নিশ্চিত হল আতঙ্কে বাংলাদেশ

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা

13516366_10154336514684644_2089270147257336702_n

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। স্বাধীন দেশের  সঙ্গে  কারো  যুদ্ধ হলে তা হবে অন্য যে কোন দেশের সঙ্গে। কিন্তু নিজ দেশের ভেতরে যদি যুদ্ধ করতে হয় তবে স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম দেশের অভ্যন্তরে এই ধরণের যুদ্ধ হল। যুদ্ধে অংশ নিতে হল সকল বাহিনীকে। একই সঙ্গে যুদ্ধে তলব করতে হয়েছে সেনা কামান্ডো। যেখানে যুদ্ধ হয়েছে সে স্থানটা হল কুটনৈতিক জোন। মানে একটি দেশের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায়। এই নিরাপদ জায়গায় বন্ধুকধারীদের হামলা ও জিম্মি করার ঘটনা অবশ্যই উদ্বেগ জনক। আর এই হামলা নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনাও দেশে প্রথম। গতকালেরে যুদ্ধ, যুদ্ধের স্থান ও দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম। আর এই ঘটনা প্রমান করে বাংলাদেশ নিশ্চিত আতঙ্কে পড়ে গেল।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার পরপর সেনাবাহিনী, সোয়াত, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবির সমন্বয়ে অভিযান শুরু হয়। অভিযান শুরুর পর মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়। ৪৫ মিনিটের মাথায় সকাল ৮টা ১৬ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। অভিযানের সময় সেখানে সেনাবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধানও উপস্থিত ছিলেন।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে অভিযানে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, ভেতরে পাঁচজন মারা গেছেন। ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। জীবিত উদ্ধার হওয়াদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎ​সার জন্য নেওয়া হয়েছে। নিহত ও উদ্ধার করা ব্যক্তিদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।

ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা জানান, উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে ওই রেস্তোরাঁয় সাতটি অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয়। সেগুলোতে অনেককে সরিয়ে আনা হয়।

এদিকে অভিযান শুরুর আগে আইএসের (ইসলামিক স্টেট) কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজ ওই রেস্তোরাঁর ভেতরে তাদের হাতে নিহত কয়েকজনের রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করে। আমাক নিউজের সেসব ছবি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ টুইটারে প্রকাশ করে অভিযান শুরুর প্রায় আধা ঘণ্টা আগে।

সকাল সাড়ে সাতটার পরপর সোয়াতের একটি দল একটি অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে ওই রেস্তোরাঁ দিকে এগোতে থাকে। এরপর পর কয়েক দিক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিত অভিযান শুরু করেন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুতিতে নিতে শুরু করেন। ভোর পাঁচটার দিকেই তাঁদের প্রস্তুতি শেষ হয়। পরে আশপাশে অবস্থান নেওয়া সংবাদকর্মীদের পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দেয়। আজ শনিবার সকাল ছয়টার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। সকাল সাতটায় সাতটি সাঁজোয়া যানসহ সেনাবাহিনীর একটি দল ওই এলাকায় অবস্থান নেয়।

এর আগে গতকাল রাত পৌনে নয়টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বরের আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ৮ থেকে ১০ জন যুবক অতর্কিত হামলা চালায়। এরপর তারা ওই রেস্তোরাঁয় থাকা লোকজনকে জিম্মি করে। জিম্মিদের মধ্যে অন্তত ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন আছেন বলে ধারণা করা হয়। এরপর থেকে পুরো চার কিলোমিটার এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রাখেন।

আর্টিজান বেকারি নামের ওই রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার কিছুক্ষণ পর পুলিশের অগ্রগামী দলের দুই কর্মকর্তা জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় নিহত হন। আহত হন অন্তত ৪০ জন পুলিশ সদস্য। নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন।

গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই হাসপাতালে মোট ৩৬ জন আহত ব্যক্তিকে নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। এখন ভর্তি আছেন ২৪ জন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

জঙ্গি হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

এই ধরনের অতর্কিত হামলা চালিয়ে লোকজনকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জিম্মিদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।

কমপক্ষে ২৪ জনকে হত্যার দাবি আইএসের: আমাক

 

ঢাকার কূটনৈতিক জোনে একটি হোটেলে জিম্মিদের মধ্যে কমপক্ষে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক। জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নজরদারি করা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের ওয়েবসাইটে ও এর পরিচালক রিটা কাটজের টুইটে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আমাক বার্তা সংস্থা খবর দিয়েছে যে, ‘ইসলামিক স্টেট কমান্ডোরা’ রাজধানী ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছে। গতকাল টেলিগ্রামের মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিদেশীরা ঘন ঘন যাতায়াত করেন এমন একটি রেস্তোরাঁয় এ হামলা হয়েছে। রিটা কাটজ তার টুইটে বলেছেন, আইসিস সনস খেলাফত আর্মি (#এসসিএ) ঢাকায় একটি রেস্তোরায় #বাংলাদেশ অ্যাটাক নামে একটি পোস্টার প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘ইউ, ইওর ফ্যামিলি অ্যান্ড ইওর ফ্রেন্ডস অল অব আর আওয়ার টার্গেটস। উই উইল কিল ইউ ইভেন ইন ইওর ড্রিম’। আরেকটি টুইটে বেশ কয়েকটি রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে এগুলো ওই রেস্তোরার ভিতরের হত্যাযজ্ঞের। একটি ছবিতে স্থানীয় একটি এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারও দেখা গেছে। রিটা কাটজ আরেকটি টুইটে লিখেছেন, আমাক জানিয়েছে বিদেশী সহ ২৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪০ জন। আরেকটি টুইটে রিটা কাটজ লিখেছেন, আল কায়েদা/শাবারের অন্য হামলার মতো একই ধরনের এ হামলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *