আল কায়েদা ও আইএস—দুটি সংগঠনই বাংলাদেশে বাড়তে থাকা জঙ্গি তৎপরতার সুযোগ নিয়ে এখানে তাদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো থেকে তারা সদস্য সংগ্রহের চেষ্টায় তৎপর। ভারতীয় উপমহাদেশে আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (একিউআইএস) নামে শাখা খুলেছে আল কায়েদা। এই শাখার আওতায় রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে। আর মধ্যপ্রাচ্যে জন্ম নেওয়া আইএস জন্মভূমিতে এখন প্রবল চাপে থাকায় এশিয়ার অন্য জায়গাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে।
ঢাকায় হামলার পরদিন আইএসের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে। হলি আর্টিজান বেকারিতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্ধার অভিযান শুরুর আগেই অবরুদ্ধ রেস্তোরাঁটির ভেতরের ছবি প্রকাশ করে তারা। আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক ওই রেস্তোরাঁর ভেতরের হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ ছবিও প্রকাশ করে।
অস্ত্র হাতে হাস্যোজ্জ্বল হামলাকারীদের যে ছবি আইএস প্রকাশ করেছে, তা নিঃসন্দেহে ওই হামলার আগেই তোলা। এতে অন্তত এ বিষয়টি প্রমাণিত হয়, ওই হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা না থেকে থাকলেও ইরাক ও সিরিয়ায় সক্রিয় আইএসের সঙ্গে ওই হামলাকারীদের সমন্বয় ছিল।
এর আগে বাংলাদেশে যেসব হামলার দাবি আইএস করেছে, তার থেকে গত শুক্রবারের হামলাটি একেবারে ভিন্ন ধরনের। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বছর দেড়েক ধরে যেসব হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে এ হামলার একেবারে মিল নেই।
আল-কায়েদার প্রতিক্রিয়া: ঢাকায় শুক্রবারের হামলার ঘটনার পর একধরনের পাল্টা জবাবের মতোই গত রোববার আল-কায়েদা মুসলিমদের ভারতে হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দেয়। একিউআইএসের কথিত নেতা আসিম ওমর পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের হত্যার আহ্বান জানান।
একিউআইএস রিসার্জেন্স নামের একটি অনলাইন সাময়িকী প্রকাশ শুরু করেছে। সেখানে বাংলাদেশে হামলা চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এর আগে আল-কায়েদা নেতা আইমান আল জাওয়াহিরি বাংলাদেশের ইসলামি চিন্তাবিদদের নেতৃত্ব দেওয়ারও আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক বিভাজন জঙ্গিবাদ বাড়াচ্ছে: বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে জঙ্গিবাদী তৎপরতা ব্যাপক হারে বাড়তে শুরু করে। এ সময় থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া ব্লগার, সমকামীদের অধিকার আন্দোলনের কর্মী, হিন্দু পুরোহিতেরা দুই বছর ধরে একের পর এক হামলার শিকার হয়েছেন। আনসার আল ইসলাম এবং একিউআইএস—এসব হামলার অনেকগুলোই তাদের কাজ বলে দাবি করে। অন্যদিকে আইএসের লক্ষ্যবস্তু ছিলেন বাংলাদেশে থাকা বিদেশিরা।
তবে একের পর এক এসব হামলার দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার দেশে আইএসের অস্তিত্ব অস্বীকার করে আসছে। দিল্লির সোসাইটি ফর দ্য স্টাডি অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্টের বিশ্লেষক অনিমেষ রাউল বলেন, হুমকির চিত্রটি বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। কেননা, বাংলাদেশ সরকার এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনটির অস্তিত্বই স্বীকার করে না।
আইএস আসলে এখন এর জন্মস্থান ইরাক ও সিরিয়ায় ব্যাপক চাপের মধ্যে আছে। তাই এসব এলাকা থেকে তারা সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে।
জন্মস্থানে চাপে থাকা আইএস ছড়িয়ে পড়ছে
ঢাকায় গত শুক্রবারের হামলার পেছনে যে ইসলামিক স্টেটই (আইএস) ছিল, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনটি এ সম্পর্কে সন্দেহ প্রায় দূর করেছে। এ হামলা এশিয়ায় সংগঠনটির ক্রমবর্ধমান অবস্থানের আরেকটি নজির। সেই সঙ্গে তারা আরেক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে প্রতিযোগিতার একটি নতুন রণাঙ্গন উন্মোচন করেছে।