কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলাকারী সন্দেহে আজিমউদ্দীন উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা জাহিদুল হককে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার।
গতকাল শুক্রবার কিশোরগঞ্জ শহরের মনিপুরঘাট এলাকায় জাহিদুলের বাড়িতে গেলে তাঁর পরিবার তাঁকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করে। তাঁরা বলেন, বছর দুয়েক আগে মা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি অসুস্থ। এক বছর আগে হঠাৎ পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। এরপর থেকে তিনি বাসাতেই থাকতেন। প্রায়ই বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে দু-এক দিনের জন্য বের হতে যেতেন। তিনি কিশোরগঞ্জের ওয়ালি নেওয়াজ খান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় তিতুমীর কলেজে ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) পড়ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি পড়াশোনায় নিয়মিত না।
জাহিদুল ছাড়াও তাঁর এক বড় ভাই ফয়সাল আহমেদ দীর্ঘদিন একই রোগে ভুগছেন বলে দাবি করলেন তাঁর বাবা মো. আবদুস সাত্তার। গতকাল জাহিদুলের বড় ভাই ফয়সালকে বাসার সামনে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে দেখা গেছে।
মো. আবদুস সাত্তার দাবি করেন, জাহিদুলকেও গত তিন মাস শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে একটু স্বাভাবিক আচরণ করলে বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। ঈদের নামাজ পড়তে শোলাকিয়া মাঠে গিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে। কোথায় আছে, কেউ বলছে না। গত বৃহস্পতিবার ডিবি তদন্ত করে গেছে। তারাও কিছু বলেনি।
জাহিদুলের আরেক বড় ভাই বায়েজিদুল হক বলেন, ‘জাহিদুলকে কেউ কোনো প্রশ্ন করলে সে ওই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে প্রশ্নকর্তাকে উল্টো একাধিক প্রশ্ন করে বসে। পুলিশের সঙ্গেও হয়তো এমনটাই হয়েছে। তারা নামধাম জিজ্ঞেস করেছে, জাহিদুল হয়তো উল্টোপাল্টা কিছু বলেছে, পরে ধরে নিয়ে গেছে।’
তবে জাহিদুল বা তাঁর ভাইকে কোনো চিকিৎসক দেখাননি বলে জানান বাবা আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, তাঁর সে সামর্থ্য নেই। তাঁর একটি পুরোনো ব্যাটারি মেরামতের দোকান রয়েছে। এই দোকান থেকেই আট ছেলেমেয়ের সংসার টেনেছেন। চার মেয়ে আর এক ছেলে এখন বিয়ে করে বাইরে থাকেন। বাকি তিন ছেলের মধ্যে বায়েজিদ এই দোকানে বসেন। তাঁরও পরিবার আছে। আর দুই ছেলের মানসিক সমস্যা। ‘ডাক্তার দেখাব, না সংসার চালাব, কিছু বুঝি না’—বলে হতাশার এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আবদুস সাত্তার। তবে ‘পীর’ ও ‘হুজুরদের’ কাছে তাঁদের নিয়মিত নিয়ে গেছেন বলে জানালেন। বলেন, এই রোগ তাঁদের বংশগত।
জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মশাররফ হোসেন বলেন, ‘ওদের পরিবার দাবি করেছে যে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে তারা এটাও বলেছে যে সে মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যেত। ফলে এটা আমরা মিথ্যাও ধরছি না, সত্যও মনে করছি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, জাহিদুল ভালো ইংরেজি বলতে পারেন। অন্য জঙ্গিরাও ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে। তাদের সঙ্গে জাহিদুলের কোনো যোগাযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ছেলের এই হঠাৎ হঠাৎ চলে যাওয়ার বিষয়ে বাবা বললেন, সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের জন্য চলে যেতেন জাহিদুল। তখন চার বোনের কারও বাসায় থাকতেন, কিংবা ঢাকায় যে মেসে থাকতেন, সেখানে যেতেন। কয়েক দিন পরেই আবার বাড়ি ফিরে আসতেন।