রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। গুলশান থেকে শোলাকিয়া। বাংলাদেশ যেন এক রক্তাক্ত প্রান্তর। ৭/১-এ দেখা মিলেছে এক অচিন বাংলাদেশের। স্বাধীন বাংলাদেশ কেন, এ ভূখ-েই এ ধরনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। রক্তাক্ত গুলশান এরই মধ্যে সারা দুনিয়াকেই হতচকিত করে দিয়েছে। ১৭ বিদেশি, ৩ বাংলাদেশি, ২ পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান হলি আর্টিজানে। ৫ সন্ত্রাসীও নিহত হয় অপারেশন থান্ডারভোল্টে। আরো এক সন্ত্রাসীকে আটকের কথা বলা হয়েছিল। যদিও সে কে তা এখনও জানা যায়নি। বিচার বিভাগের কাছে এখনও তাকে সোপর্দ করা হয়নি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গুলশান হামলা যে শুধু বাংলাদেশের নিরাপত্তার বৃত্ত ভেঙে দিয়েছে তা-ই নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও নিয়ে এসেছে এক ভয়াবহ বার্তা। নিহত বিদেশিদের প্রায় সবাই জাপান এবং ইতালির নাগরিক। জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। অন্যদিকে, ইতালির যেসব নাগরিক নিহত হয়েছেন তারা এখানে এসেছিলেন পোশাক ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে। ভয়ঙ্কর এ সন্ত্রাসী হামলার পর অনেক বিদেশিই এখন বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে সতর্ক। পোশাক ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। গার্মেন্ট খাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি সে ভার বহন করতে পারবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এ বিপদের মুহূর্তে বন্ধুর পরিচয় দিয়েছে জাপান। বাংলাদেশে জাপানের উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তখন জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছে।
৭/১-এর ধাক্কা সামাল দিতে বাংলাদেশ যখন ব্যস্ত তখন পবিত্র ঈদের দিন হামলা হয়েছে শোলাকিয়ায়। ঈদও যেন আজ আমাদের দুঃখের দিন। এ হামলার টার্গেট এখনও পরিষ্কার নয়। কেউ দায়ও স্বীকার করেনি। তবে পুলিশের বাধা পেয়ে তারা হামলে পড়ে পুলিশের ওপরই। গুলি করে আর কুপিয়ে হত্যা করা হয় দুই পুলিশ সদস্যকে। গোলাগুলির মধ্যে নিহত হয়েছেন এক নারী। পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেছে এক সন্ত্রাসীরও। এখন জানা যাচ্ছে, এ ছেলেও নিখোঁজ ছিল আগে থেকেই। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ যখন হতবিহ্বল তখন আরো হামলার হুমকিও রয়েছে। আইএসের কথিত রাজধানী রাকা থেকে ধারণ করা এক ভিডিও বার্তায় হুমকি দেয়া হয়েছে এমন হামলা আরো হবে।
বাংলাদেশ আজ এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি। এমন বাস্তবতা এদেশের মানুষের জীবনে অতীতে কখনও আসেনি। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য খ্যাতি রয়েছে এ দেশের মানুষের। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বারবারই উঠে দাঁড়িয়েছে মানুষ। নেতৃত্ব দিয়েছেন পুনর্গঠনে। কিন্তু এবার দুর্যোগটি একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির। চ্যালেঞ্জের মুখে রাষ্ট্র। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাষ্ট্রের প্রস্তুতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সংশয় দেখা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও। এ সত্য অস্বীকার করার জো নেই সন্ত্রাসবাদ এখন সারা দুনিয়ারই সংকট। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে অন্যান্য দেশের পরিস্থিতির কিছু পার্থক্যও রয়েছে। ১লা জুলাই রাতের প্রথম প্রহরে যখন গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা হয়, শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়তো ঘটনার চরিত্রই বুঝতে পারেনি। যে কারণে দুই দফা পুলিশ অভিযান চালিয়েও জিম্মিদের মুক্ত করতে পারেনি। পুলিশের দুই কর্মকর্তা এ সময় প্রাণ হারান। পরে অবশ্য সেনা কমান্ডো অভিযানে সফলতা আসে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে। কূটনৈতিক জোন গুলশান বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ এলাকাগুলোর একটি। সেখানে এত বিপুল সংখ্যক অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা কিভাবে প্রবেশ করলো সেই প্রশ্নের তেমন উত্তর এখনও খোঁজা হয়নি। শোলাকিয়ার হামলাতেও পুলিশকে শুরুতে হতচকিত মনে হয়েছে। পরে অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অনেক বিশ্লেষকই বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি মনে করেন না। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় একই সঙ্গে এই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে, বাংলাদেশে একটি রাজনৈতি সংকট রয়েছে এবং জঙ্গিরা সেই সুযোগই গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। এ সাবধানতা অবশ্য আগে থেকেই উচ্চারিত হয়েছিল। কেউ অবশ্য পাত্তা দেননি। বিপুল সংখ্যক মেধাবী, উচ্চবিত্ত তরুণের সন্ত্রাসী বনে যাওয়া অবশ্য অনেকের মনেই বিস্ময় তৈরি করেছে। এর কারণ খোঁজারও চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জমান বিবিসিকে বলেছেন, ‘সমাজে এক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। বাংলাদেশ এখন এক রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে তরুণরা কোনো রোল মডেল খুঁজে পাচ্ছে না তাদের জীবনের জন্য। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে এখন মুক্তভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথও আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে আসছে।’
দেশ যখন মহাসংকটের মুখে, রাজনীতিবিদরা তখন মত্ত রয়েছেন পুরনো খেলায়। একে অপরকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। হয়তো তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝছেন না অথবা মানুষের জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সংকট উত্তরণে সবার আগে প্রয়োজন পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করা। সময় গেলে সাধন না-ও হতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সময় কি চলেই গেছে?
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গুলশান হামলা যে শুধু বাংলাদেশের নিরাপত্তার বৃত্ত ভেঙে দিয়েছে তা-ই নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও নিয়ে এসেছে এক ভয়াবহ বার্তা। নিহত বিদেশিদের প্রায় সবাই জাপান এবং ইতালির নাগরিক। জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। অন্যদিকে, ইতালির যেসব নাগরিক নিহত হয়েছেন তারা এখানে এসেছিলেন পোশাক ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে। ভয়ঙ্কর এ সন্ত্রাসী হামলার পর অনেক বিদেশিই এখন বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে সতর্ক। পোশাক ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। গার্মেন্ট খাতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়লে বাংলাদেশের অর্থনীতি সে ভার বহন করতে পারবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এ বিপদের মুহূর্তে বন্ধুর পরিচয় দিয়েছে জাপান। বাংলাদেশে জাপানের উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তখন জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছে।
৭/১-এর ধাক্কা সামাল দিতে বাংলাদেশ যখন ব্যস্ত তখন পবিত্র ঈদের দিন হামলা হয়েছে শোলাকিয়ায়। ঈদও যেন আজ আমাদের দুঃখের দিন। এ হামলার টার্গেট এখনও পরিষ্কার নয়। কেউ দায়ও স্বীকার করেনি। তবে পুলিশের বাধা পেয়ে তারা হামলে পড়ে পুলিশের ওপরই। গুলি করে আর কুপিয়ে হত্যা করা হয় দুই পুলিশ সদস্যকে। গোলাগুলির মধ্যে নিহত হয়েছেন এক নারী। পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেছে এক সন্ত্রাসীরও। এখন জানা যাচ্ছে, এ ছেলেও নিখোঁজ ছিল আগে থেকেই। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ যখন হতবিহ্বল তখন আরো হামলার হুমকিও রয়েছে। আইএসের কথিত রাজধানী রাকা থেকে ধারণ করা এক ভিডিও বার্তায় হুমকি দেয়া হয়েছে এমন হামলা আরো হবে।
বাংলাদেশ আজ এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি। এমন বাস্তবতা এদেশের মানুষের জীবনে অতীতে কখনও আসেনি। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য খ্যাতি রয়েছে এ দেশের মানুষের। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বারবারই উঠে দাঁড়িয়েছে মানুষ। নেতৃত্ব দিয়েছেন পুনর্গঠনে। কিন্তু এবার দুর্যোগটি একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির। চ্যালেঞ্জের মুখে রাষ্ট্র। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাষ্ট্রের প্রস্তুতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সংশয় দেখা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও। এ সত্য অস্বীকার করার জো নেই সন্ত্রাসবাদ এখন সারা দুনিয়ারই সংকট। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে অন্যান্য দেশের পরিস্থিতির কিছু পার্থক্যও রয়েছে। ১লা জুলাই রাতের প্রথম প্রহরে যখন গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা হয়, শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়তো ঘটনার চরিত্রই বুঝতে পারেনি। যে কারণে দুই দফা পুলিশ অভিযান চালিয়েও জিম্মিদের মুক্ত করতে পারেনি। পুলিশের দুই কর্মকর্তা এ সময় প্রাণ হারান। পরে অবশ্য সেনা কমান্ডো অভিযানে সফলতা আসে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে। কূটনৈতিক জোন গুলশান বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ এলাকাগুলোর একটি। সেখানে এত বিপুল সংখ্যক অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা কিভাবে প্রবেশ করলো সেই প্রশ্নের তেমন উত্তর এখনও খোঁজা হয়নি। শোলাকিয়ার হামলাতেও পুলিশকে শুরুতে হতচকিত মনে হয়েছে। পরে অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অনেক বিশ্লেষকই বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে শুধু আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি মনে করেন না। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় একই সঙ্গে এই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে, বাংলাদেশে একটি রাজনৈতি সংকট রয়েছে এবং জঙ্গিরা সেই সুযোগই গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। এ সাবধানতা অবশ্য আগে থেকেই উচ্চারিত হয়েছিল। কেউ অবশ্য পাত্তা দেননি। বিপুল সংখ্যক মেধাবী, উচ্চবিত্ত তরুণের সন্ত্রাসী বনে যাওয়া অবশ্য অনেকের মনেই বিস্ময় তৈরি করেছে। এর কারণ খোঁজারও চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুনীরুজ্জমান বিবিসিকে বলেছেন, ‘সমাজে এক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে। বাংলাদেশ এখন এক রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে তরুণরা কোনো রোল মডেল খুঁজে পাচ্ছে না তাদের জীবনের জন্য। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে এখন মুক্তভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথও আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে আসছে।’
দেশ যখন মহাসংকটের মুখে, রাজনীতিবিদরা তখন মত্ত রয়েছেন পুরনো খেলায়। একে অপরকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। হয়তো তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝছেন না অথবা মানুষের জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই সংকট উত্তরণে সবার আগে প্রয়োজন পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করা। সময় গেলে সাধন না-ও হতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সময় কি চলেই গেছে?