আদরের ছেলে জঙ্গি হবে সেটা কখনও কল্পনায় আসেনি বাবা মীর হায়াত কবীরের। আগে জানলে নিজের জীবন দিয়ে হলেও ছেলেকে বিকৃত পথ থেকে ফেরাতেন বলে জানান তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় অংশ নেওয়া মীর সামেহ মুবাশ্বেরের বাবা একটি টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানির এক্সিকিউটিভ হায়াত কবীর।
মীর সামেহ মুবাশ্বেরের
তিনি জানান, এ বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারির কথা। পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক ক্লাসে অংশ নেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় মীর সামিহ মোবাশ্বির। এরপর কেটে যায় চার মাস। সামির কোনও হদিস পায়নি পরিবার। কী হতে পারে সামির পরিণতি। তা নিয়ে একের পর দৃশ্যকল্প সাজাতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা।
পরিবার ভাবতে থাকে হয়তো সামি কারও প্রেমে পড়েছে আর তাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। আবার কখনও তাদের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়, সামিহকে হয়তো অপহরণ করা হয়েছে। তবে এসব আশঙ্কার পাশাপাশি আরও একটি আশঙ্কাও উঁকি দিয়েছিল স্বজনদের মনে। তারা ভাবছিলেন সামিহ ইসলামি চরমপন্থীদের সঙ্গে যোগ দেয়নি তো!
শনিবার স্বজনরা জানলেন, সামিহকে নিয়ে তাদের সবচেয়ে বাজে আশঙ্কাটিই সত্যি হয়েছে। শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার পর শনিবার প্রকাশিত ‘হামলাকারী’দের ছবির মধ্য থেকে সামিকে শনাক্ত করেন স্বজনরা। ছেলে সামিহ জঙ্গির খাতায় নাম লেখায় এবং গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলায় নেতৃত্ব দেয়।
সামিহ মোবাশ্বিরের বাবা হায়াত কবীর আরও জানান, মুসলিম পরিবারের সন্তান সামিহ সবসময় ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। পরিবার কখনও তার ধর্মবিশ্বাসকে নিরুৎসাহিত করতো না। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করা ছেলে যেন ইসলামের ব্যাপারে বিকৃত ধারণা না পায় সে ব্যাপারে তার বাবার সচেতনতাও ছিল। তিনি সামিহকে পবিত্র কোরআনের ইংরেজি সংস্করণ দিয়েছিলেন এই বিবেচনায় যে সেখানে বিকৃত ব্যাখ্যা থাকবে না। বাবা চাইতেন, ছেলে অন্য কোনও জায়গার বিকৃত ব্যাখ্যা থেকে প্রভাবিত না হয়ে যেন সরাসরি ইসলামের মতবাদ নিজেই অনুসন্ধান করে নিতে পারে। নিজের বিশ্বাস নিজেই গড়ে তুলতে পারে।
ছেলে জঙ্গিদের কাতারে নাম লিখিয়ে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডে অংশ নেবে তা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না বাবা মীর হায়াত কবীর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বার বার তিনি বলছিলেন- ‘ও আমার ছেলে হতে পারে না। আমি যদি জানতাম ও সেখানে যাচ্ছে তবে জীবন দিয়ে হলেও তাকে থামাতাম।’
গত শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে যে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে তাদের মধ্যে নয়জন ইতালি ও সাতজন জাপানের নাগরিক।