বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, এক অসাধারণ সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সিলেটের ফারুক আহমেদ মাস বিশেক আগে স্বগোত্রীয়দের হাতে নিহত হয়েছে। এ নিয়ে সারা শহরে তোলপাড়। এতদিন লোকের মুখে মুখে ছিল, জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি পদপ্রার্থী হওয়ায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আলোচনা ছিল, কিন্তু সাধারণ মানুষ অতটা নিশ্চিত ছিল না। হত্যার সাথে জড়িত কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ায় তাদের জবানবন্দী থেকে এখন ব্যাপারটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের ভাতিজাদের নিয়ে ইদানীং পত্র-পত্রিকায় অনেক কিছু ছাপা হয়েছে। আমি কোনো কিছুই লিখিনি বলে কেউ কেউ অভিযোগ অনুযোগ করেছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এইসব ভাতিজা ছিল খুবই ছোট। এখন সে তুলনায় আশাতীত বড়। পত্র-পত্রিকার লেখালেখি খণ্ডন করে ঘাটাইলের এমপি রানা এক বিবৃতি দিয়েছে। সে বলবার চেষ্টা করেছে, এরা নিবেদিত একটি রাজনৈতিক পরিবার। কথাটা মোটেই সত্য নয়। ভাতিজাদের বংশ রাজনৈতিক পরিবার নয়। তার চাচা শামসুর রহমান খান শাজাহান আগাগোড়া রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। ভাতিজাদের বাবা আগাগোড়াই পাকিস্তানের গোলামি করেছেন, ব্যাংকে চাকরি করেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও করেছেন। শামসুর রহমান খানের পরিবার শত কষ্ট করে সীমান্ত অতিক্রম করেছিল। তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে বাঁচবার কথাই ছিল না। ডাক্তার নিয়ে আমার বাবা দিন রাত এক করে তাকে বাঁচিয়েছিলেন। এ জন্য জনাব শামসুর রহমান খান শাজাহান শত দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাতের মধ্যেও বাবাকে ভীষণ সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। যদিও শামসুর রহমান খান এবং আতাউর রহমান খান দু’জনই কদ্দুস খানের মেয়ে বিয়ে করেছেন। কদ্দুস খান পাকিস্তান-ভারতের স্বাধীনতার সময় আসাম থেকে অনেক কিছু লুটেপুটে কালিহাতীর কোকডহরাতে বাসা বেঁধেছিলেন। শুনেছিলাম, বিশাল ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যে দিয়ে পালিয়ে আসার পথে হাজারও মানুষ তাকে ধরার জন্য দুই-তিন দিন পর্যন্ত ভাটি পথে চেষ্টা করেছিল। বিশাল নদী হওয়ায় এবং দুই পাড়ে জঙ্গল থাকায় প্রায় শত মাইল ভাটি এসেও ধরতে পারেনি। কালিহাতীর কোকডহরাতে বিশাল সম্পত্তি ছিল। কুদ্দুস খানের বড় ছেলে জোয়াহের খান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধান রাজাকার কমান্ডার। তোমার হত্যার পর ফারুক, রশিদ, ডালিমরা যখন ফ্রিডম পার্টি গঠন করেছিল, তখন টাঙ্গাইল জেলার সভাপতি ছিল জোয়াহের খান। ধরা পড়া আসামি আনিসুল ইসলাম রাজা জবানবন্দীতে যা বলেছে, আমি শুধু সেই উদ্ধৃতি তুলে দিয়েছিলাম। হজম হয়নি। শুনেছি ভাতিজারা অনেকেই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই তাদের নি¤œস্তরের চেলারা লাগামহীন। এরা পত্রিকায় লেখা দেখেই রাতে জাহাঙ্গীর স্মৃতি সেবাশ্রমে আগুন দেবার চেষ্টা করেছে। যদিও ইদানীং সরকার সরকারের মতো চলে না। তবু জাহাঙ্গীর স্মৃতি সেবাশ্রমের অগ্নিকাণ্ডে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। এরা চেষ্টা করছে এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ১৯৭১-এর ৩ এপ্রিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইলে ঢুকে প্রথম তিনটি বাড়ি ধ্বংস করেছিল। বদিউজ্জামান খান এবং আসাদুজ্জামান খানের বাড়ি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল। আমাদের ঝাড়-জঙ্গলে ঘেরা প্রায় তিন বিঘার বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে বোমা মেরে তছনছ করে দিয়েছিল। তাই জ্বালাও পোড়াও আমার কাছে বড় কথা না। আর সেবাশ্রমে ২০-৫০ বছরের ভাঙাচুরা গাড়ি-ঘোড়া যা আছে, তা দুষ্কৃতকারীরা পুড়ে সাফ করলে বরং জঞ্জাল পরিষ্কার হয়। তাই পুরান গাড়ি পুড়ায় কোনো চিন্তা করি না। চিন্তা করি ওখানে পাঁচ-ছয় শ’ ছোট্ট ছোট্ট ফুলের পাপড়ির মতো সুন্দর সুন্দর বাচ্চারা পড়ে। যাতে ওদের মনে কোনো প্রভাব না পড়েÑ সেটাই বড় চিন্তা। জানি সময়ের কাজ অসময়ে হয় না। এ তো তুমিই শিখিয়েছ। সারা জীবন কত ঘাট অঘাট হতে দেখলাম, অঘাট আবার ঘাট হলো, কত নদীনালা শুকিয়ে গেলÑ তাই এ নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন হই না।
দুই আড়াই বছর হবে, প্রতি শনিবার তোমাকে উদ্দেশ করে নয়া দিগন্তে লিখি। শুক্রবারে লেখা দিতে হয়। ১০টা বাজার আগেই পত্রিকা অফিস থেকে তাড়া আসে। খুব একটা স্বস্তিবোধ করি না। তাই অনেক বলে কয়ে শনিবারের লেখা রবিবারে করেছি; যাতে বেলা ৩-৪টায় দিতে পারি। আসলেই শুক্রবারে বড় অসুবিধা। একে তো ছুটির দিন, আমার ছোট মা কুশিমণি দেরি করে ওঠে, ডাকতে গেলে বকাঝকা করে। স্কুলের দিন ৭টাতে উঠতে কোনো গড়িমসি করে না; কিন্তু ছুটির দিনে ১২টাতেও তাকে তোলা যায় না। আর কুশিকে কোলে নিতে না পারলে আমার প্রাণ ফিরে না, কাজে গতি আসে না, জুমার জন্য তৈরি হতে হয়। তাই অনেক ভেবেচিন্তে বলে কয়ে শনিবারের লেখা রবিবারে করেছি। অনেকে মনে করতে পারেন, গ্রহ নত্রের শনি আমার জন্য শুভ নয়। কিন্তু আমি সারা জীবন দেখেছি, শনিবার আমার জন্য খুবই শুভ বার। তাই তুমি আল্লাহর কাছে দোয়া করো, রবিবারও যেন শুভ হয়।
দেশে কত সমস্যা, কত উত্থাল পাতাল। তার মধ্যে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আরো সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে। গণবাহিনীর লোকের হাতে পড়ে সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে এক মহাযুদ্ধের অবস্থা হয়েছে। কে হারে কে জিতে বোঝার উপায় নেই। তবে এই সময় ওসবের দরকার ছিল না। মোটামুটি সবই বেশ ভালোই চলছিল। এই তো মাত্র কয়েক বছর এত প্রিন্ট মিডিয়া, এত ইলেকট্রনিক মিডিয়া তারপরও এরা খুব একটা খারাপ কিছু করেছে? এদের দিয়ে দেশের স্বার্থ রা ছাড়া খুব একটা ুণœ হয়েছে? এমন কিছু চোখে পড়েনি। তাহলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাÑ এমন একটা নীতিমালা কেন? জনসমর্থনহীন সরকার এসব করতে গিয়ে প্রতি পদে পদে তিগ্রস্ত হচ্ছে। উচ্চপর্যায়ে কারো প্রতি কারো সম্মান নেই, শ্রদ্ধাবোধ নেই। আবুল বারাকাত মাত্র ক’দিন আগে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ হারিয়েছেন। পদ হারিয়ে গোখরা সাপের চাইতেও মারাত্মক ফণা তুলেছেন। তিনি বলেছেন, তাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাই তিনি অর্থমন্ত্রীর তদারকি মানবেন কেন? অর্থমন্ত্রী আবুল মালকে ব্যর্থ বলেছেন, অন্য দিকে আবুল মালও তাকে জালিয়াত বলেছেন। বড় মানুষ এতটা অসম্মানী হলে আমরা ছোটরা চলব কী করে? অন্য দিকে তাড়াহুড়া করে সংসদে বিচারপতিদের অভিশংসন বিল আসছে। বিচারপতিদের অভিশংসনের মতা সংসদের কাছে থাকা উচিতÑ এতে আমাদের কারো কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এমন ভারসাম্যহীন অদ সংসদের কাছে থাকায় আমাদের আপত্তি আছে। তা ছাড়া অভিশংসনের আগে উপযুক্ত বিচারপতি নিয়োগে ত্র“টিহীন পদ্ধতি উদ্ভাবনের প্রয়োজন ছিল। সে দিকে তেমন কারো কোনো নজর নেই। বরং যাকে তাকে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে বিচারব্যবস্থাকে কেমন যেন কানা করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অতি সম্প্রতি এ কে খন্দকারের একটি আজব বই প্রকাশিত হয়েছে। আজব বললাম এই জন্য যে, এর আগে কখনো এত অন্তঃসারশূন্য কোনো লেখা পড়িনি। সংসদে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। যদিও সংসদে এখন যুক্তিতর্কের চাইতে চাপার জোর বেশি। তোমার প্রিয় শিষ্য তোফায়েল আহমেদের কাছে জনগণ ’৬৯-এর মতো সাহসী ভূমিকা আশা করে; কিন্তু কেন যেন তেমন না পেয়ে লোকজন হতাশ হয়। তোমাকে নিয়ে মাঝে মধ্যে কিছু স্মৃতিচারণ করেন; কিন্তু সব সময় নিজেকে সামনে রাখতে চান বলে সাধারণ মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ পড়ে চু স্থির হয়ে গেছে। বইটা যে ফরমায়েশি তা তো সময় নির্বাচনেই বোঝা যায়। কিন্তু এমন তথ্যহীন সত্যের অপলাপ ভাবাই যায় না। বাঙালির সবচাইতে গর্বের ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬২-এর শিা কমিশন বাতিল আন্দোলন, ’৬৮, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। সারা পৃথিবীকে চিৎকার করে জানান দেবার ঘটনা। তুমি তো ভালো করেই জানো, তোমার হত্যার নায়ক ছিলেন খন্দকার মোশতাক। এখন দেখছি মুক্তিযুদ্ধ হত্যার মহানায়ক হতে চলেছেন এ কে খন্দকার। দু’জনই খন্দকার। একজনের আগে, আরেকজনের পরে। তাই মনে হয় চেতনাও এক। ভদ্রলোকের জন্ম ১৯৩০ সালে। ’৫১ সালে বিমানবাহিনীতে ভর্তি হয়েছেন, বাংলাদেশে এসেছেন ’৬৯ সালে। একটানা ২০ বছর পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশ বা পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দিয়ে অত ঝড় তুফান বয়ে যাওয়ার কিছুই নাকি তিনি জানতেন না। যেমন এক-এগারোর নায়ক মইন ইউ আহমেদও নাকি ’৭১-এর হত্যার কিছু জানত না। এমন কিছুই না জানা মানুষ তোমার আমার বিরুদ্ধে দুই কলম লিখে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পাঠের অযোগ্য তথ্যহীন নিন্দায় ভরা দু’-তিন শ’ টাকার বই হাজার-দু’ হাজার টাকায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাও পাওয়া যায় না। সেই জন্য মনে করছি, দুই-এক পর্ব না লিখে ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’-এর কিছুটা খোলাসা করা উচিত। তুমি শুনলে কবর থেকে উঠে আসবে, তোমার ৭ই মার্চের ভাষণ সারা পৃথিবী স্বীকৃতি দিয়েছে, আমাদের ট্যাংক ছিল না, কামান, বিমান ছিল নাÑ তোমার হুকুম অবলম্বন করে আমরা পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছি তাও ভদ্রলোক স্বীকার করতে চাচ্ছে না। বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তুমি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করলে না কেন? করলে আমরা ঐ দিনই স্বাধীন হয়ে যেতাম। এখন তুমিই বলো, ভদ্রলোক ছিলেন কুর্মিটোলা ক্যাম্পে, আমরা তোমার ২৫-৩০ লাখ সন্তান ছিলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ওপরে বোমা নিয়ে হেলিকপ্টার উড়ছিল, ণে ণে জেট চক্কর দিচ্ছিল। আর শত্র“কবলিত জায়গায় ল-কোটি জনগণের সমাবেশে কেউ কোনো দিন স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে? একটু আঁকিয়ে বাঁকিয়ে কৌশলেই তো এগুলো করতে হয়Ñ যা তুমি দতার সাথে করেছিলে। তুমি পরিকল্পনা করে কোনো ব্যবস্থা করোনি অথচ ভদ্রলোকেরা যত দিন ভারতে আশ্রয়ের কথা নিশ্চিত না হয়েছেন, তত দিন সেনাছাউনি ছাড়েননি। তোমার ৭ মার্চের ঘোষণার প্রতি পদে পদে ভুল ধরেছেন, আমাদের অসহযোগ আন্দোলনকেও তিনি ডাইল করে দিয়েছেন। গ্রামে বলে ‘টুয়েন্টি থ্রি কিল্ড’। তুমি পিতা, তোমাকে এসব কি বলি? এই উপমহাদেশে দু’টি অসহযোগ আন্দোলন হয়েছে, একটি তোমার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের, আরেকটি ১৯২২ সালে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের। সারা পৃথিবী স্বীকৃতি দিয়েছে কংগ্রেসের সেই অসহযোগের চাইতে তোমার অসহযোগের কার্যকারিতা ছিল যুগান্তকারী। উত্তর প্রদেশের গোরখপুরের চৌরিচৌরার পুলিশ ফাঁড়িতে এক আগুন দেবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছিল। মহাত্মা গান্ধী সবার অমতে সে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন এবং হিংসার পথ পরিহারের জন্য অনসন করেছিলেন। কোথায় ১৯২২ আর কোথায় ১৯৭১? অর্ধশত বছর পর তোমার অসহযোগের ঠেলায় যখন পাকিস্তান থরথর করে কাঁপছিল, তখন একজন পাকিস্তানি বলেছেন, তোমার অসহযোগ নাকি ব্যর্থ ছিল। অসহযোগীরা লুটতরাজ করেছে। কী ডাহা মিথ্যা! যে ভদ্রলোক একদিন ক্যান্টনমেন্টের বাইরে যায়নি, তিনি পাকিস্তানের শিখিয়ে দেয়া বুলি কেমন অবলীলায় বলে চলেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার ৫২ দিন পর পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদে ভারতে গিয়ে বিমানবাহিনী গঠন সম্পর্কে লম্বা ফিরিস্তি দিয়েছেন। সে সম্পর্কে অত কিছু তোমাকে বলছি না। ছাপার কোনো লোক পেলে ১৫-২০ দিনের মধ্যে পাতায় পাতায় লাইনে লাইনে ব্যাখ্যা করে একটা বই লিখতে চাই, তাই শুধু একটা ঘটনা বলিÑ ৩ ডিসেম্বর হেলিকপ্টার দিয়ে তার বাহিনী নারায়ণগঞ্জে তেলের ডিপোতে আক্রমণ করেছে বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আগরতলা থেকে ভাঙা হেলিকপ্টার নিয়ে ঢাকা আসার কোনো পথ ছিল না। তবু তিনি এসেছেন বলে বলেছেন। এত দিন শুনেছি, গাঁজার নৌকা পাহাড় দিয়ে যায়। এ কে খন্দকারের হেলিকপ্টার যুদ্ধবিধ্বস্ত শত্রুকবলিত বাংলাদেশে রাতের অন্ধকারে পানির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তারের নিচ দিয়ে যায়। তিনি তার বইয়ে ১৮৪ পৃষ্ঠায় যেভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘শীতল্যায় পৌঁছেই দণিমুখী টার্ন নিয়ে নদীর ওপর দিয়ে চলার কথা। হেলিকপ্টার টার্ন করা মাত্র সার্জেন্ট শহীদুল্লাহ বীর প্রতীক প্রায় লাফিয়ে উঠলেন। খোলা দরজা দিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখেন যে তারা পানির সামান্য ওপর দিয়ে আর অন্ধকারে না দেখা বিদ্যুতের তারের নিচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে তারা আবার রা পেলেন।’ তুমিই বলো পিতা, এরচাইতে গাঁজাখুরি আর কী হয়? বিদ্যুতের তারের নিচ দিয়ে হেলিকপ্টার চালানো যায়? তাই ভদ্রলোককে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছি, আগামী দু’-এক মাসের মধ্যে যেকোনো জায়গায় বিদ্যুতের তারের নিচ দিয়ে রাতে নয় দিনেই একবার একটা হেলিকপ্টার চালিয়ে দেখাবেন। তার বয়স হয়েছে, তিনি পারবেন না, তার দলের যে পারে তাকে দিয়ে চালালেই হবে।