখেনও ভাল। সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী এই যুবক তার মেধা ও যোগ্যতার বলে এক সময় চাকুরীও পেয়ে যান দেশের একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে অনুষ্ঠান প্রয়োজনায়।  মাটি ও মানুষের গান নিয়ে  অচিন পাখি নামের একটি অনুষ্ঠানও তিনি করেছেন দীর্ঘ সময়। তৃনমূল মানুষের চাওয়া পাওয়া আর না বলা কথা জাতির সামনে তুলে ধরতেন তিনি। সুষ্টিশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর একটি সূবর্ন সূযোগ পেয়ে গোলাম মোস্তফা খান মিডিয়া অঙ্গনে ভাল অবস্থানও করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে টিভি চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার সৃষ্টির অন্বেষনে প্রগতিশীল প্রতিভার গতি পথ  দুমড়ে মুচড়ে যায়। এই ঘটনায় তার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হয়। কিছু সময়ের জন্য তিনি দিশেহারা হয়ে যান। কিন্তু মেধাকে চাপিয়ে রাখা যায় না। মেধার বিকাশ ঘটবেই। ফলে জীবনকে নতুন করে সাজানোর কাজে হাত দিলেন গোলাম মোস্তফা  খান। গাজীপুর শহরের কবি নজরুল সরণিতে তিনি গড়ে তুললেন মনছবি নামে একটি কালচারাল স্কুল। শিশুদের চিত্রাংকনের পাশাপাশি নাচ ও গান শেখানোর একটি প্রতিষ্ঠান মনছবি। অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহকর্মীদের একনিষ্ট সহযোগিতায় স্কুলটি এখন দাঁড়িয়ে গেছে। 

13644081_10206595199458265_1324109073_n

 

গোলাম  মোস্তফার জীবনে জোয়ার ভাটার ফাঁকে মনক্ষুন্ন হয়ে  ও জীবিকার অধিক তাগিদে তার স্ত্রী একটি চাকুরী করতেন তাও ছেড়ে দেন। এরপর স্বামী-স্ত্রীর যৌথ পরিকল্পনায় দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। স্বামী মনছবি তেরী করলেন আর  স্ত্রী শারমিন রূপা  ক্লাসিক জোন নামে একটি বুটিকের কারখানা দিলেন। দুই জনের হাড় ভাঙা পরিশ্রমে আজ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মোস্তফা খানের পরিবার। তার জীবন এখন নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এই দম্পতি দুটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছে। আরও একটি সন্তান জন্মের অপেক্ষায় ।

 

মানুষের জীবন একটি চলমান নদী। কখনো তীর ভাঙে আবার কখনো বা তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। এই নদী ভাঙা গড়া আর থাকা না থাকার পরও নদীর নাম রয়েই যায়। স্রোত না থাকলেও কোন না কোন ইতিহাসের পাতায় নদীর নাম চিরন্তন হয়ে যায়। আমরা এখনো দেখি, কত নদীর উত্তাল জোয়ার এক সময় ভাটিতে চলে যায়। শুকিয়ে যায় যৌবন।

13600074_10207889594252510_7664440157370560769_n

আবার কিছু সময় পর যৌবন ফিরে আসে। নদী নামের মানব জীবনে জোয়ার ভাটায় কত যে সম্ভাবনা হারিয়ে যায় তার খবর কে রাখে। তবে জোয়ার ভাটায় সব হারিয়ে গেলেও নদীর নাব্যতা কোন সময় তলানীতে পড়ে না। এই প্রাকৃতিক নিয়মকে যারা ভেঙে কৃত্রিম  জোয়ার ভাটার সৃষ্টি করেন তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয় যুগের পর যুগ। আমরা গোলাম মোস্তফা খানের মত মেধাবী লোকদের জীবন সংগ্রমাকে সাধুবাদ জানাই। আরো মোস্তফার জন্ম হউক প্রত্যাশা রইল।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *