শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের কাছে হামলার ঘটনায় আটক ‘সন্দেহভাজন জঙ্গি’ শফিউল গত প্রায় এক বছর বাড়িতে আসেনি। তবে মাঝে মাঝে সে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোন করত। শফিউল দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিজুল দারুল হুদা স্নাতকোত্তর মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
শফিউলের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নূরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল হাই। শফিউলের নানা বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শফিউল এই এক বছর পরিবারের অগোচরে ছিল।
অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোন দিত
আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শফিউলের নানাবাড়ি বারইপাড়া গ্রামে গেলে, শফিউলের ৬০ বছর বয়সী নানা শরিফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শফিউল বিরামপুরের বিজুল দারুল হুদা মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির ছাত্র। তারা দুই বোন ও এক ভাই। দুই বোন শফিউলের ছোট। বড় বোন কোরআনের হাফেজ, ছোট বোনও মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। শফিউল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না বলে দাবি করেন শরিফ উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রায় এক বছর থেকে শফিউল পরিবারের অগোচরে চলে যায়। মাঝে মধ্যে অজ্ঞাত নম্বর থেকে তার বাবাকে ফোন করে ভালো আছে বলে জানাত। পরে ওই নম্বরে যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া যেত।
শরিফ উদ্দিন বলেন, শফিউলের বাবা আব্দুল হাই একজন রেডিও-টেলিভিশন মেরামতকারী। রানীগঞ্জ বাজারে তাঁর দোকান ছিল। পাশাপাশি টিভিও বিক্রি করতেন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার কারণে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা দোকানে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর আবদুল হাই তাঁর স্ত্রী এবং ছোট মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। বড় মেয়ে ও শফিউল মাদ্রাসার হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করত। তখন থেকেই শফিউল পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এর আগে আজ সকাল ১০টার দিকে শফিউলের বাড়ি সিংড়া ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে গিয়ে তাদের বাড়িটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। যদিও সেখানে এখন ভাড়াটিয়া থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী প্রথম আলোকে জানান, আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তাঁরা ঢাকায় চলে যান। কিছুদিন পর বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়। মাঝে মধ্যে শিউলি বেগম বাড়িতে আসতেন।
শফিউলের মা-বাবা আটক!
পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, শোলাকিয়ার ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে শফিউলের মা শিউলি বেগমকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়ে গেছেন। তবে ঘোড়াঘাট থানার পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ এবং র্যাব বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
জানতে চাইলে ঘোড়াঘাট থানার উপপরিদর্শক দুলাল বলেন, শিউলি বেগমকে আটকের বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। একই কথা বলেন, র্যাব-১৩ দিনাজপুর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মাহমুদ ও দিনাজপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক বজলু রশীদ।
তবে শফিউলের নানা বলেন, গত শুক্রবার তাঁরা জানতে পারেন শিউলিকে নিয়ে গিয়ে তাঁর মাধ্যমে ঢাকার সাভার থেকে আবদুল হাইকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে হাই এবং শিউলি বেগমের কোনো খোঁজ তাঁরা পাচ্ছেন না।
রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি
বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন শফিউল ও তাঁর বাবা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে আর জামায়াতের নেতারা বলছেন, তিনি বিএনপির সমর্থক ছিলেন। তবে উভয় পক্ষই বলেছে, বিগত নির্বাচনগুলোতে শফিউল ও তার বাবা বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন।
ঘোড়ঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ মো. শামীম হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আবদুল হাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
অবশ্য উপজেলা জামায়াতের আমির এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ঘোড়াঘাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোটবদ্ধভাবে করেছে। আবদুল হাই জোটের হয়ে কাজ করেছেন। তিনি মূলত বিএনপির সমর্থক ছিলেন।