চিত্রনায়িকা রোজিনা অনেকদিন ধরেই লন্ডনে থাকেন। তবে শেকড়ের টানে মাঝে মধ্যেই তিনি দেশে আসেন। ২০০৫ সালে সর্বশেষ মতিন রহমানের পরিচালনায় ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ‘রাক্ষুসী’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন ফেরদৌস। তারপর আর কোনো ছবিতে তাকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। দীর্ঘদিন পর গত ৯ই জুন দেশে এসেছেন তিনি। এসেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ঈদ অনুষ্ঠানের কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এসব প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। রোজিনা বলেন, এবার একটু বেশি সময়ের জন্য দেশে থাকার ইচ্ছে রয়েছে। জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। যার মধ্যে সুখ-দু:খ, হাসি-কান্না সবই ছিল। যে কথাগুলো আজও বলা হয়নি। সেসব স্মৃতির কথা এবার ছোটপর্দার বিভিন্ন ঈদ অনুষ্ঠানে বলেছি। এবার বেশ কিছু ইফতার অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছিলাম। সবার সঙ্গে দেখা হয়ে কাজ করে বেশ ভালো লাগছে। আশা করছি, ঈদে দর্শকরা ছোটপর্দায় সেগুলো উপভোগ করবেন।
এরমধ্যে প্রথমবারের মতো রোজিনাকে কোনো টিভি অনুষ্ঠানে আড্ডা দিতে দেখা যাবে চলচ্চিত্র জগতের অন্য দুই নক্ষত্র সোহেল রানা ও ফারুকের সঙ্গে। আসছে ঈদ উপলক্ষে বৈশাখী টেলিভিশনে একটি অনূষ্ঠানে দেখা যাবে তাদের। অনুষ্ঠানের নাম ‘তারা তিনজন’। চলচ্চিত্রের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা ওমর সানীর উপস্থাপনায় চলচ্চিত্রের নানাদিকসহ এ তিন তারকার ব্যক্তিগত অনেক কথা এ অনুষ্ঠানে জানতে পারবেন দর্শকরা। এছাড়া রোজিনা বিটিভির ‘তারকাকথন’ নামে একটি ঈদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন এবার। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন নিমা রহমান। এছাড়া এসএটিভি ও মাইটিভির ঈদ অনুষ্ঠানেও থাকছেন তিনি। রোজিনা তার ক্যারিয়ারে ৩১৩ টির মত ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৮০ সালে ‘কসাই’ ছবির জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন এ অভিনেত্রী। ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে ‘জীবন ধারা’ ছবির জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়া শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনি বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেন।
১৯৮৬ সালে ‘হাম সে হায় জামানা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পাকিস্তান থেকে নিগার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। এ ছবিতে রোজিনার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় নায়ক নাদিম। এসব বিষয়ে রোজিনা বলেন, কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ ছোট-বড় ১৫ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছি। চলচ্চিত্রে অনেক কম পারিশ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। আর এখন তো অনেকেই রাতারাতি তারকা। ফ্ল্যাট, গাড়ি হতে তাদের সময় লাগে না। অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাণ কাজও করা হয়েছে আমার। শরৎচন্দ্র ও নজরুল ইসলামের লেখা কাহিনী ও গল্প নিয়ে ‘ষোড়শী’, ‘মেজদিদি’, ‘বনের পাপিয়া’ ইত্যাদি গঠনমূলক নাটক নির্মাণ করেছি। কবি কিংকর চৌধুরীর কাহিনী অবলম্বনে ‘বদনাম’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটক ও চ্যানেল আইয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক ‘আলোর পথের যাত্রী’ নির্মাণ করেছি।
কাজগুলোর প্রচুর প্রশংসাও পেয়েছি। রোজিনার পারিবারিক নাম রেনু। বড়পর্দায় তাকে সবাই রোজিনা নামেই চেনেন। ১৯৭৭ সালে মহসীন পরিচালিত ‘আয়না’ ছবিতে ছোট একটি চরিত্রে শায়লা নাম নিয়ে প্রথম দর্শকের সামনে আসেন তিনি। এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘রাজমহল’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে তার অভিষেক হয়। পরে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রোজিনা। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সে সময়ের জনপ্রিয় নায়ক ওয়াসিম। ছবিটি ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায়। ছবিটি সুপার ডুপার হিট ব্যবসা করায় রোজিনাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। পুরো আশি ও নব্বই দশকে তিনি ছিলেন ঢালিউডের চাহিদা সম্পন্ন নায়িকা। এবারের ঢাকায় আসা ও কাজের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে এ তারকা মানবজমিনকে বলেন, আমি চলচ্চিত্রের মানুষ। চলচ্চিত্রের বাইরে কিছু ভাবতে পারি না। কুরবানী ঈদ পর্যন্ত দেশে আছি। চলচ্চিত্রসহ নানা বিষয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। যাই করিনা কেনো, দর্শকরা পছন্দ করবেন এমন কিছু কাজ করে যেতে চাই এবার।