ঈদ উৎসবসহ যে কোনো ছুটিতে ব্যাংকের শাখা বন্ধ থাকায় এটিএম বুথে টাকা তোলার চাপ বাড়ে। এবার ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটি থাকায় বুথ থেকে টাকা তোলার হার আরও বাড়বে। প্রতিবছরই দেখা যায়, ঈদের সময় এটিএম লেনদেনে নানা সমস্যা হয়। বিশেষ করে বুথে টাকা না থাকা, স্ক্রিনে ‘আউট অব সার্ভিস’ লেখা, কার্ড আটকে যাওয়াসহ নানা ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহক। প্রতিবছরই ঈদের আগে বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দিলেও সব বুথে তা থাকে না। তবে এবার ব্যাংকগুলো বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে। বরাবরের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সোমবার এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছ
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই গ্রাহক যেন হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য সার্বক্ষণিক হেল্পলাইন সাপোর্ট দিতে হবে। সব ধরনের ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সতর্কতা অবলম্বনের জন্য গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আর যে কোনো পরিমাণের এটিএম ও পস লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহককে তাৎক্ষণিক এসএমএস অ্যালার্ট দিতে বলা হয়েছে। কোনো কারণে পস বন্ধ থাকলে আগেই তা গ্রাহককে জানানোর পাশাপাশি অনলাইন ই-পেমেন্ট গেটওয়েতে কার্ডভিত্তিক লেনদেনের ক্ষেত্রে দুই স্তরবিশিষ্ট যাচাই ব্যবস্থা চালু রাখতে বলা হয়েছে। কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অন্য এক নির্দেশনায় টানা ৯ দিনের ছুটিতে দৈনন্দিন ও স্বাভাবিক লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদে টাকা উত্তোলনের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহের ব্যবস্থাসহ বুথগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ব্যাংকগুলোর সাত হাজার ৯৫৪টি এটিএম বুথ রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বুথের সংখ্যা সাত হাজার ৬২৫টি। এসব বুথের বেশিরভাগই ডাচ্-বাংলা ও ব্র্যাক ব্যাংকের। বাকি ৩২৯টি বুথ সরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের। সারাদেশের ৮৮ লাখ ডেবিট ও প্রায় সাত লাখ ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক এসব এটিএম বুথ থেকে লেনদেন করেন। এটিএম বুথ ব্যবহার করে গত ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা তুলেছেন গ্রাহক। সাধারণভাবে একটি বুথে একবারে ৪০ লাখ টাকা রাখে ব্যাংক। টাকা ফুরিয়ে গেলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তা আবার ঢোকানো হয়। তবে ছুটিকালীন বুথের নিরাপত্তাজনিত কারণে টাকা ফুরিয়ে গেলেও অনেক সময় ঢোকানো হয় না। যদিও ঈদসহ যে কোনো ছুটিতে এটিএম থেকে টাকা তোলার চাহিদা কয়েকগুণ বাড়ে।
দেশের সর্ববৃহৎ এটিএম বুথ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাসেম মো. শিরিন সমকালকে বলেন, ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার চাপ বাড়ায় অনেক ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। তবে এবার যেন কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঈদের আগে আগামী ২ ও ৩ জুলাই শুধু গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় ব্যাংক খোলা রাখতে নির্দেশনা দিলেও ডাচ্-বাংলা সব শাখা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু এটিএম বুথে টাকা রাখার সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধের মধ্যে কোনো বুথে টাকা না থাকলে পার্শ্ববর্তী শাখা যেন ঢোকানোর ব্যবস্থা করে, সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ফলে এবার ঈদে তাদের বুথে কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি আশা করেন।
দেশের দ্বিতীয় এটিএম বুথ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের হেড অব কমিউনিকেশন জারা জাবীন মাহবুব সমকালকে বলেন, ঈদে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। কোনো বুথে টাকা ফুরিয়ে গেলে তাৎক্ষণিক টাকা ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক পাহারা নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা সমকালকে বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রাহকরা নগদ টাকা পেতে যেন কোনো সমস্যায় না পড়েন সেজন্য এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি শাখা ও এটিএম বুথের নিরাপত্তা জোরদার করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভা হয়। সেখানেও ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথের নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয় বলে তিনি জানান।